মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দুই বিমা কোম্পানির শেয়ার দর লাগামহীন ভাবে বাড়ছে। গত কয়েক কার্যদিবসে কোম্পানি দুটির শেয়ার দর বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এই দুই কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করে এই বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। কোম্পানিগুলো হলো- ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স এবং এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স। একারনে কোম্পানি দুটির শেয়ার ধারন করা বিনিয়োগকারীদের মাঝে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। যা এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সুখবর নয় বলে জানিয়েছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা। অপরদিক শেয়ার দর কেন বাড়ছে, তার প্রকৃত কারন জানে না কোম্পানিগুলোর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স এবং এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বৃদ্ধির বিযয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজরে পড়েছে । দর বৃদ্ধি বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
গত ৬ কার্যদিবসে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ। মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারমূল্যে বেড়েছে ৬৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অপরদিকে গত ১৫ কার্যদিবসে এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ২৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারমূল্যে বেড়েছে ৬৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
শেয়ার দর বৃদ্ধির প্রসঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের এক কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধি কারন জানিনা। এই মুহুর্ত্বে এর চেয়ে কোম্পানির শেয়ার বৃদ্ধির ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। অপরদিকে এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করি না। শেয়ার দর বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা কিছুই বলতে পারবো না। তবে যারা শেয়ার কিনছেন তারাই বলতে পারবেন, কেন তারা অতি দরে শেয়ার কিনছেন।
অনুসন্ধানে, গত বৃহস্পতিবার ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর দাঁড়ায় ৬৩ টাকা। গত ৩০ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৪৮ টাকা। গত ৬ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৫ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার ১৪৪টি। সেই হিসাবে গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে হয়েছে ২৭১ কোটি ৫৯ লাখ ৩৯ হাজার ৭২ টাকা। গত ৩০ আগস্ট মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে ছিল ২০৬ কোটি ৯২ লাখ ৮৬ হাজার ৯১২ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে বেড়েছে ৬৪ কোটি ৬৬ লাখ ৫২ হাজার ১৬০ টাকা।
অপরদিকে, গত বৃহস্পতিবার এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর দাঁড়ায় ৬৮ টাকা। গত ১৬ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৫৩ টাকা। গত ১৫ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ১৫ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার। সেই হিসাবে গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে হয়েছে ২৮৮ কোটি ৪ লাখ ১২ হাজার টাকা। গত ১৬ আগস্ট মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে ছিল ২২৪ কোটি ৫০ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের বাজারমূল্যে বেড়েছে ৬৩ কোটি ৫৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। লাগামহীন কোম্পানি দুটির শেয়ার দর বৃদ্ধির কারন জানান জন্য রেগুলেটরদের (বিএসইসি) দৃষ্টি আকর্ষন করেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলেন, কারা এই কোম্পানি দুটিতে বিনিয়োগ করছে, সেই বিষয়ে বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জের বিশেষ দৃষ্টি রাখা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। নতুবা এই কোম্পানির শেয়ার নিয়ে নিরীহ বিনিয়োগকারীরা বিপদে পড়বে।
এদিকে, শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ করেছেন বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরে ইস্টার্ন এবং এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে একটি চক্র কারসাজি করে শেয়ার দর বৃদ্ধি করেছে। ফলে কয়েকদিনের মধ্যে কোম্পানিগুলোর শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১৫ টাকা। এধরনের বৃদ্ধি ইচ্ছাকৃত ভাবে বাড়ানো হয়েছে। সামনে আরও বাড়বে এনিয়েও মতিঝিল এলাকার সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে সয়লাব চলছে। অবশ্য কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ জানতে কোম্পানিগুলোকে গত বৃহস্পতিবার ডিএসই নোটিস পাঠিয়েছিল। এর জবাবে কোম্পানি দুটি জানিয়েছে, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে।
এদিকে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স এবং এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, বিষয়টি দেখছে কমিশন। আরও বলেন, শেয়ারগুলোর দর বাড়ানো ক্ষেত্রে অনিয়ম পাওয়া গেলে, কোম্পানির বা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য চলতি বছরের (২০২৩) ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির লাভ কমেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৫৯ পয়সা। আগের বছর (২০২২) একই সময়ে (এপ্রিল-জুন) শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৮২ পয়সা। গত ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৫৩ টাকা ২৪ পয়সা। আলোচ্য সময় কোম্পানিটির ক্যাশ ফ্লো ছিল ২৬ পয়সা। ২০২৩ বছরের দুই প্রান্তিকে (জানুয়ারি-জুন) হিসেবে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৩০ পয়সা। আগের বছর (২০২২) একই সময়ে (জানুয়ারি-জুন) শেয়ার প্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৯৮ পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন একশ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ৪৩ কোটি ১১ লাখ টাকা।
চলতি বছরের (২০২৩) এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে ৮৯ পয়সা। আগের বছর (২০২২) একই সময়ে (এপ্রিল-জুন) শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল ৯৩ পয়সা। গত ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকা ৭ পয়সা। আলোচ্য সময় কোম্পানিটির ক্যাশ ফ্লো ছিল ১ টাকা ৩২ পয়সা। ২০২৩ বছরের দুই প্রান্তিকে (জানুয়ারি-জুন) হিসেবে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৪ পয়সা। আগের বছর (২০২২) একই সময়ে (জানুয়ারি-জুন) শেয়ার প্রতি আয় ছিল ২ টাকা ২ পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন একশ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ৪২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
বিজনেস আওয়ার/১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এমএজেড