বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: রাজধানীর শাহবাগ থানায় নিয়ে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে পেটানোর ঘটনা ইতোমধ্যে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ডিএমপির রমনা জোনের সদ্য বিদায়ী অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যাকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা তিনি হলেন ৩৩ ব্যাচের বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তা ডিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ক্রাইম-১) সানজিদা আফরিন নিপা। এ ব্যাপারে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সামনে মুখ খুললেন এই নারী পুলিশ কর্মকর্তা।
ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সানজিদা বলেন, আমি বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। ২০১৯ সাল থেকে রেগুলার মেডিসিন খাচ্ছি। গত ৪-৫ মাস থেকে রোগ বেড়ে যায়। সেদিন অফিস থেকে যাওয়ার পথে ডাক্তার দেখানোর সিদ্ধান্ত নিই। আমি যে ডাক্তার দেখাই উনি রমনা জোনের এডিসি স্যারের (হারুন অর রশীদ) পরিচিত। তাই স্যারকে (হারুন) একটি সিরিয়াল নেওয়ার জন্য বলি।
সানজিদা বলেন, স্যার ওসির মাধ্যমে একটা সিরিয়াল ব্যবস্থা করে দেন। পরে বারডেম হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি ডাক্তার একটি কনফারেন্সে রয়েছেন। পরে আমি বিষয়টি এডিসি স্যারকে বলি। এ সময় স্যার হাসপাতালের কাছাকাছি ছিলেন। তাই ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে স্যার হাসপাতালে আসেন এবং একজন ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করে দেন। এরপর আমি ডাক্তার দেখাই।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ডাক্তার দেখালে কয়েকটি পরীক্ষা দেয়। পরে আমি ইসিজি করাতে যাই। এ সময় আমার রুম থেকে শব্দ শুনতে পাই। বেরিয়ে দেখি আমার স্বামী (রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুন) কয়েকজন যুবক নিয়ে স্যারকে মারধর করছেন। মারতে মারতে স্যারকে একটি রুমের ভেতর নিয়ে যায়। একটা পর্যায়ে স্যার তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য রুমের কর্নারে চলে যান।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এক পর্যায়ে আমার স্বামী ওই ছেলেগুলোকে বলছিলেন- ‘ওরা দুইজনের ভিডিও কর।’ তখন আমি ইসিজির পোশাকে ছিলাম। গায়ে তার লাগানো ছিল। স্বাভাবিকভাবে পোশাক শালীন অবস্থায় ছিল না। তখন আমি আমার স্বামীর সাথে কথা বলছিলাম। এই রুমে তো এতগুলো ছেলে আসার কথা না। আপনি প্রবেশ করেছেন ভালো কথা, তারা কেন এলো। আবার আপনি বলছেন- ভিডিও করার জন্য। তখন উনি আমাকেও দুই তিনটা চড় মারেন।
সানজিদা বলেন, একটা পর্যায়ে আমার গাড়ির ড্রাইভার আসেন। এ সময় গাড়ির ড্রাইভারের উপরও হাত তোলার চেষ্টা করেন। তবে একটা ছেলে ভিডিও করছিল। সেই ছেলের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। আমি কোনো অবস্থায় চাচ্ছিলাম না যে ওরা এই পরিস্থিতে ভিডিও করুক। তখন স্যার আমার পেছনে দাঁড়ানো ছিলেন। আমার স্বামী ছোট্ট একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে এরকম পরিবেশ তৈরি করেছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এক পর্যায়ে থানা পুলিশকে খবর দেন স্যার (হারুন)। থানা পুলিশ ও হাসপাতালে সিকিউরিটি কর্মীদের সহযোগিতায় আমরা রক্ষা পাই।
প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন ও বিভিন্ন অনৈতিক কার্মকাণ্ডের অভিযোগে দুই দফা বদলির পর অবশেষে রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিজনেস আওয়ার/১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এএইচএ