বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের দুই ভাই সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ও মুরাদ সিদ্দিকীর মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে।
ইতোমধ্যে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িবহরে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। এ সময় দুই ভাইয়ের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এছাড়াও একটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল-সিলিমপুর সড়কের দশকিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে জেলাজুড়ে আলোচনা সমালোচনা চলছে।
দুই ভাইয়ের অনুসারীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে গাড়িবহর নিয়ে আতিয়া মাজার জিয়ারত করতে যাচ্ছিলেন দুই ভাই। লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িবহরটি ঘটনাস্থলে পৌঁছলে মুরাদ সিদ্দিকী তাদের বাধা দেন। এছাড়া লতিফ সিদ্দিকীর সমর্থকদের মারধর করেন মুরাদ সিদ্দিকী। ঘটনাস্থলে লতিফ সিদ্দিকী পৌঁছলে মুরাদ সিদ্দিকী চলে যাওয়ার সময় তাদের দুই ভাইয়ের সমর্থকদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
একপর্যায়ে মুরাদ সিদ্দিকীর বহরে থাকা পাঁচটি গাড়ির মধ্যে একটি মাইক্রোবাসের সামনের গ্লাস ভাঙা হয়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৫ জন আহত হন। পরে মুরাদ সিদ্দিকী অনুসারীদের নিয়ে তার টাঙ্গাইল শহরের বাসায় চলে যান। লতিফ সিদ্দিকী আতিয়া মাজার জিয়ারত করে কালিহাতীর এলেঙ্গাতে চলে যান।
অভিযোগটি অস্বীকার করে মুরাদ সিদ্দিকী বলেন, আমি, কাদের ভাই ও লতিফ ভাই মাজার জিয়ারত শেষে বাসায় চলে এসেছি। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘোষণা দিয়েছেন অক্টোবর মাসে এই নেতাকর্মীদের উৎখাত করবে। আমার বিবেক থেকে এটা প্রতিহত করতে হবে। আমি তো সন্ত্রাস কোনোকালেই করি নাই। এটা প্রতিহত করতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। সেজন্য এসেছি কালিহাতীর জোকারচর ও গোহাইলবাড়ী এলাকায়। কোনো সভা সমিতি না করে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে এসেছি। নেতাকর্মীদের বলছি, নিজেদের মধ্যে ঐক্য রাখো এবং এই অপশক্তি ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে মোকাবেলা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবেন ১৪ দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ন্যাড়া তো বেলতলায় একবারই যায়। ২০১৮ সালে নির্বাচনে এসে আমি তা বুঝেছি। তখন আমার ৮০ ভাগ ভোট ছিল। আমি খুনোখুনির মধ্যে থাকি না বলে চলে গেছি। আমি কোনো নির্বাচনের জন্য আসি নাই।
মুরাদ সিদ্দিকীর বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে আমার ৪-৫ জন ছেলেকে সে মারধর করছে সে বিষয়ে নালিশ করছে। মুরাদ সিদ্দিকী বিভিন্নজনকে মোবাইলে হুমকি দিচ্ছে, সেটি আমি জানি। এলেঙ্গার মেয়রকে সে ভয় দেখাচ্ছে। আমি তাকে কখনো রাজনীতিক নেতা মনে করি নাই। সে কনট্রাকটর ও সন্ত্রাসী। এর বাইরে আমি কোনো চিন্তা করি নাই। রাজনীতি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল আজাদ সিদ্দিকী। আমার জানা মতে তিনি কোনো দিন আওয়ামী লীগও করে নাই, ছাত্রলীগও করে নাই। তাই ওকে নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নাই।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর মন্ত্রিত্ব ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর পদ হারান আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। তারপর থেকে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তিনি। সম্প্রতি আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে লতিফ সিদ্দিকী জনসংযোগ করছেন। এদিকে গত দেড় বছর যাবত মুরাদ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল সদর ও কালিহাতী আসনে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিদ্দিকী পরিবারের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।
বিজনেস আওয়ার/১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এএইচএ