ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অলিম্পিক ক্রীড়াবিদদের হিজাব পরতে নিষেধ ফ্রান্সের, জাতিসংঘের সমালোচনা

  • পোস্ট হয়েছে : ০৬:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • 90

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আসন্ন প্যারিস অলিম্পিক গেমসে ফরাসি দলের নারী অ্যাথলেটদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করেছে ফ্রান্স। দেশটির এমন সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলেছে, নারীদের পোশাক নিয়ে জোরাজুরি করা ঠিক নয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র মার্তা হুর্তাদো জেনেভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নারীরা কী পরবে কী পরবে না, তা নিয়ে কারও জোরাজুরি করা উচিত নয়।

এর আগে, ফ্রান্সের ক্রীড়ামন্ত্রী অ্যামেলি ওদিয়া-কাস্তেরা ঘোষণা দেন, অলিম্পিক গেমসে তাদের নারী অ্যাথলেটরা হিজাব পরতে পারবেন না। দেশটির কঠোর ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

গত রোববার হিজাব নিষিদ্ধের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, ক্রীড়া অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের ধর্মীয় প্রতীক বহনের বিরোধিতা করে ফরাসি সরকার।

হিজাবের বিরুদ্ধে ফ্রান্স সরকারের এই অবস্থান নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার মুখপাত্র বলেছেন, নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণের আন্তর্জাতিক কনভেনশন যেকোনো ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণকে প্রত্যাখ্যান করে।

তিনি বলেন, কনভেনশনের যেকোনো রাষ্ট্রপক্ষ- এক্ষেত্রে ফ্রান্সের বাধ্যবাধকতা রয়েছে… উভয় লিঙ্গের নিকৃষ্টতা বা শ্রেষ্ঠত্বের ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি সামাজিক বা সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলোকে সংশোধন করার।

হুর্তাদো বলেন, একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণে ক্ষতিকর পরিণতি হতে পারে। সে কারণে ধর্ম বা বিশ্বাস পালনে বিধিনিষেধ কেবল নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতেই গ্রহণযোগ্য।

এখানে নির্দিষ্ট করে জননিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনস্বাস্থ্য বা নৈতিকতার জন্য গুরুতর হুমকি, এমন পরিস্থিতিকে বুঝিয়েছেন জাতিসংঘ মুখপাত্র।

ফ্রান্সে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক বহু পুরোনো। ১৯ শতকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্যাথলিক প্রভাবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় ফরাসিরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেকোনো ধরনের ধর্মীয় প্রতীক বহন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। ফরাসি স্কুলগুলোতে খ্রিস্টানদের ক্রস, ইহুদিদের কিপ্পা বা মুসলিমদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ।

ফ্রান্সে বর্তমানে ৫০ লাখের বেশি মুসলিম বসবাস করেন। এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু দেশটির পর্দা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাগুলো মুসলিমদের কাছে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০০৪ সালে স্কুলগুলোতে হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে ফ্রান্স। ২০১০ সালে উন্মুক্ত স্থানে মুখ ঢেকে চলাচল নিষিদ্ধ করে দেশটি। গত জুনে নারী ফুটবলারদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করেছে ফ্রান্সের কাউন্সিল অব স্টেট। গত মাসে স্কুলগুলোতে বোরকাও নিষিদ্ধ করেছে তারা।

এসব সিদ্ধান্তে মুসলিম সম্প্রদায় ক্ষুব্ধ হলেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় ফরাসি কর্তৃপক্ষ।

সূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা

বিজনেস আওয়ার/২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

অলিম্পিক ক্রীড়াবিদদের হিজাব পরতে নিষেধ ফ্রান্সের, জাতিসংঘের সমালোচনা

পোস্ট হয়েছে : ০৬:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আসন্ন প্যারিস অলিম্পিক গেমসে ফরাসি দলের নারী অ্যাথলেটদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করেছে ফ্রান্স। দেশটির এমন সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলেছে, নারীদের পোশাক নিয়ে জোরাজুরি করা ঠিক নয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র মার্তা হুর্তাদো জেনেভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নারীরা কী পরবে কী পরবে না, তা নিয়ে কারও জোরাজুরি করা উচিত নয়।

এর আগে, ফ্রান্সের ক্রীড়ামন্ত্রী অ্যামেলি ওদিয়া-কাস্তেরা ঘোষণা দেন, অলিম্পিক গেমসে তাদের নারী অ্যাথলেটরা হিজাব পরতে পারবেন না। দেশটির কঠোর ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

গত রোববার হিজাব নিষিদ্ধের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, ক্রীড়া অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের ধর্মীয় প্রতীক বহনের বিরোধিতা করে ফরাসি সরকার।

হিজাবের বিরুদ্ধে ফ্রান্স সরকারের এই অবস্থান নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার মুখপাত্র বলেছেন, নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণের আন্তর্জাতিক কনভেনশন যেকোনো ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণকে প্রত্যাখ্যান করে।

তিনি বলেন, কনভেনশনের যেকোনো রাষ্ট্রপক্ষ- এক্ষেত্রে ফ্রান্সের বাধ্যবাধকতা রয়েছে… উভয় লিঙ্গের নিকৃষ্টতা বা শ্রেষ্ঠত্বের ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি সামাজিক বা সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলোকে সংশোধন করার।

হুর্তাদো বলেন, একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণে ক্ষতিকর পরিণতি হতে পারে। সে কারণে ধর্ম বা বিশ্বাস পালনে বিধিনিষেধ কেবল নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতেই গ্রহণযোগ্য।

এখানে নির্দিষ্ট করে জননিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনস্বাস্থ্য বা নৈতিকতার জন্য গুরুতর হুমকি, এমন পরিস্থিতিকে বুঝিয়েছেন জাতিসংঘ মুখপাত্র।

ফ্রান্সে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক বহু পুরোনো। ১৯ শতকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্যাথলিক প্রভাবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় ফরাসিরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেকোনো ধরনের ধর্মীয় প্রতীক বহন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। ফরাসি স্কুলগুলোতে খ্রিস্টানদের ক্রস, ইহুদিদের কিপ্পা বা মুসলিমদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ।

ফ্রান্সে বর্তমানে ৫০ লাখের বেশি মুসলিম বসবাস করেন। এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু দেশটির পর্দা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাগুলো মুসলিমদের কাছে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০০৪ সালে স্কুলগুলোতে হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে ফ্রান্স। ২০১০ সালে উন্মুক্ত স্থানে মুখ ঢেকে চলাচল নিষিদ্ধ করে দেশটি। গত জুনে নারী ফুটবলারদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করেছে ফ্রান্সের কাউন্সিল অব স্টেট। গত মাসে স্কুলগুলোতে বোরকাও নিষিদ্ধ করেছে তারা।

এসব সিদ্ধান্তে মুসলিম সম্প্রদায় ক্ষুব্ধ হলেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় ফরাসি কর্তৃপক্ষ।

সূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা

বিজনেস আওয়ার/২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: