বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ২০০৬ সালে কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার আনোয়ার হোসাইনকে (৫০) নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-১০ এর একটি দল।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানিয়েছে, মামলা দায়েরের পর থেকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন। ২০০৭ সালে কৌশলে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পালিয়ে যান। পরে ২০১৯ সালে গোপনে দেশে ফিরে পরিচয় গোপন করে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বসবাস শুরু করেন। গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় অবশেষে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রোহিতপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনকে কেরানীগঞ্জের সৈয়দপুর ঘাটে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদি হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে ২০০৮ সালের ৩১ মে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও নেতৃত্ব দেওয়া সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। পরে ২০০৯ সালের ২৫ আগস্ট পলাতক আসামি কামাল উদ্দিনসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও তিনজনকে খালাস দেন আদালত।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি মেম্বার ছিলেন। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে আড়তের ব্যবসা করতেন। বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ, ভূমি দস্যুতাসহ বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তার জনপ্রিয়তা ছিল।
রোহিতপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয় জানান তিনি।
তিনি বলেন, কামাল উদ্দীন ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে এলাকায় একটি সন্ত্রাসী দল গঠন করে অবৈধ বালুর ব্যবসা, জোরপূর্বক ভূমি দখল ও ত্রাণের মালামাল আত্মসাৎ করতেন। আনোয়ার বিভিন্ন সময়ে তার বিভিন্ন অবৈধ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে প্রতিবাদ করতেন। এ কারণে আনোয়ার স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
কামালের অবৈধ বালুর ব্যবসা ও ভূমি দস্যুতা নিয়ে সেসময় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পেছনে ভুক্তভোগী আনোয়ারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ধারণা করেন কামাল। আনোয়ারের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ও এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য কামালের পরিকল্পনায় আনোয়ারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে কামাল দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে ২০০৭ সালে কৌশলে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে চলে যান। পরে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে নিজের পরিচয় গোপন রেখে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বসবাস শুরু করেন। গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় অবশেষে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বিজনেস আওয়ার/এএইচএ