বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে একটি ‘প্রাণবন্ত’ পুঁজিবাজার হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করতে চান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। রোববার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বলেন, বাংলাদেশে তিনি সেই পুঁজিবাজার দেখতে চান, যা বিনিয়োগকারীদের মুনাফা দেবে এবং নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোকে সহজে অর্থ যোগাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে চার বছরের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিএসইসি ও বিআইসিএম শাখা থেকে এই নিয়োগের আদেশ জারির পর রোববারই তিনি অফিস শুরু করেছেন।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতের আগে তিন দফায় দীর্ঘ নয় বছর পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে বড় ধসের পর বিএসইসির দায়িত্ব নেওয়া খায়রুল হোসেনের সময় বড় ধরনের কিছু সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। কিন্তু আইপিও খরা আর বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঙ্কট কাটেনি।
তার উত্তরসূটি হিসেবে শিবলী রুবাইয়াত যখন দায়িত্ব নিলেন, করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে পুঁজিবাজারে লেনদেনই তখন বন্ধ; দেশের অর্থ-বাণিজ্য নিয়েও চারদিকে শুধু শঙ্কার কথা।
বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে সবার আগে কোন কাজে হাত দিতে চান বিএসইসি চেয়ারম্যান? এর উত্তরে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, “আগের কমিশন পুঁজিবাজারের আইন কানুনগুলো ঠিক করে গেছে, আমার কাজ হবে একটি ভাইব্রেন্ট পুঁজিবাজার উপহার দেওয়া।”
দীর্ঘমেয়াদী মন্দার মধ্যে থাকা পুঁজিবাজারে কীভাবে প্রাণ সঞ্চারের কথা কীভাবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি শেয়ারের পাশাপাশি অন্য প্রোডাক্ট পুঁজিবাজারে আনব, বিশেষ করে বন্ড। দেশের বন্ড বাজারকে এমনভাবে তৈরি করা হবে যেন বিনিয়োগকারীরা এখান থেকে ভালো মুনাফা করতে পারের। আবার যারা টাকা পুঁজি সংগ্রহ করবেন, তারা যেন স্বল্প সময়ে বন্ডের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের চৌকশ এই শিক্ষক এমন একটি পরিবেশ তিনি তৈরি করতে চান, যেখানে কোম্পানিগুলো স্বল্পমেয়াদী ঋণের জন্য ব্যাংকে যাবে, আর দীর্ঘমেয়াদী অর্থের যোগান পুঁজিবাজার থেকে বন্ডের মাধ্যমে পাবে।
তিনি বলেন, “যাদের কাগজ ঠিক থাকবে তারা যেন খুব দ্রুত বন্ডের মাধ্যমে টাকা নিতে পারে সে বিষয়টি আমি নিশ্চত করব।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং ও বীমা বিষয়ে শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি দেশে-বিদেশে ফিন্যান্স, ব্যাংকিং এবং বীমা ক্ষেত্র সম্পর্কিত অনেক ব্যবসায়, চেম্বার এবং গবেষণায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
টারশিয়ারি পর্যায়ের জন্যে ‘ই-কমার্স ও ই-ব্যাংকিং’ এবং মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্যে জাতীয় বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত ‘ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং’ বইয়ের লেখক তিনি।
এসব বিষয়ে অধ্যাপক শিবলীর ১৬টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং পাঁচটি আন্তর্জাতিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ রয়েছে।
আইন ও ব্যবহারিক ব্যাংকিং, রিটেইল ও ই-ব্যাংকিং, বৈদেশিক বিনিময় ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং, করপোরেট সুশাসন, ব্যবসায় ও মৌলিক বীমা সংক্রান্ত আইনি বিষয়েও কাজ রয়েছে এই অধ্যাপকের।