বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ডিএনসিসির বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে। বর্জ্য সম্পদে রূপান্তরিত হবে এবং পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ে উঠবে।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে আমিনবাজারে চলমান বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট প্রকল্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
আতিকুল ইসলাম বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পটির কাজ পাওয়া চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনকে আমরা ৩০ একর ভূমি প্রস্তুত করে হস্তান্তর করেছি। জানুয়ারি থেকে পুরোদমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। কোম্পানি জানিয়েছে, ভূমি বুঝে পাওয়ার পর প্রকল্প সম্পন্ন করতে তাদের দুই বছর সময় লাগবে। ২০২৬ সালের মধ্যে প্রকল্পটি থেকে শুরু হবে বিদুৎ উৎপাদন। প্রতি ঘণ্টায় উৎপাদন হবে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এজন্য চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনকে প্রতিদিন তিন হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য সরবরাহ করবে ডিএনসিসি। উৎপাদিত বিদুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। কিনে নেবে বিদুৎ বিভাগ।
ঢাকা উত্তরের মেয়র আরও বলেন, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব, পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ে তোলা হবে হবে। এর ফলে বায়ুদূষণ রোধ হবে। বর্জ্য সম্পদে পরিণত হবে। স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন ছিল। জমি অধিগ্রহণ করা অনেক চ্যালেঞ্জিং এবং সময়সাপেক্ষ একটি কাজ ছিল। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৮, ২০১১ ও ২০১৩ সালে বারবার চেষ্টা করা হয়েছে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের। কিন্তু আমরা আলোর মুখ দেখতে পারিনি। চীনা সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের সমন্বয়ে উত্তর সিটি কর্পোরেশন এই প্রকল্পে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। জায়গাটি ৩০ ফুট নিচু ছিল। এখানের ৩০ একর জমিকে ল্যান্ডফিল করতে ৩০ ফুট নিচু জায়গাকে ভরাট করতে হয়েছে। অনেক কাজ করতে হয়েছে, তাই কিছুটা সময় লেগেছে।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ইতোমধ্যে সিএমইসির প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন। তাদের কিছু যন্ত্রপাতি প্ল্যান্টে চলে এসেছে। আরও যন্ত্রপাতি দ্রুতই পৌঁছাবে। চীনা রাষ্ট্রদূত ও সিএমইসির কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, জানুয়ারির শুরু থেকে পুরোদমে প্ল্যান্টের কার্যক্রম শুরু হবে। মোট চারটি টারবাইন স্থাপনের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ৪২.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। তাদের সাথে কথা হয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত একটি টারবাইন চালু করার বিষয়ে।
একনেকে একটি প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার কথা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, দেশে এত যে বিল্ডিং ভাঙা হচ্ছে, সেই সব বিল্ডিংয়ের বর্জ্যগুলোকে আমরা কাজে লাগাতে পারি না। আমরা বিল্ডিংয়ের ভাঙ্গারিগুলো দিয়ে পাইপ বানাব। আমরা বিভিন্ন ধরনের কনস্ট্রাকশন ব্লক বানাব বিল্ডিংয়ের ভাঙ্গারি দিয়ে। মেডিকেল ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো প্ল্যান্ট আমাদের নেই। মেডিকেল ওয়েস্ট ও বিভিন্ন ধরনের ই-ওয়েস্ট আমরা সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজে লাগাব।
ডিএনসিসি মেয়র আরও বলেন, এবারের অলিম্পিকে গোল্ডের যে মেডেলগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো তৈরি করা হয়েছে ই-ওয়েস্ট থেকে। মেডেলগুলো তৈরি করা হয়েছে মোবাইলের ভেতরের বিভিন্ন পার্টস থেকে। আমরা কেন পারব না? আমাদের দেশে অনেক মোবাইল ব্যবহার হচ্ছে। আজকে আমাদের মোবাইল, ফ্রিজ ও টেলিভিশন ফেলার জায়গা নাই। এগুলোকে আমরা ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে কাজ করব।
ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, স্মার্ট দেশ গঠনে বাংলাদেশের পাশে আছে চীন। চীন পুরো প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করছে। প্রথম পর্যায়ে ২৫ বছর প্রকল্পটির দ্বায়িত্ব থাকবে চীনের সিএমইসি। ডিএনসিসির এই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি মেগা প্রকল্প না হলেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। এর মাধ্যমে স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফুল ইসলাম, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী, চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের প্রকৌশলীবৃন্দ এবং ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিজনেস আওয়ার/এএইচএ