বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: পোষাক পরিধান সভ্য সমাজের ভূষণ। সভ্য মানুষ বলতেই শালীন পোষাক পরিধান করবে। ইসলাম এমন এক ধর্ম, যে ধর্ম একজন মুসলিমকে শালীন পোষাক পরিধান বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। ইসলাম ঘোষণা করেছে, পুরুষের সতর বা আবশ্যকীয়ভাবে ঢাকতে হবে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। আর নারীর জন্য হাতের কব্জি মুখমণ্ডল পায়ের পাতা ছাড়া সব সতর।
ইসলাম কতটা শালীন হলে এমন শালীনতার কথা বলতে পারে। ইসলামে পোষাক কেমন হবে এমন নীতিমালাও দিয়েছে। প্যান্ট যেনো হাঁটুর উপরে থাকে। আর নীচের দিক দিয়ে টাখনু গিরার নিচে না যায়। আবার স্কিন টাইট অর্থাৎ এত আঁটশাট হওয়া যে, সতরের আকৃতি কাপড়ের উপর ফুটে উঠে। হ্যাঁ, প্যান্ট-শার্ট যদি উপর্যুক্ত খারাবি থেকে মুক্ত হয় পরিধান করা নাজায়েজ হবে না। অবশ্য এরপরও তা পরিধান করা মাকরুহ। তা ব্যবহার না করাই বাঞ্ছনীয়। (দরসে তিরমিজি ৫/৩৩২; ইসলাহি খুতবাত ৫/২৭৮, ফাতাওয়া নিজামিয়া ১/৪২৩; কেফায়াতুল মুফতি ৯/১৬৮; আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৬৪
পোশাক সম্পর্কে ইসলামি নীতিমালা
জ্ঞানের অভাবে অনেকে সঠিক পোশাক অবলম্বন করতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে কিছু নীতি ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নারী-পুরুষ সকলের জন্য প্রযোজ্য। আবার কিছু স্বতন্ত্র বিষয়ও রয়েছে। প্রথমে সাধারণ কিছু নীতি উল্লেখ করছি।
সতর আবৃত করা
পোশাক এমন হতে হবে যা পুরোপুরি সতর আবৃত করে। পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর পুরো শরীর সতর। পোশাকের প্রধান উদ্দেশ্যই হল সতর ঢাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে। (সুরা আরাফ ২৬)
সুতরাং যে পোশাক এই উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ তা যেন শরিয়তের দৃষ্টিতে পোশাকই নয়। তা নাজায়েয পোশাক। এটা পরিত্যাগ করে পূর্ণরূপে সতর আবৃত করে এমন পোশাক গ্রহণ করা জরুরি। যেমন পুরুষের জন্য হাফ প্যান্ট পরা। মহিলাদের পেট-পিঠ উন্মুক্ত থাকে এমন পোশাক পরিধান করা।
অধিক পাতলা বা আঁটসাট না হওয়া
যে পোশাক পরিধানের পরও সতর দেখা যায় কিংবা সতরের আকৃতি পোশাকের উপরে ফুটে উঠে তা-ও সতর আবৃত না করার কারণে নাজায়েয পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের পোশাক পরিধান করা হারাম।
অমুসলিমদের অনুকরণ না হওয়া
বিধর্মীদের অনুকরণে পোশাক পরিধান করা নাজায়েয। যেমন ইহুদি-খৃষ্টান পুরোহিতদের পোশাক। হিন্দুদের ধুতি-লেংটি, মাজার পূজারিদের লালশালু এবং শিয়াদের অনুকরণে পূর্ণ কালো পোশাক ইত্যাদি। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই এটি কাফেরদের পোশাক। তোমরা তা পরিধান করো না।’ (মুসলিম ৬/১৪৪; মুসতাদরাকে হাকেম ৪/১৯০)
অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি তাদের পোশাক পরবে সে আমার দলভুক্ত নয়। (তবারানি আওসাত ৩৯২১; ফাতহুল বারি ১০/২৮৪)
অহংকার-বড়ত্ব-রিয়া সৃষ্টিকারী পোশাক না হওয়া
এমন পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ, যেগুলোকে শরিয়ত অহংকারীদের নিদর্শন সাব্যস্ত করেছে এবং তা পরিধান করতে নিষেধ করেছে। যেমন পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় ব্যবহার করা। হযরত আবু মুসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-আমার উম্মতের পুরুষের জন্য রেশম এবং স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে। আর মহিলাদের জন্য এগুলো হালাল করা হয়েছে। (জামে তিরমিজি ১/৩০২ হাদিস ২৭৯) তদ্রূপ টাখনু গিরার নিচে কাপড় পরিধান করা।
হযরত আবু জুরাই থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, টাখনু গিরার নিচে কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাক। কেননা এটা অহংকারবশত হয়ে থাকে। আর আল্লাহ তাআলা অহংকারীকে ভালোবাসেন না। (সুনানে আবু দাউদ ২/৫৬৪ হাদিস ২৭৫; মুসনাদে আহমদ ৫/৬৩ হাদিস ২৪১৯)
প্রসিদ্ধির পোশাক না হওয়া
মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধি পাওয়ার লক্ষ্যে পোশাক নির্বাচন করা, পোশাকের ভিন্নতা ও চাকচিক্য এজন্য বেছে নেওয়া যেন লোকসমাজে সে প্রসিদ্ধি পায়। এককথায় মানুষের নিকট আলোচিত ও প্রসিদ্ধ হওয়ার নিয়তে পোশাক গ্রহণ করা জায়েয নয়। হাদিস শরিফে এ ব্যাপারে কঠিন ধমকি এসেছে। রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির পোশাক পরবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। অতঃপর তাকে অগ্নিদগ্ধ করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ ৪০২৯; আততারগিব ৩/১১২)
পুরুষের পোশাকের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য
ক. নারীর পোশাক বা নারীর পোশাকের মতো পোশাক না হওয়া। হাদিস শরিফে এসেছে-রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন ঐ পুরুষকে যে মহিলার পোশাক পরে এবং ঐ মহিলাকে যে পুরুষের পোশাক পরে। (সুনানে আবু দাউদ ৪০৯৮; মুসনাদে আহমদ ২/৩২৫) সুতরাং পুরুষের জন্য মেয়েদের পোশাক পরিধান করা হারাম।
খ. রেশমের কাপড় পরিধান না করা। কেননা রেশমের কাপড় পুরুষের জন্য হারাম। গ. জাফরানি রঙের কাপড় না হওয়া। এটা পুরুষের জন্য নাজায়েজ। ঘ. কুসুম রং কিংবা গাঢ় লাল রং না হওয়া। কেননা কুসুম রং মাকরুহ তাহরীমী। আর লাল রং মাকরুহ।
নারীর পোশাকের কিছু বৈশিষ্ট্য
ক. পুরুষের পোশাক বা পুরুষের সদৃশ পোশাক না হওয়া। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একজন ঐ মহিলা, যে পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। নারীর জন্য পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা হারাম। কিন্তু আজকাল এটি ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছে। মেয়েরাও প্যান্ট-শার্ট পরছে!
খ. পুরো শরীর ঢাকা পোশাক হওয়া। মহিলাদের পোশাক এমন হওয়া চাই যাতে গোটা দেহ আবৃত থাকে। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই এমন এমন স্টাইলের পোশাক বের হচ্ছে যাতে শরীরের বিভিন্ন অংশ খোলা থাকে। অর্থাৎ সতর আবৃত করার পরিবর্তে তা আরো প্রকাশিত করে তোলাই যেন পোশাকের উদ্দেশ্য।
যেমন শাড়ি, নারীর জন্য ওড়না ছাড়া দুই পোশাক প্যান্ট-শার্ট বা প্যান্ট-গেঞ্জি। এগুলো ফ্যাশনের নামে নোংরামি। এ ধরনের ফ্যাশনে গা ভাসিয়ে দেওয়া স্বকীয়তা ও আত্মমর্যাদা বোধ না থাকারই দলিল। অনেক বিধর্মীও এমন রয়েছে যারা শালীন পোশাক পরিধান করে। ফ্যাশনের নামে যে-সব কুরুচিপূর্ণ পোশাক তৈরি করা হয় তা তারা পরিহার করে চলে। অথচ আমাদের ধর্মে এত সুন্দর দিক-নির্দেশনা থাকার পরও ওইসব অশালীন ফ্যাশনের অনুগামী হয়ে যাওয়া কি দুঃখজনক নয়?
জাহান্নামীদের পোষাক
জাহান্নামীদের পোষাক হবে আলকাতরার অথবা গলিত পিতলের এবং আগুনের। মহান আল্লাহ বলেন, সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শিকল দ্বারা বাঁধা অবস্থায়। তাদের জামা হবে আলকাতরার (বা গলিত পিতলের) এবং অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমণ্ডল। (ইব্রাহীম ৪৯-৫০)
আল্লাহ বলেন,
فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّن نَّارٍ يُصَبُّ مِن فَوْقِ رُءُوسِهِمُ الْحَمِيمُ (19) يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ (20) وَلَهُم مَّقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ (21) كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ (22)
অর্থাৎ, সুতরাং যারা অবিশ্বাস করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আগুনের পোশাক; তাদের মাথার উপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি। যার ফলে তাদের উদরে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত করা হবে। আর তাদের জন্যে থাকবে লৌহনির্মিত হাতুড়িসমূহ। যখনই তারা যন্ত্রণাকাতর হয়ে জাহান্নাম হতে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে; আর (তাদেরকে বলা হবে,) আস্বাদ কর দহন-যন্ত্রণা। (হজ্জ ১৯-২২)
বিজনেস আওয়ার/এএইচএ