বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: চীনা বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এজন্য বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাতগুলো নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই)। আলোচনায় দেশের শেয়ারবাজারে চীনের বড় বিনিয়োগ আনতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিডার সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই চীনে একটি ইনভেস্টমেন্ট সামিট আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিসিসিসিআই’র সাধারণ সম্পাদক ও মৃধা বিজনেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল মামুন মৃধা।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে বিসিসিসিআইর কার্যালয়ে শেয়ারবাজার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) নবনির্বাচিত কমিটি সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়কালে তিনি এ তথ্য জানান।
এ সময় সিএমজেএফের সভাপতি এস এম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া, সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমান, সহ-সভাপতি বাবুল বর্মণ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন রেজওয়ান, কার্যনির্বাহী সদস্য হামিদ সরকার, এস এম নুরুজ্জামান তানিম, জুনায়েদ শিশির ও তৌহিদুল ইসলাম রানা উপস্থিত ছিলেন।
আল মামুন মৃধা বলেছেন, বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজার অনেক বেশি শক্তিশালী। সে তুলনায় আমাদের দেশের শেয়ারবাজার এখন পর্যন্ত সে পর্যায়ে পৌঁছাতে পানেনি। অন্যান্য দেশের শেয়ারবাজারের সঙ্গে সাধারণ মানুষ অনেক বেশি সম্পৃক্ত, যেটা আমাদের দেশে অনেক কম। দুইবার বড় ধসের কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আগ্রহ কমে গেছে। এর পরেও শেয়ারবাজার গতিশীল হয়ে উঠছিল। কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে করোনা মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমাদের শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা) বহাল রাখার কারণে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেক কমেছে। তবে, আমরা আশা করছি, নির্বাচন-পরবর্তী শেয়ারবাজার আরো গতিশীল হবে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে বিভিন্ন সেক্টরের কোম্পানি আছে। ওই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চায়নার ব্যবসা আছে। তাই, যেসব কোম্পানির সঙ্গে চায়নার ব্যবসা আছে, তাদেরকে আমরা এক ছাতার নিচে আনতে চাই। এতে চায়নার সঙ্গে কোম্পানিগুলোর সেক্টরভিত্তিক আলোচনা করা সহজ হবে। এ কাজে সহযোগিতা করতে সিএমজেএফ বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় আমরা জোরালো ভূমিকা রেখে আসছি। দেশের প্রয়োজনে যেকোনো উদ্যোগের সঙ্গে আমরা কাজ করব। সিএমজেএফের সঙ্গে বাংলাদেশ চায়না চেম্বার কাজ করতে আগ্রহী।
মৃধা বিজনেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চায়নার সঙ্গে সম্পৃক্ত কোম্পানির সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। তাই, আমরা দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ আরো বাড়াতে চাই। আমরা চাই বেশি বেশি কোম্পানি এখানে থাকুক। আগামীতে যেসব কোম্পানির সঙ্গে চীনের ব্যবসা বেশি, তাদেরকে বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজর বোর্ডে অ্যাসোসিয়েট মেম্বার হিসেবে রাখার চেষ্টা করব। সেখানে তাদের ভোট দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলেও তাদের সুবিধা-অসুবিধা তুলতে ধরতে পারবে। আমরা তাদের দাবিগুলো চীনের কাছে তুলে ধরতে সহায়তা করব। পাশাপাশি, কোম্পানিগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা প্রতিবন্ধকতার দেখা দিতে পারে। তা সমাধানে বিসিসিসিআই ইন্টারমিডিয়ারিজ ফোর্স হিসেবে কাজ করতে পারে।
বিসিসিসিআই’র সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের দেশে বিনিয়োগ না আসার মূল কারণ সমন্বয়হীনতা। এটা যতদিন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না হবে, ততদিন কোনো সেক্টরেই বিনিয়োগ আসবে না। বাংলাদেশে সাড়ে পাঁচশ’র বেশি চাইনিজ কোম্পানি কাজ করছে। তারা বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছে। বাংলাদেশে চাইনিজদের যত রকমের ইনভলভমেন্ট দেখছেন, তাদের অধিকাংশই বিসিসিসিআই’র খুব ঘনিষ্ঠ। এই সুযোগটা যদি বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা কাজে লাগাতে না পারেন, তাহলে এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। বাংলাদেশ যে বিনিয়োগের জন্য একটা উর্বর ক্ষেত্র, সেটা প্রমোট করার জন্য কোনো সেক্টর থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ এখনো সেই পর্যায়ে যায়নি যে, বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করার জন্য ছুটে আসবে। বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো বিনিয়োগ আকৃষ্টের জন্য প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে গ্রোইং ট্রেড রিলেশনশিপ রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সম্পর্ক দিনে দিনে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। আমরা আশা করছি, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়বে। চাইনিজ কাস্টমসের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর ২৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বাংলাদেশে এক্সপোর্ট হয়েছে। এ বছর সেটা আশা করছি, ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে চায়না বাংলাদেশ থেকে কিছু প্রোডাক্ট আমদানি করবে। এ বিষয়ে তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নির্বাচনের কারণে এ বিষয়টা থেমে ছিল। এখন সেটা দ্রুত কার্যকর হবে।
মতবিনিময়কালে সিএমজেএফের সভাপতি এস এম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া বলেন, কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের সেনজেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চুক্তি রয়েছে। ওই চুক্তির মাধ্যমে ডিএসইর ২৫ শতাংশ মালিকানা চীনা কনসোর্টিয়ামের হাতে। সে কারণে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টদের আশা ছিল চীনা কনসোর্টিয়ামের সম্পৃক্ততায় ডিএসই কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এগিয়ে যাবে এবং বদেশি বিনিয়েগ আসবে। কিন্তু, তা দেখা যায়নি। তাই, পুঁজিবাজারসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সিএমজেএফ ও বাংলাদেশ চায়না চেম্বার একসঙ্গে কাজ করবে। এ কাজে সিএমজেএফের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
সিএমজেএফের সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের একটা যোগসূত্র আছে। কারণ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ। সেজন্য চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের স্টক মার্কেট সরাসরি সম্পৃক্ত। তাই, চীনের সঙ্গে আমাদের দেশের সম্পৃক্ততা বাড়াতে বিসিসিসিআই ও সিএমজেএফ একসঙ্গে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম, ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারীর হাত ধরে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। কিন্তু, আমরা যেমন প্রত্যাশা করেছিলাম, সেটার প্রতিফলন ঘটেনি। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারীর একরকম অনুপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। কী কারণে এটা হয়েছে, তা দেখার সময় হয়েছে। বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে বিসিসিসিআই ও সিএমজেএফ একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
বিজনেস আওয়ার/এএইচএ