বিনোদন ডেস্ক: ‘তুমি বন্ধু আমার চির সুখে থেকো’, ‘আমি তো একদিন চলে যাব’, ‘তোমরা সবাই থাকো সুখে’সহ বেশ কিছু বিরহ ঘরানার গান আজও দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। জনপ্রিয় এসব গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন চিত্রনায়ক বাপ্পারাজ। এসব গানে কষ্টের মাঝেও এক ফালি হাসি দিয়ে হাজারো দর্শকের হৃদয় জয় করেছেন তিনি।
জনপ্রিয় এই নায়কের আজ জন্মদিন। তবে এ উপলক্ষে নেই কোনো আয়োজন। এ বিষয়ে বাপ্পারাজ বলেন, ‘বাবাদের সময় বিষয়টি বেশি দেখেছি। সবার একটা মিলনমেলা হতো। ওই সব অনুষ্ঠানে আমারও যাওয়া হয়েছে, খুব ভালো লাগত। ওই সংস্কৃতি আগেই শেষ হয়ে গেছে।’
বিশেষ দিনে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সমিতি নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ ঝাড়েন বাপ্পারাজ। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা সমিতির নির্বাচন, পিকনিক— এসব নিয়ে আছি। আমরা বাঙালিরা বিদেশে গেলে বিএনপি, আওয়ামী লীগ হয়ে যাই। আমরা তখন আর বাঙালি থাকি না। বিদেশের মাটিতে মারামারি করি। আমরা ফিল্মের লোকজন এখন আওয়ামী লীগ, বিএনপি হয়ে গেছি। এখন আর শিল্পী নই আমরা, সিনেমায়ও নেই। একসময় আমরা শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজকসহ কলাকুশলীরা বসতাম। আড্ডা হতো, সিনেমার কথা হতো। এখন সেটি আর নেই। এখন আমরা গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত। এ বলে ওর সঙ্গে বসব না, ও বলে এর সঙ্গে বসব না। ছিন্নবিচ্ছিন্ন এক অবস্থা সিনেমা জগতের।’
কিছু বেকার শিল্পী ব্যক্তিগত স্বার্থে শিল্পীদের মাঝে বিভক্তি তৈরি করছেন। তা জানিয়ে বাপ্পারাজ বলেন, ‘এমনিতেই আমাদের সিনেমা পিছিয়ে গেছে। এসবের প্রভাবে আরো খারাপ হবে। আর এসব যারা করছেন, তারা তো করার জন্যই এখানে আসছেন। তাদের কোনো কাজকর্ম নেই। শিল্পীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করে নিজেদের কাজে লাগাচ্ছেন। এখন যারা বেকার, কাজকর্ম নেই—এমন সব মানুষকে ব্যবহার করে এসব বিভক্তি করানো হচ্ছে।’
সম্প্রতি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পিকনিকে ভালো শিল্পী আসেনি উল্লেখ করে বাপ্পারাজ বলেন, ‘গত পিকনিকে কোনো তারকা, ভালো শিল্পীদের দেখেছেন? দেখেননি। কারণ, অনেকেই যাননি। যারা গেলেন, খেলাধুলা করলেন, আবার মারামারিও করলেন। বুঝেছেন, আমাদের সিনেমার মানুষের কী হাল! সিনেমার মান এখন ওই অবস্থায় চলে গেছে। যেমন নেতা–নেত্রী, তেমন কর্মীরাও। কারণ, আমাদের মতো যারা আছেন, তাদের নেতা-নেত্রী তো তারা হতে পারবেন না। কারণ, তাদের সেই যোগ্যতা নেই। আর আমরা এ ধরনের নেতা-নেত্রীকে মানবই বা কেন? যারা পিকনিকে গিয়ে মারামারি করতে পারেন, সেই মানের কর্মীদের নেতা–নেত্রী হওয়াই তাদের যোগ্যতা। আমি আমার মানের নিচের একজনকে তো নেতা হিসেবে মানব না, অনুসরণও করব না। আমাদের সমিতির অবস্থা এখন এমনই, বেকার মানুষেরা নেতা-নেত্রী সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পরিচালক সমিতিতে যান, ছবি নেই কিন্তু নেতা হয়ে বসে আছেন। শিল্পী সমিতিতে যান, প্রযোজক সমিতিতে যান— সবখানে একই চিত্র। কোনো কাজ নেই, সবাই নেতা।’
ব্যক্তি লাভের জন্য শিল্পীরা নেতা-নেত্রী হচ্ছেন বলে মনে করেন বাপ্পারাজ। তিনি বলেন, ‘একেবারেই ব্যক্তি লাভবান হচ্ছেন। সিনেমার জন্য কোনো কিছুই হচ্ছে না। সরকারি দাওয়াতপত্র পাচ্ছেন, সেখানে যাচ্ছেন, খাচ্ছেন। আবার নেতা-নেত্রী হয়ে নিজেদের কোনো ব্যবসা–বাণিজ্য থাকলে সেখানেও সুবিধা পেতে পারেন। ১৯ সংগঠনের নেতা যারা আছেন, তারা কারা? তারা হিন্দি সিনেমা আসার জন্য ছাড়পত্র দিচ্ছেন। ছাড়পত্র দেওয়ার তারা কে?’
বিজনেস আওয়ার/এএইচএ