ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এশিয়াটিকের শেয়ারে বিনিয়োগ করে ধরাশায়ী বিনিয়োগকারীরা

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪
  • 73

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এ কোম্পানিটিতে যেসকল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করে রেখেছেন তাদের বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে। নিলামে এ কোম্পানিটির কাট অব প্রাইস যা নির্ধারণ হয়েছিল তার ধারে কাছেও ওঠছে না কোম্পানিটির শেয়ার। গত কয়েকদিন টানা দাম বাড়লেও গতকালই আবার কমতে শুরু করেছে। পাশাপাশি প্রায় এক বছরের মত সময় ধরে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত থাকায় বিড করা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা আটকে ছিল। সব মিলিয়ে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজে বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘কোম্পানির আইপিও স্থগিত হওয়ার পর এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের অ্যাকাউন্টে আমানত আটকে যাওয়ার পরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হন। এরপর শেয়ারটির কাট অফে যে দর নির্ধারিত হয়, বাজারমূল্য তার থেকে এখনো অনেকদূরে রয়েছে। কয়েকদিন দর বাড়লেও এখন আবার কমছে। এতে করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দুই দিক দিয়েই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রথমত অনেকদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বড় অংকের একটা টাকা আটকে ছিল, আর অন্যদিকে কাট অব প্রাইসের ওপরে শেয়ারদর কবে ওঠবে তা নিয়ে সন্দিহান।’

তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের অক্টোবরে নিলামে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ারের কাট-অব প্রাইস নির্ধারণ হয় ৫০ টাকা। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এই ৫০ টাকার ৩০% ডিসকাউন্ট অর্থাৎ ৩৫ টাকা অথবা ২০ টাকা, যেটি কম সে মূল্যে শেয়ার পাবেন। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের প্রতিটি শেয়ার ২০ টাকা করে কিনতে পারবেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানিটির স্থায়ী সম্পদের মূল্য ও সম্পদের মালিকানা নিয়ে জটিলতা থাকার অভিযোগ ওঠায় কোম্পানিটির আইপিও আবেদন স্থগিত করে দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য অনুমোদন পাওয়ার পর এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের প্রাথমিক পাবলিক অফার (আইপিও) শেয়ারের জন্য বুক-বিল্ডিং পদ্ধতির মাধ্যমে বিড করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানিটির আইপিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্থগিত করে দিলে বিডিংয়ে অংশ নেওয়া ৯২ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ৪৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা কোম্পানিটির অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে থাকে প্রায় এক বছরের কিছুটা কম সময় ধরে।

পরবর্তীতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে গত বছরের ২৮ নভেম্বর প্রায় এক বছর পর বিএসইসির ৮৮৯তম কমিশন সভায় কোম্পানিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এপর চলতি বছরর ৪ ফেব্রুয়ারি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের আইপিওর আবেদন জমা নেওয়া শুরু হয়। এ আবেদন গ্রহণ চলে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরপর কোম্পানিটির লেনদেন শুরু হয় চলতি ৬ মার্চ।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, লেনদেন শুরুর দিন কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য ওঠে সর্বোচ্চ ২২ টাকা। এরপরের দিন ৭ মার্চ ২২ টাকা ২০ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ টাকা ২০ পয়সায়। পরে সর্বোচ্চ সীমা অনুযায়ী টানা বাড়তে থাকে কোম্পানিটির শেয়ারদর। পরে সোমবার এসে ৪২ টাকা ৬০ পয়সায় দাঁড়ায়। এরপর আবার শুরু হয় দর কমার হাওয়া। এর পরদিন মঙ্গলবার কোম্পানিটির শেয়ারদর ১ টাকা ৮০ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৪০ টাকা ৮০ পয়সায়। গতকাল লেনদেন শুরুর দিকে ৪৫ টাকা ৯০ পয়সায় প্রায় ১ কোটি টাকার কাছাকাছি শেয়ার বিক্রি হয়। এর কিছু সময় পরে দাম বাড়ার ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা যায়। ৪৬ টাকা ৬০ পয়সায় আবার প্রায় ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। এভাবে দিনশেষে ওঠানামার মধ্যে লেনদেন হয় কোম্পানিটির শেয়ার।

কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন যেদিন থেকে শুরু হয়, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত এতে বিনিয়োগ করা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের মুনাফা লুফে নেয়। যারা সর্বনিম্ন ২০ টাকা দরে শেয়ার কিনেছিলেন তারা মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে বড় অংকের মুনাফা লুফে নেন। বিপরীতে বড় লোকসানে পড়েন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। তারা ৫০ টাকা কাট অব প্রাইসে শেয়ার কিনে দীর্ঘদিন আটকে থেকে বর্তমানে লেনদেন করতে হচ্ছে কাট অব প্রাইসের অনেক নিচে।

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের মোট শেয়ারের উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৪০ দশমিক ৭১ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ আর বাকি ৪৩ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

কোম্পানিটি ২০২৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে শাহজালাল ইক‌্যুই‌টি ম‌্যা‌নেজম‌্যান্ট লিমিটেড।

বিজনেস আওয়ার/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

এশিয়াটিকের শেয়ারে বিনিয়োগ করে ধরাশায়ী বিনিয়োগকারীরা

পোস্ট হয়েছে : ১০:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এ কোম্পানিটিতে যেসকল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করে রেখেছেন তাদের বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে। নিলামে এ কোম্পানিটির কাট অব প্রাইস যা নির্ধারণ হয়েছিল তার ধারে কাছেও ওঠছে না কোম্পানিটির শেয়ার। গত কয়েকদিন টানা দাম বাড়লেও গতকালই আবার কমতে শুরু করেছে। পাশাপাশি প্রায় এক বছরের মত সময় ধরে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত থাকায় বিড করা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা আটকে ছিল। সব মিলিয়ে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজে বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘কোম্পানির আইপিও স্থগিত হওয়ার পর এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের অ্যাকাউন্টে আমানত আটকে যাওয়ার পরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হন। এরপর শেয়ারটির কাট অফে যে দর নির্ধারিত হয়, বাজারমূল্য তার থেকে এখনো অনেকদূরে রয়েছে। কয়েকদিন দর বাড়লেও এখন আবার কমছে। এতে করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দুই দিক দিয়েই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রথমত অনেকদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বড় অংকের একটা টাকা আটকে ছিল, আর অন্যদিকে কাট অব প্রাইসের ওপরে শেয়ারদর কবে ওঠবে তা নিয়ে সন্দিহান।’

তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের অক্টোবরে নিলামে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ারের কাট-অব প্রাইস নির্ধারণ হয় ৫০ টাকা। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এই ৫০ টাকার ৩০% ডিসকাউন্ট অর্থাৎ ৩৫ টাকা অথবা ২০ টাকা, যেটি কম সে মূল্যে শেয়ার পাবেন। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের প্রতিটি শেয়ার ২০ টাকা করে কিনতে পারবেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানিটির স্থায়ী সম্পদের মূল্য ও সম্পদের মালিকানা নিয়ে জটিলতা থাকার অভিযোগ ওঠায় কোম্পানিটির আইপিও আবেদন স্থগিত করে দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য অনুমোদন পাওয়ার পর এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের প্রাথমিক পাবলিক অফার (আইপিও) শেয়ারের জন্য বুক-বিল্ডিং পদ্ধতির মাধ্যমে বিড করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানিটির আইপিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্থগিত করে দিলে বিডিংয়ে অংশ নেওয়া ৯২ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ৪৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা কোম্পানিটির অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে থাকে প্রায় এক বছরের কিছুটা কম সময় ধরে।

পরবর্তীতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে গত বছরের ২৮ নভেম্বর প্রায় এক বছর পর বিএসইসির ৮৮৯তম কমিশন সভায় কোম্পানিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এপর চলতি বছরর ৪ ফেব্রুয়ারি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের আইপিওর আবেদন জমা নেওয়া শুরু হয়। এ আবেদন গ্রহণ চলে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরপর কোম্পানিটির লেনদেন শুরু হয় চলতি ৬ মার্চ।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, লেনদেন শুরুর দিন কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য ওঠে সর্বোচ্চ ২২ টাকা। এরপরের দিন ৭ মার্চ ২২ টাকা ২০ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ টাকা ২০ পয়সায়। পরে সর্বোচ্চ সীমা অনুযায়ী টানা বাড়তে থাকে কোম্পানিটির শেয়ারদর। পরে সোমবার এসে ৪২ টাকা ৬০ পয়সায় দাঁড়ায়। এরপর আবার শুরু হয় দর কমার হাওয়া। এর পরদিন মঙ্গলবার কোম্পানিটির শেয়ারদর ১ টাকা ৮০ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৪০ টাকা ৮০ পয়সায়। গতকাল লেনদেন শুরুর দিকে ৪৫ টাকা ৯০ পয়সায় প্রায় ১ কোটি টাকার কাছাকাছি শেয়ার বিক্রি হয়। এর কিছু সময় পরে দাম বাড়ার ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা যায়। ৪৬ টাকা ৬০ পয়সায় আবার প্রায় ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। এভাবে দিনশেষে ওঠানামার মধ্যে লেনদেন হয় কোম্পানিটির শেয়ার।

কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন যেদিন থেকে শুরু হয়, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত এতে বিনিয়োগ করা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের মুনাফা লুফে নেয়। যারা সর্বনিম্ন ২০ টাকা দরে শেয়ার কিনেছিলেন তারা মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে বড় অংকের মুনাফা লুফে নেন। বিপরীতে বড় লোকসানে পড়েন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। তারা ৫০ টাকা কাট অব প্রাইসে শেয়ার কিনে দীর্ঘদিন আটকে থেকে বর্তমানে লেনদেন করতে হচ্ছে কাট অব প্রাইসের অনেক নিচে।

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের মোট শেয়ারের উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৪০ দশমিক ৭১ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ আর বাকি ৪৩ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

কোম্পানিটি ২০২৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে শাহজালাল ইক‌্যুই‌টি ম‌্যা‌নেজম‌্যান্ট লিমিটেড।

বিজনেস আওয়ার/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: