ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাকাত ও ফিতরার মধ্যে যেসব পার্থক্য

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ মার্চ ২০২৪
  • 157

জাকাত: ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম জাকাত। জাকাত অর্থ পবিত্র হওয়া ও বৃদ্ধি পাওয়া। আল্লাহ প্রদত্ত নিয়মে ধনীর সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে প্রদান করাকে জাকাত বলে। জাকাত অবশিষ্ট সম্পদকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখে, দাতার আত্মাকে কৃপণতার পাপ থেকে পরিশুদ্ধ করে এবং সম্পদে ব্যাপক প্রাচুর্য আনে। আল্লাহতায়ালা মানুষের রিজিক ও জীবিকার ক্ষেত্রে সমতা তৈরি করেননি। বরং কাউকে করেছেন সম্পদশালী। কাউকে করেছেন দরিদ্র। আর ধনীর সম্পদে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দরিদ্রের অধিকার। এর মাঝে রয়েছে মহান আল্লাহর বিশেষ হেকমত। আল্লাহতায়ালা দেখতে চান, ধনীরা তাদের সম্পদের কিয়দংশ দ্বারা দরিদ্রের অধিকার আদায় করে কিনা। জাকাত আর্থিক ইবাদত। এটি ইবাদত হিসেবে নামাজ রোজার মতোই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। পবিত্র কোরআনের ৮২ স্থানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাকাতের কথা বলা হয়েছে।

যাদের ওপর জাকাত ফরজ
প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নারী-পুরুষের জীবনযাপন ব্যয় বাদ দেয়ার পর সম্পূর্ণ এক বছর পর্যন্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫ শতাংশ নির্দিষ্ট খাতে প্রদান করতে হবে।

জাকাতের নেসাব
নেসাব পরিমাণ সম্পদ হচ্ছে ৭.৫ তোলা (৮৭.৪৫ গ্রামের বেশি) স্বর্ণ বা সমপরিমাণ অর্থ অথবা ৫২.৫ তোলা (৬১২.৩৫ গ্রামের বেশি) রুপা বা সমপরিমাণ অর্থ। গবাদি পশু হলে ৪০টি ছাগল, ৩০টি গরু, ৫টি উট।

জাকাত ইসলামী অর্থব্যবস্থার সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ভিত্তি। জাকাতের মাধ্যমে ইসলাম সমাজকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চায়। এই লক্ষেই দ্বিতীয় হিজরিতে মদিনায় জাকাত ফরজ করা হয়। এর দ্বারা ইসলামের উদ্দেশ্য হলো, সমাজের কোনো স্থানে যেন ধন-সম্পদ পুঞ্জীভূত না হয়ে ওঠে। যারা প্রয়োজনাতিরিক্ত যথেষ্ট পরিমাণ ধন-সম্পদের অধিকারী হয়েছে তারা যেন তা জমা করে না রাখে, ব্যয় করা বন্ধ না করে। বরং তা যেন এমনভাবে ব্যয় করে যার ফলে সমাজের আবর্তিত সম্পদ থেকে বঞ্চিতরা জীবিকা অর্জন করতে পারে।

জাকাত অনুগ্রহ নয়। বরং ধনীর ধনে গরিবের অধিকার। ধনীরা এ অধিকার গরিবকে ন্যায্যগন্ডায় প্রদান করতে বাধ্য। মহান আল্লাহ জাকাতকে সেভাবেই বিধিত করেছেন। এ অধিকার রক্ষার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব ধনীদের দিতে হবে। অধিকার রক্ষায় শঠতা, কপটতা ও ধূর্তামি করলে পেতে হবে ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

ফিতরা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে না থাকলেও এর গুরুত্ব অনেক। যা রোজাকে ত্রুটিমুক্ত করে। এটি বিধিবদ্ধ হয়েছে হাদিস দ্বারা। বিধানগত দিক থেকে ওয়াজিব। আদায় করতে হয় ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে। তবে ঈদের কিছুদিন পূর্বে আদায় করাও বিধিসম্মত। কিন্তু ঈদের নামাজের পর আদায় করলে সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে। হবে নফল সদকা।

বিভিন্ন হাদিস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাসূল সা: দুটি উদ্দেশ্যে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। একটি উদ্দেশ্য হলো, অনেক সময় মানুষ রোজা রেখে কথা ও কাজে ভুল করে ফেলে। ভুল না করার দৃঢ় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মানুষ হিসেবে ভুল হয়ে যায়। এতে রোজা ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়। আর রমজানের শেষে কিছু দান সদকা করলে সেই ত্রুটিবিচ্যুতি দূর হওয়ার আশা করা যায়। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো, সদকাতুল ফিতর প্রদান করে অভাবী গরিব-দুখিদেরকে ঈদের আনন্দে অংশীদার করা।

হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বর্ণনা করেন, রাসূল সা: সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন অশ্লীল কথা ও অর্থহীন কাজ থেকে রমজানের রোজাকে পবিত্র করার জন্য এবং গরিব-মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য। (আবু দাউদ : ১৬০৯)

সদকাতুল ফিতরের নেসাব
সদকাতুল ফিতরের নেসাব জাকাতের নেসাবের সমপরিমাণ। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। এমনকি রমজানের শেষ দিনেও যে নবজাতক দুনিয়ায় এসেছে তার পক্ষ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। (ফাতহুল কাদির ২/২৮১, হিন্দিয়া ১/১৯২)

যারা নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী নয় তাদের ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব নয়। কিন্তু এরপরও যদি তারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতে চায় তাহলে আদায় করতে পারবে। এতে তারা সওয়াবের অধিকারীও হবে। (দারুল ইফতা, জামিয়া ইউসুফ বানুরি টাউন, ফতোয়া নং ১৪৪১০৯২০২১৯৯)

জাকাত ও ফিতরার খাত
জাকাত ও সদকাতুল ফিতর প্রদানের খাত একই। অর্থাৎ নির্ধারিত আটটি খাত, যা করোআনে বর্ণিত হয়েছে। যাদেরকে জাকাত দেয়া যাবে তাদেরকে সদকাতুল ফিতরও দেয়া যাবে। কোরআনে বর্ণিত নির্ধারিত খাত ব্যতীত অন্যকোনো কাল্যাণমূলক কাজে সদকাতুল ফিতর প্রদান করলে শরিয়তের দৃষ্টিতে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয় সদকা হচ্ছে ফকির ও মিসকিনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য, (তা বণ্টন করা যায়) দাস আজাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা তাওবা, আয়াত : ৬০)

জনপ্রতি ফিতরার পরিমাণ
ইবনে ওমর হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা: নিজ উম্মতদের, ক্রীতদাস ও স্বাধীন, নারী ও পুরুষ, ছোট ও বড় সবার মাথা পিছু এক ছা পরিমাণ খেজুর বা জব ফিতরা হিসাবে ওয়াজিব করেছেন।

জাকাত ও ফিতরার মূল পার্থক্য
জাকাত ও ফিতরার মূল পার্থক্য হলো, জাকাতের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির মালিকানায় নেসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলে তাকে সম্পদের ২.৫ শতাংশ হারে জাকাত প্রদান করতে হয়, কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে সম্পদ পূর্ণ এক বছর স্থায়ী হওয়ার প্রয়োজন হয় না। বরং ঈদুল ফিতরের দিন সকালে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হয়। জাকাতের পরিমাণ হচ্ছে সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫ শতাংশ। আর ফিতরা প্রদান করতে হয় জনপ্রতি এক ছা গম, যার পরিমাণ ২ কেজি ৪০ গ্রাম।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

জাকাত ও ফিতরার মধ্যে যেসব পার্থক্য

পোস্ট হয়েছে : ১০:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ মার্চ ২০২৪

জাকাত: ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম জাকাত। জাকাত অর্থ পবিত্র হওয়া ও বৃদ্ধি পাওয়া। আল্লাহ প্রদত্ত নিয়মে ধনীর সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে প্রদান করাকে জাকাত বলে। জাকাত অবশিষ্ট সম্পদকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখে, দাতার আত্মাকে কৃপণতার পাপ থেকে পরিশুদ্ধ করে এবং সম্পদে ব্যাপক প্রাচুর্য আনে। আল্লাহতায়ালা মানুষের রিজিক ও জীবিকার ক্ষেত্রে সমতা তৈরি করেননি। বরং কাউকে করেছেন সম্পদশালী। কাউকে করেছেন দরিদ্র। আর ধনীর সম্পদে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দরিদ্রের অধিকার। এর মাঝে রয়েছে মহান আল্লাহর বিশেষ হেকমত। আল্লাহতায়ালা দেখতে চান, ধনীরা তাদের সম্পদের কিয়দংশ দ্বারা দরিদ্রের অধিকার আদায় করে কিনা। জাকাত আর্থিক ইবাদত। এটি ইবাদত হিসেবে নামাজ রোজার মতোই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। পবিত্র কোরআনের ৮২ স্থানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাকাতের কথা বলা হয়েছে।

যাদের ওপর জাকাত ফরজ
প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নারী-পুরুষের জীবনযাপন ব্যয় বাদ দেয়ার পর সম্পূর্ণ এক বছর পর্যন্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫ শতাংশ নির্দিষ্ট খাতে প্রদান করতে হবে।

জাকাতের নেসাব
নেসাব পরিমাণ সম্পদ হচ্ছে ৭.৫ তোলা (৮৭.৪৫ গ্রামের বেশি) স্বর্ণ বা সমপরিমাণ অর্থ অথবা ৫২.৫ তোলা (৬১২.৩৫ গ্রামের বেশি) রুপা বা সমপরিমাণ অর্থ। গবাদি পশু হলে ৪০টি ছাগল, ৩০টি গরু, ৫টি উট।

জাকাত ইসলামী অর্থব্যবস্থার সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ভিত্তি। জাকাতের মাধ্যমে ইসলাম সমাজকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চায়। এই লক্ষেই দ্বিতীয় হিজরিতে মদিনায় জাকাত ফরজ করা হয়। এর দ্বারা ইসলামের উদ্দেশ্য হলো, সমাজের কোনো স্থানে যেন ধন-সম্পদ পুঞ্জীভূত না হয়ে ওঠে। যারা প্রয়োজনাতিরিক্ত যথেষ্ট পরিমাণ ধন-সম্পদের অধিকারী হয়েছে তারা যেন তা জমা করে না রাখে, ব্যয় করা বন্ধ না করে। বরং তা যেন এমনভাবে ব্যয় করে যার ফলে সমাজের আবর্তিত সম্পদ থেকে বঞ্চিতরা জীবিকা অর্জন করতে পারে।

জাকাত অনুগ্রহ নয়। বরং ধনীর ধনে গরিবের অধিকার। ধনীরা এ অধিকার গরিবকে ন্যায্যগন্ডায় প্রদান করতে বাধ্য। মহান আল্লাহ জাকাতকে সেভাবেই বিধিত করেছেন। এ অধিকার রক্ষার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব ধনীদের দিতে হবে। অধিকার রক্ষায় শঠতা, কপটতা ও ধূর্তামি করলে পেতে হবে ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

ফিতরা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে না থাকলেও এর গুরুত্ব অনেক। যা রোজাকে ত্রুটিমুক্ত করে। এটি বিধিবদ্ধ হয়েছে হাদিস দ্বারা। বিধানগত দিক থেকে ওয়াজিব। আদায় করতে হয় ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে। তবে ঈদের কিছুদিন পূর্বে আদায় করাও বিধিসম্মত। কিন্তু ঈদের নামাজের পর আদায় করলে সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে। হবে নফল সদকা।

বিভিন্ন হাদিস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাসূল সা: দুটি উদ্দেশ্যে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। একটি উদ্দেশ্য হলো, অনেক সময় মানুষ রোজা রেখে কথা ও কাজে ভুল করে ফেলে। ভুল না করার দৃঢ় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মানুষ হিসেবে ভুল হয়ে যায়। এতে রোজা ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়। আর রমজানের শেষে কিছু দান সদকা করলে সেই ত্রুটিবিচ্যুতি দূর হওয়ার আশা করা যায়। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো, সদকাতুল ফিতর প্রদান করে অভাবী গরিব-দুখিদেরকে ঈদের আনন্দে অংশীদার করা।

হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বর্ণনা করেন, রাসূল সা: সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন অশ্লীল কথা ও অর্থহীন কাজ থেকে রমজানের রোজাকে পবিত্র করার জন্য এবং গরিব-মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য। (আবু দাউদ : ১৬০৯)

সদকাতুল ফিতরের নেসাব
সদকাতুল ফিতরের নেসাব জাকাতের নেসাবের সমপরিমাণ। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। এমনকি রমজানের শেষ দিনেও যে নবজাতক দুনিয়ায় এসেছে তার পক্ষ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। (ফাতহুল কাদির ২/২৮১, হিন্দিয়া ১/১৯২)

যারা নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী নয় তাদের ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব নয়। কিন্তু এরপরও যদি তারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতে চায় তাহলে আদায় করতে পারবে। এতে তারা সওয়াবের অধিকারীও হবে। (দারুল ইফতা, জামিয়া ইউসুফ বানুরি টাউন, ফতোয়া নং ১৪৪১০৯২০২১৯৯)

জাকাত ও ফিতরার খাত
জাকাত ও সদকাতুল ফিতর প্রদানের খাত একই। অর্থাৎ নির্ধারিত আটটি খাত, যা করোআনে বর্ণিত হয়েছে। যাদেরকে জাকাত দেয়া যাবে তাদেরকে সদকাতুল ফিতরও দেয়া যাবে। কোরআনে বর্ণিত নির্ধারিত খাত ব্যতীত অন্যকোনো কাল্যাণমূলক কাজে সদকাতুল ফিতর প্রদান করলে শরিয়তের দৃষ্টিতে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয় সদকা হচ্ছে ফকির ও মিসকিনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য, (তা বণ্টন করা যায়) দাস আজাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা তাওবা, আয়াত : ৬০)

জনপ্রতি ফিতরার পরিমাণ
ইবনে ওমর হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা: নিজ উম্মতদের, ক্রীতদাস ও স্বাধীন, নারী ও পুরুষ, ছোট ও বড় সবার মাথা পিছু এক ছা পরিমাণ খেজুর বা জব ফিতরা হিসাবে ওয়াজিব করেছেন।

জাকাত ও ফিতরার মূল পার্থক্য
জাকাত ও ফিতরার মূল পার্থক্য হলো, জাকাতের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির মালিকানায় নেসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলে তাকে সম্পদের ২.৫ শতাংশ হারে জাকাত প্রদান করতে হয়, কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে সম্পদ পূর্ণ এক বছর স্থায়ী হওয়ার প্রয়োজন হয় না। বরং ঈদুল ফিতরের দিন সকালে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হয়। জাকাতের পরিমাণ হচ্ছে সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫ শতাংশ। আর ফিতরা প্রদান করতে হয় জনপ্রতি এক ছা গম, যার পরিমাণ ২ কেজি ৪০ গ্রাম।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: