বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনা তদন্তে বর্তমানে কলকাতায় অবস্থান করছে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি টিম। তদন্তের জন্য ডিবির ওই দলটি নিউটাউনের অভিজাত সঞ্জীবা গার্ডেনসে প্রবেশ করেছে।
ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের গোয়েন্দা প্রতিনিধি দলের পাশাপাশি কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-কমিশনের (কাউন্সেলর) আলমাস হোসেনও ঘটনাস্থলে রয়েছেন। তদন্ত দলের অন্য সদস্যরা হলেন আব্দুল আহাদ, সাহেদুর রহমান এবং সাহিন ব্যাপারী।
সোমবার (২৭ মে) সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে নিউটাউনের ওয়েস্টিন হোটেল থেকে বের হয় প্রতিনিধি দলটি। এর আগে রোববার (২৬ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিবির তদন্তকারী দলটি কলকাতার নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামে। সেখান থেকে নিউটাউনের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে যান তারা। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে ডিবিপ্রধান ও তদন্ত দলের অন্য সদস্যরা বাংলাদেশের উপ-দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিউটাউন থানায় যান। নিউটাউন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কল্লোল কুমার ঘোষের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
নিউটাউন থানায় প্রায় ২০ মিনিট কাটিয়ে সঞ্জীবা গার্ডেনসে পৌঁছান ডিবিপ্রধান। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন কলকাতা পুলিশের কর্মকতারাও। সঞ্জীবা গার্ডেনসে ঘণ্টাখানেক ছিলেন তারা। সেখান থেকে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট নাগাদ রাজ্য পুলিশের সদরদপ্তর ভবানী ভবনে পৌঁছান ডিবিপ্রধান।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভবানী ভবনেই গ্রেফতার রয়েছেন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি জিহাদ হাওলাদার। ডিবিপ্রধান হারুন আর রশিদসহ চার সদস্যের তদন্তকারী দল কসাই জিহাদ ওরফে জিহাদ হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
এছাড়া, যে গাড়িতে করে আনোয়ারুল আজীম আনারের খণ্ডিত দেহাংশ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছিল, সেই গাড়ির চালক মোহাম্মদ জুবেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন তদন্তকারীরা। রাজ্য পুলিশের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ডিবিপ্রধান এবং প্রতিনিধি দলের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম।
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পরে গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলে না তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।
এ ঘটনায় বুধবার (২২ মে) ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদ সদস্য ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১১ মে ৪টা ৪৫ মিনিটে বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে বন্ধ পাই।
১৩ মে আমার বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল- ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেবো।’ এছাড়া আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।’
বিজনেস আওয়ার/২৭ মে/ হাসান