ঢাকা , শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে কোম্পানির মুনাফা সঠিকভাবে বন্টনের উদ্যোগ

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০
  • 3

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে যাতে সঠিকভাবে বন্টন করা হয়, সেজন্য কোম্পানিগুলোর উপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যাতে শেয়ারহোল্ডার তথা বিনিয়োগকারীদের মুনাফা থেকে বঞ্চিত করতে না পারে, সেজন্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করছেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা বোর্ড ডিভিডেন্ড ঘোষণার ক্ষেত্রে কোন নিয়ম-নীতি অনুসরণ করছে না। কোম্পানিগুলোর পরিচালনা বোর্ড এখনো খেয়াল-খুশী মতো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। কোম্পানির ভালো মুনাফা হলেও শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ কোম্পানির সুযোগ-সুবিধা ইচ্ছামতো তারা ভোগ-দখল করছে। কোম্পানির পরিচালকদের ভোগ-বিলাস ও স্বেচ্চাচারিতা রোধ করার জন্য এবং শেয়ারহোল্ডার ন্যায্য ডিভিডেন্ড নিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তারা। অন্যথায় পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না বলে তারা দাবি করেন।

এ বিষয়ে বিএসইসির পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির মুনাফা পাওয়ার শতভাগ অধিকার শেয়ারহোল্ডারদের রয়েছে। তাদের এই অধিকার যাতে নিশ্চিত হয়, তরা যাতে ঠিকভাবে ডিভিডেন্ড পান, সেজন্য নিয়ন্ত্রন সংস্থা তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের জন্য ‘একটি স্বাধীন পরিচালক প্যানেল’গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বেচ্চাচারিতা রোধ হবে বলে তিনি মনে করেন।

এ প্রসংগে তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের একটি কোম্পানি সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে। যে বছরের জন্য কোম্পানিটি নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, সেই বছর কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে ছিল না। তারপরও বিএসইসি কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষকে তলব করে এবং ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণার কারণ জানতে চায়। কোম্পানিটির ব্যাখ্যা বিএসসির কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি সংশোধনের পরামর্শ দেয় এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যতে আরও সাবধানতা অবলম্বনের আহ্বান জানায়।

জানা যায়, মুনাফায় থাকলেও ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করায় কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ বিএসইসির ভৎসনার শিকার হয় এবং নো ডিভিডেন্ডের জন্য বিএসইসির কাছে ক্ষমা চায়।

উল্লেখ্য, গত ২৯ এপ্রিল বিএসইসির সভায় কর্পোরেট সুশাসন বিধিমালায় (কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড) স্বতন্ত্র পরিচালকদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে স্বতন্ত্র পরিচালকদের একটি প্যানেল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এ বিষয়ে বিএসইসির এক প্রেস রিলিজে বলা হয়, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে সুশাসন বাড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলো সহজেই এই প্যানেল থেকে স্বতন্ত্র পরিচালক বেছে নিতে পারবে। এতে শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার যেমন সুরক্ষা পাবে, তেমিন কোম্পানিগুলোর কাজও সহজতর হবে।’

জানা যায়, বিএসইসি কোম্পাগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। ইতোমধ্যে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে একজন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগও দিয়েছে বলে নতুন তালিকভুক্ত কোম্পানি সূত্রে জানা যায়।

এ বিষয়ে বিএসইসির আরেক কর্মকর্তা জানান, অনেক সময় কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের মধ্যে কোম্পানির সম্পদ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার অভিযোগ দেখা যায়। এতে কোম্পানির ভাবমুর্তি যেমন ক্ষুণ্ণ হয়, তেমনি সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ দেখভাল করার জন্যই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান (কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড) করা হয়েছে।

এদিকে, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলো বিএসইসির এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় বিএসইসিকে আর শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছে তারা।

বিজনেস আওয়ার/২৬ অক্টোবর, ২০২০/এসএম

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে কোম্পানির মুনাফা সঠিকভাবে বন্টনের উদ্যোগ

পোস্ট হয়েছে : ০৫:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে যাতে সঠিকভাবে বন্টন করা হয়, সেজন্য কোম্পানিগুলোর উপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যাতে শেয়ারহোল্ডার তথা বিনিয়োগকারীদের মুনাফা থেকে বঞ্চিত করতে না পারে, সেজন্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করছেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা বোর্ড ডিভিডেন্ড ঘোষণার ক্ষেত্রে কোন নিয়ম-নীতি অনুসরণ করছে না। কোম্পানিগুলোর পরিচালনা বোর্ড এখনো খেয়াল-খুশী মতো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। কোম্পানির ভালো মুনাফা হলেও শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ কোম্পানির সুযোগ-সুবিধা ইচ্ছামতো তারা ভোগ-দখল করছে। কোম্পানির পরিচালকদের ভোগ-বিলাস ও স্বেচ্চাচারিতা রোধ করার জন্য এবং শেয়ারহোল্ডার ন্যায্য ডিভিডেন্ড নিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তারা। অন্যথায় পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না বলে তারা দাবি করেন।

এ বিষয়ে বিএসইসির পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির মুনাফা পাওয়ার শতভাগ অধিকার শেয়ারহোল্ডারদের রয়েছে। তাদের এই অধিকার যাতে নিশ্চিত হয়, তরা যাতে ঠিকভাবে ডিভিডেন্ড পান, সেজন্য নিয়ন্ত্রন সংস্থা তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের জন্য ‘একটি স্বাধীন পরিচালক প্যানেল’গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বেচ্চাচারিতা রোধ হবে বলে তিনি মনে করেন।

এ প্রসংগে তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের একটি কোম্পানি সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে। যে বছরের জন্য কোম্পানিটি নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, সেই বছর কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে ছিল না। তারপরও বিএসইসি কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষকে তলব করে এবং ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণার কারণ জানতে চায়। কোম্পানিটির ব্যাখ্যা বিএসসির কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি সংশোধনের পরামর্শ দেয় এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যতে আরও সাবধানতা অবলম্বনের আহ্বান জানায়।

জানা যায়, মুনাফায় থাকলেও ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করায় কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ বিএসইসির ভৎসনার শিকার হয় এবং নো ডিভিডেন্ডের জন্য বিএসইসির কাছে ক্ষমা চায়।

উল্লেখ্য, গত ২৯ এপ্রিল বিএসইসির সভায় কর্পোরেট সুশাসন বিধিমালায় (কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড) স্বতন্ত্র পরিচালকদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে স্বতন্ত্র পরিচালকদের একটি প্যানেল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এ বিষয়ে বিএসইসির এক প্রেস রিলিজে বলা হয়, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে সুশাসন বাড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলো সহজেই এই প্যানেল থেকে স্বতন্ত্র পরিচালক বেছে নিতে পারবে। এতে শেয়ারহোল্ডারদের অধিকার যেমন সুরক্ষা পাবে, তেমিন কোম্পানিগুলোর কাজও সহজতর হবে।’

জানা যায়, বিএসইসি কোম্পাগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। ইতোমধ্যে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে একজন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগও দিয়েছে বলে নতুন তালিকভুক্ত কোম্পানি সূত্রে জানা যায়।

এ বিষয়ে বিএসইসির আরেক কর্মকর্তা জানান, অনেক সময় কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের মধ্যে কোম্পানির সম্পদ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার অভিযোগ দেখা যায়। এতে কোম্পানির ভাবমুর্তি যেমন ক্ষুণ্ণ হয়, তেমনি সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ দেখভাল করার জন্যই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান (কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড) করা হয়েছে।

এদিকে, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলো বিএসইসির এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় বিএসইসিকে আর শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছে তারা।

বিজনেস আওয়ার/২৬ অক্টোবর, ২০২০/এসএম

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: