বিনোদন ডেস্ক: বীরোচিত ও রক্তাক্ত জুলাই বিপ্লবের হাত ধরে পতন ঘটেছে শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকারের। এসেছে দিন বদলের দিন। নতুন করে দেশটাকে গুছিয়ে নিতে চাইছেন সবাই। অন্তবর্তীকালীন সরকারও গঠিত হয়েছে। শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অপার সম্ভাবনার এক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে চলছে দেশ ও জাতি।
তবে বিপ্লবের রেশ এখনো কাটিয়ে উঠেনি বাংলাদেশ। আছে দগদগে শোকের বিষাদ, শিক্ষার্থীদের বিপ্লবকালীন নির্যতন-নিপীড়নের ট্রমা, বিপ্লব পরবর্তী নানা সংস্কারের উদ্যোগ ও বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা। তার ভিড়ে যুক্ত হয়েছে ভয়াবহ বন্যা।
এসব কারণে দেশের অনেক কিছুই এখনো স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি। কর্মস্থলে আসেনি প্রাণ চাঞ্চল্য। যেমনটা দেখা যাচ্ছে শোবিজেও। গান-নাটক-সিনেমা কিংবা মঞ্চ নাটকের হলগুলোতে এখনো জমে উঠেনি কোলাহল। তবে এখানকার মানুষেরা দীর্ঘদিনের আলস্য থেকে বের হয়ে আসতে চাইছেন। বলা যায় বিপ্লব শেষে যে সাফল্য সেই রেশ নিয়ে কাজে নামতে চান নতুন বাংলাদেশ গড়ার মিশন নিয়ে।
শোবিজের নানা অঙ্গনেও চলছে সংস্কার কাজ। দলীয়করণ, মেধাকে পাশ কাটিয়ে অযোগ্যদের দাদাগিরি, যোগ্যদের জন্য কাজের সুস্থ পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে এখানেও পুনর্গঠিত হচ্ছে নানা সংগঠনগুলো। তবে সেসব যেন দ্রুতই হয় এমন প্রত্যাশা শোবিজের মানুষদের।
নাটক ও সিনেমার পরিচালক তপু খান বলেন, ‘রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের যে সাফল্য তাকে ধরে রাখতে সবাইকে আসলে এখন কাজে নামতে হবে। যে স্বপ্ন আমরা দেখছি সেটা সার্বজনীন করে তুলতে এক হয়ে চলতে হবে। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি শিগগিরই কাজে ফেরার। বেশ কিছু নাটক নিয়ে শুটিংয়ে নামতে চাই। অনেকটা সময় আমাদের কেটে গেছে কাজ ছাড়া। ব্যক্তিজীবনেও এর প্রভাব পড়ছে।’
তরুণ পরিচালক কামরুল হাসান ফুয়াদ কাজে ফেরা প্রসঙ্গে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘কাজে ফিরতে পারবো কবে? কেউ কি বলতে পারেন? বিগত ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে, দেশ সংস্কার হওয়া পর্যন্ত এবং বর্তমান সকল সংকট মিলিয়ে দেশের পরিস্থিতিতে আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মীদের কাজের বর্তমান অবস্থা খুবই শোচনীয়। কার কি অবস্থা আমার জানা নাই কিন্তু আমার কর্মক্ষেত্রে খুবই বাজে অবস্থা যাচ্ছে। করোনাকালীন সময়ও এতটা বাজে পরিস্থিতি তৈরি হয় নাই। এখন কবে থেকে আসলে আমাদের কাজের পরিবেশ তৈরি হবে? কবে থেকে স্বাভাবিক পরিবেশে কাজ শুরু করতে পারব? জীবন তো থেমে নাই। জমানো অর্থ শূন্যের কোটায়। সামনে কাজের পরিবেশ স্থীতিশীল না হলে পরবর্তী দিনগুলো ভয়ানক রূপ নেবে। এই পরিস্থিতিতে আসলে আমাদের কি করনীয়?’
এই রেশ ধরে এক চিত্রনায়িকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দেখুন বিপ্লব তো ছিল সবাই স্বাধীণভাবে সুন্দর পরিবেশে মুক্ত হয়ে বেঁচে থাকবো, কাজ করবো সেই আশাতেই। তাই আমি চাই দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হোক। প্রযোজক ও পরিচালকেরা যেন কাজে ফেরার সাহস পান। দিনের পর দিন এভাবে কাজহীন হয়ে থাকলে না খেয়ে থাকা লাগবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকগুলো সিনেমারই শুটিং আটকে আছে। নানা কারণে সেগুলোর কাজ শুরু হচ্ছে না। আবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক প্রযোজক ও কলাকুশলীরা গা ঢাকা দিয়ে আছেন। তারা কাজের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কাজে আসতে চাইছেন না। অনেক প্রযোজক নিরবিচ্ছিন্ন অর্থের লেনদেন করতে না পারার জন্যও আপাতত কাজ শুরু করছেন না। অনেকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সে নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে দ্রুতই সিনেমাপাড়ায় স্বাভাবিক কর্মমুখর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এ সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত বৈঠকও দাবি করছেন অনেকে। সেন্সর বোর্ড সক্রিয় করে নতুন সিনেমা মুক্তির উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলেও মনে করছেন তারা।
এদিকে নাটকপাড়ার প্রায় অধিকাংশরাই নিয়োজিত রয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে নানা রকম সেবা নিয়ে। পরিচালক থেকে শুরু করে শিল্পীরা, সবাই ত্রাণ নিয়ে ছুটছেন বানভাসীদের দুয়ারে দুয়ারে। যে যার সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন এই সংকট মোকাবিলা করতে। বেশ ক’জন পরিচালক জানান, সেপ্টেম্বর থেকেই নাটকের আঙিনায় ব্যস্ততা বেড়ে যাবে। এরইমধ্যে নতুন এক ধারাবাহিকের ঘোষণা দিয়েছেন আবু হায়াত মাহমুদ। তিনি ‘জেন জেড’ নামে নাটকটি তৈরি করবেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। এ সময় কালে মানুষের মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরী হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে ভাবনার জায়গা গুলো। এ সব কিছু মাথায় রেখেই এ ধারাবাহিকটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি রচনা করেছেন মেজবাহ উদ্দিন সুমন। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ধারাবাহিকটির দৃশ্যধারণ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা। এটি মুলত পলিটিক্যাল স্যাটায়ারধর্মী ধারাবাহিক। পরিচালক বলেন, ‘আমরা বিপ্লবের সুফল পেয়েছি। এখন কাজে নেমে পড়তে চাই। দেশের প্রতিটি সেক্টরেই ব্যস্ততা ফিরে আসুক। শোবিজের মানুষেরা দেড় মাস ধরে বেকার। কাজ ছাড়া আমরা চলবো কি করে। তাই এই ধারাবাহিকটি হাতে নিয়েছে। এখানে অনেক শিল্পীরা যুক্ত হবেন।’
এর বাইরেও আরও অনেক নির্মাতা তৈরি করছেন গল্প, নিচ্ছেন শুটিংয়ের প্রস্তুতি। কাজে ফিরতে শিডিউলও দিচ্ছেন মোশাররম করিম, জোভান, ফারহান, মাহিয়া খান মাহি, নিলয়, হিমি, কেয়া পায়েল, তানজিন তিশা, সাবিলা নূর, চমকেরা।
তবে বিপ্লবের সময়টাতেও বেশ সরব ছিল সংগীতাঙ্গন। বিপ্লবকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে অনেক গান। সেখানে আছে পুরনো গানের রিমেক, আছে নতুন গান। উল্লেখ করা যায় ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানের কথা। তিনি নিজ দেশের বিপ্লব নিয়ে গান তৈরি করে তুমুল আলোচনায় এসেছেন। পাশাপশি কলকাতার নারী চিকিৎসক হত্যার প্রতিবাদেও গেয়েছেন একটি গান। আর বিপ্লবকে সংহতি জানিয়ে ব্যান্ডগুলো জুলাই থেকেই নানা রকম কনসার্টে গেয়ে যাচ্ছে। তারা গান করেছে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহের জন্যও।
একইভাবে থিয়েটারপাড়াও একদম শাটডাউনে ছিল না। ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তের থিয়েটারগুলোতে বিপ্লবধর্মী ও প্রতিবাদী নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতেও হয়েছে কিছু নাটকের প্রদর্শনী।
তবে পেশাদারীত্বের জায়গা থেকে শোবিজের সামগ্রিক ব্যস্ততা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রায় দেড় মাসের কর্মহীনতা এখানে অস্থিরতা ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
বিজনেস আওয়ার/ ৩১ আগস্ট/ রানা