সামিট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সামিট গাজীপুর-২ পাওয়ার লিমিটেড দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি অর্থায়ন হিসাবে ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ এক হাজার ১৯০ কোটি টাকা পেয়েছে। সিঙ্গাপুরের ক্লিফোর্ড ক্যাপিটাল এবং জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক সুমিতোমো মিতসুই ব্যাংকিং করপোরেশন (এসএমবিসি) থেকে প্রতিষ্ঠানটি এ অর্থায়ন পেয়েছে বলে শুক্রবার (১৫ মে) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এটি বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক বলে সামিটের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের বেসরকারি খাতে সামিট প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এরূপ বিনিয়োগ পেয়েছে। পূর্বে বিদ্যুৎ উন্নয়ন খাতে বিদেশি বিনিয়োগের পুরোটুকু বা অধিকাংশই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান যেমন- ডিইজি, এফএমও, আইএফসি, এডিবি, আইএসডিবি, সিডিসি ইত্যাদি বা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তাদের থেকে এসেছিল।
সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও, বাণিজ্যিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে এই স্বল্পমূল্যের দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প অর্থায়ন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে সামিট এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের মর্যাদা এবং সুনামের প্রতিফলন। আমরা আমাদের গ্রাহক এবং ঋণদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং নিশ্চিত করতে চাই যে, আমরা উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাব।’
ক্লিফোর্ড ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অদ্রা লো বলেন, ‘ক্লিফোর্ড ক্যাপিটাল সিঙ্গাপুরভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা সম্প্রসারণের সহযোগী হতে পেরে আনন্দিত। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থায়নের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানিদের তাদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিনিয়োগে সহায়তা করা, আমাদের অর্থায়নের জ্ঞান, সমন্বয় করার সক্ষমতা এবং আমাদের বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের অভিজ্ঞতা নেয়া। এছাড়া সিঙ্গাপুর অবকাঠামো অর্থায়নের জন্য একটি অনন্য গন্তব্য যেখানে অর্থায়নের পৃষ্ঠপোষক, অর্থদাতা এবং পরামর্শদাতাদের কেন্দ্র- এটি তারই একটি নিদর্শন।’
সুমিতোমো মিতসুই ব্যাংকিং করপোরেশনের এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্ট্রাকচারড ফাইন্যান্স বিভাগের হেড অব পাওয়ার, রিনিউয়েবলস অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার জীন সো বলেন, ‘এই লেনদেনের মাধ্যমে আমাদের মুখ্য গ্রাহক সামিট করপোরেশনকে সহযোগিতা করতে পেরে আমরা আনন্দিত এবং এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতেও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ লেনদেন সম্পন্ন করতে পারায় আমি পুরো দলকে অভিনন্দন জানাতে চাই। আমরা এসএমবিসি এবং সামিট করপোরেশনের মধ্যে দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক প্রত্যাশা করছি।’
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ব্যাংক এশিয়া, দ্য সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক সামিট গাজীপুর-২ পাওয়ার লিমিটেডের প্রকল্প নির্মাণে অর্থায়ন করেছিল এবং পরবর্তীতে এই দীর্ঘমেয়াদি ঋণ থেকে তাদের অর্থায়ন পরিশোধ করা হয়। সামিট আশা করছে, চলমান লকডাউন শেষ হওয়ার পরপরই অর্থায়নের সর্বশেষ কিস্তি পাবে।
সামিট গাজীপুর-২ পাওয়ার লিমিটেড, সামিট করপোরেশন এবং সামিট পাওয়ার লিমিটেডের যৌথ মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে বৃহত্তম জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোং লিমিটেডের (এসওএসসিএল) সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সরবরাহ চুক্তি করে এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)-এর সঙ্গে ১৫ বছরের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এই প্রকল্পটি মাত্র ৯ মাসের বাস্তবায়নের মধ্যে ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে ২০১৮ সালের ১০ মে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে এবং তখন থেকেই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতির প্রেক্ষিতে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে।