ঢাকা , শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবেক সাংসদের পুঁজিবাজারের বিদ্যুৎকোম্পানির যন্ত্রপাতি বিক্রি

  • পোস্ট হয়েছে : ০৬:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪
  • 449

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: সরকার পরিবর্তনের পর বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিক্রি শুরু করেছে ডরিন পাওয়ার। এরই মধ্যে দুটি বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দিয়েছে কোম্পানিটি। গত ফেব্রুয়ারিতে এই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ নতুন করে আর বাড়বে না, এমন আশঙ্কা থেকেই ডরিন পাওয়ার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেয় বলে জানা গেছে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ডরিন পাওয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিক্রির এই তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল সোমবার কোম্পানিটির ফেনীর ২২ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যন্ত্রপাতি বিক্রির তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে গত ২১ আগস্ট কোম্পানিটি তাদের টাঙ্গাইলের ২২ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যন্ত্রপাতি বিক্রির কথাও জানিয়েছিল।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির যন্ত্রপাতি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় ডরিন পাওয়ার। এই দুটিসহ তাদের মোট তিনটি বিদ্যুকেন্দ্রের মেয়াদ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে। এ তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হলো টাঙ্গাইল, ফেনী ও নরসিংদী পাওয়ার প্ল্যান্ট। প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা ২২ মেগাওয়াট করে মোট ৬৬ মেগাওয়াট। তারা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে ১৫ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারিতে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর চুক্তি নবায়নে উদ্যোগী হয় ডরিন পাওয়ার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চুক্তি নবায়নের আশ্বাস পেয়ে অপেক্ষায় ছিল তারা। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর এখন কোম্পানিটি মনে করছে যে তাদের সঙ্গে বিপিডিবির চুক্তি নবায়নের সম্ভাবনা কম। এ কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতির পাশাপাশি জমিও বিক্রির চেষ্টা করছে তারা।

ডরিন পাওয়ারের মালিকানায় ছিল সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নুরে আলম সিদ্দিকীর পরিবার। বর্তমানে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে ও আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। আর চেয়ারম্যান হলেন তাহজীব আলম সিদ্দিকীর স্ত্রী আনজাবিন আলম সিদ্দিকী।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিদ্যুৎ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয় ডরিন পাওয়ার। ওই বছরই উল্লিখিত তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারের সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তিতে উৎপাদন শুরু করে। এ ছাড়া ডরিন পাওয়ারের আরও তিনটি সহযোগী বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। সেগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২২৫ মেগাওয়াট। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে, নবাবগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা সাউদার্ন পাওয়ার জেনারেশন, মানিকগঞ্জে অবস্থিত ঢাকার নর্দার্ন পাওয়ার জেনারেশন ও চাঁদপুর পাওয়ার জেনারেশন। ডরিন পাওয়ারের সহযোগী এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ ২০৩০ সালের পর শেষ হবে।

ডরিন পাওয়ার জানিয়েছে, টাঙ্গাইল ও ফেনীর দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি ২০ কোটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। রূপসী বাংলাদেশ গ্রুপ ও ট্রাস্ট মেরিন সার্ভিসেস নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব যন্ত্রপাতি বিক্রি করা হয়। যন্ত্রপাতির পাশাপাশি দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমিও বিক্রির চেষ্টা চলছে।

জানতে চাইলে ডরিন পাওয়ারের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আমজাদ শাকিল গণমাধ্যম‘ বলেন, ‘মূল কোম্পানির তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে দুটির চুক্তির মেয়াদ নবায়নের বিষয়ে আশ্বস্ত হতে না পেরে সেগুলোর যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই দুটি কেন্দ্রের জমিও বিক্রির চেষ্টা চলছে। অন্যটির মেয়াদ নবায়নের বিষয়ে আমরা এখনো আশাবাদী। সে জন্য সেটির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’

বিজনেস আওয়ার/ ০১ অক্টোবর / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সাবেক সাংসদের পুঁজিবাজারের বিদ্যুৎকোম্পানির যন্ত্রপাতি বিক্রি

পোস্ট হয়েছে : ০৬:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: সরকার পরিবর্তনের পর বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিক্রি শুরু করেছে ডরিন পাওয়ার। এরই মধ্যে দুটি বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দিয়েছে কোম্পানিটি। গত ফেব্রুয়ারিতে এই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ নতুন করে আর বাড়বে না, এমন আশঙ্কা থেকেই ডরিন পাওয়ার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেয় বলে জানা গেছে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ডরিন পাওয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিক্রির এই তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল সোমবার কোম্পানিটির ফেনীর ২২ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যন্ত্রপাতি বিক্রির তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে গত ২১ আগস্ট কোম্পানিটি তাদের টাঙ্গাইলের ২২ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যন্ত্রপাতি বিক্রির কথাও জানিয়েছিল।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির যন্ত্রপাতি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় ডরিন পাওয়ার। এই দুটিসহ তাদের মোট তিনটি বিদ্যুকেন্দ্রের মেয়াদ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে। এ তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হলো টাঙ্গাইল, ফেনী ও নরসিংদী পাওয়ার প্ল্যান্ট। প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা ২২ মেগাওয়াট করে মোট ৬৬ মেগাওয়াট। তারা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে ১৫ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারিতে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর চুক্তি নবায়নে উদ্যোগী হয় ডরিন পাওয়ার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চুক্তি নবায়নের আশ্বাস পেয়ে অপেক্ষায় ছিল তারা। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর এখন কোম্পানিটি মনে করছে যে তাদের সঙ্গে বিপিডিবির চুক্তি নবায়নের সম্ভাবনা কম। এ কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতির পাশাপাশি জমিও বিক্রির চেষ্টা করছে তারা।

ডরিন পাওয়ারের মালিকানায় ছিল সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নুরে আলম সিদ্দিকীর পরিবার। বর্তমানে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে ও আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। আর চেয়ারম্যান হলেন তাহজীব আলম সিদ্দিকীর স্ত্রী আনজাবিন আলম সিদ্দিকী।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিদ্যুৎ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয় ডরিন পাওয়ার। ওই বছরই উল্লিখিত তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারের সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তিতে উৎপাদন শুরু করে। এ ছাড়া ডরিন পাওয়ারের আরও তিনটি সহযোগী বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। সেগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২২৫ মেগাওয়াট। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে, নবাবগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা সাউদার্ন পাওয়ার জেনারেশন, মানিকগঞ্জে অবস্থিত ঢাকার নর্দার্ন পাওয়ার জেনারেশন ও চাঁদপুর পাওয়ার জেনারেশন। ডরিন পাওয়ারের সহযোগী এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ ২০৩০ সালের পর শেষ হবে।

ডরিন পাওয়ার জানিয়েছে, টাঙ্গাইল ও ফেনীর দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি ২০ কোটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। রূপসী বাংলাদেশ গ্রুপ ও ট্রাস্ট মেরিন সার্ভিসেস নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব যন্ত্রপাতি বিক্রি করা হয়। যন্ত্রপাতির পাশাপাশি দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমিও বিক্রির চেষ্টা চলছে।

জানতে চাইলে ডরিন পাওয়ারের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আমজাদ শাকিল গণমাধ্যম‘ বলেন, ‘মূল কোম্পানির তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে দুটির চুক্তির মেয়াদ নবায়নের বিষয়ে আশ্বস্ত হতে না পেরে সেগুলোর যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই দুটি কেন্দ্রের জমিও বিক্রির চেষ্টা চলছে। অন্যটির মেয়াদ নবায়নের বিষয়ে আমরা এখনো আশাবাদী। সে জন্য সেটির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’

বিজনেস আওয়ার/ ০১ অক্টোবর / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: