বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বৈদেশিক মুদ্রায় দেশে রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এতেই আর্থিক হিসাবে দেখা দিয়েছে ঘাটতি। যদিও আগের বছরের তুলনায় এ ঘাটতির পরিমাণ অনেক কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯ কোটি ডলার বা প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে চলতি হিসাবের উদ্বৃত্ত ১১ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৬১ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই দুই মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩০৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
জুলাই-আগস্ট সময়ে ৯৯১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই দুই মাসে এক হাজার তিন কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।
অন্যদিকে জুলাই-আগস্ট সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৭১৬ কোটি ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। গত বছরের এই দুই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৬৯৮ কোটি ডলার আয় হয়েছিল। এ হিসাবেই চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ কমে ২৭৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
২ হাজার ২৪৩ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৩৮ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৬৫১ কোটি ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছর।
তবে আশার খবর হলো- ব্যালান্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত নিয়ে শুরু হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচকে ৬১ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল।
এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৪৫৪ কোটি ডলার। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আর্থিক হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
তাতে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি কিছুটা কমেছে। জুলাই-আগস্ট সময়ে এই সূচকে ঘাটতি ছিল ১০৪ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ১৬৯ কোটি ডলার।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। সেই ইতিবাচক ধারা চলতি অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে। দুই মাসে অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট সময়ে ৪১৪ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
ইতোমধ্যে সেপ্টেম্বর মাসের রেমিটেন্সের তথ্যও প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৬৫৪ কোটি ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-আগস্ট সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৫৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
এদিকে সংকটের মধ্যেও দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। জুলাই-আগস্ট সময়ে মোট ৬৯ কোটি ৩০ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছে দেশে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ৬০ কোটি ৯০ লাখ ডলার এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ।
বিজনেস আওয়ার/ ১০ অক্টোবর / রহমান