ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বর্ণের দাম কোনদিকে যাচ্ছে

  • পোস্ট হয়েছে : ০১:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
  • 30

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: করোনা মহামারির ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। চলতি ২০২৪ সালেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ছিল ২ হাজার ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৫ টাকা; কিন্তু গত কয়েক মাসের ব্যবধানে ফের বেড়েছে মূল্যবান এই ধাতুটির দাম। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৫০ ডলার বা ৩ লাখ ১৬ হাজার ২৭১ টাকায়।

সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

আন্তর্জাতিক বাজার যেহেতু স্থিতিশীল কোনো ব্যাপার নয়, তাই অনেকেরই স্বর্ণ ক্রয় বা এ খাতে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকছেন। তারা অপেক্ষায় রয়েছেন স্বর্ণের দাম কমার। গতানুগতিক বিনিয়োগাকারীদের মতো তারা ভাবছেন, স্বর্ণের দাম কমলে তা ক্রয় করে তারা সঞ্চয় করবেন এবং যখন দাম বাড়বে— তখন সেসব বিক্রি করবেন।

বাজারের সার্বিক ভারসাম্যের ক্ষেত্রে হয়তো তাদের এই অপেক্ষা কিঞ্চিত ইতিবাচক, তবে যদি তারা অপেক্ষার সময় কিংবা মাত্রা আরও বৃদ্ধি করেন, সেক্ষেত্রে দিনের শেষে তাদেরকে লোকসানে পড়তে হবে বলে সতর্ক করেছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

কারণ প্রথমত, ডলারের মান ওঠানামা করার কারণে আন্তর্জাতিক পূঁজিবাজার সবসময়ই অস্থির থাকে। অস্থির এই বাজারের পুঁজিপতিদের গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হলো স্বর্ণ। বর্তমানে যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ অধিকাংশ দেশের পুঁজিবারে চাঙাভাব রয়েছে, কিন্তু যে কোনো সময়ে যে তা উল্টে যেতে পারে— সে সম্পর্কে পুঁজিপতিরাও ওয়াকিবহাল। তাছাড়া তারা এও জানেন যে, বিশ্বে যেহেতু নতুনভাবে স্বর্ণ সৃষ্টির সম্ভাবনা আপাতত নেই, তাই স্বর্ণের যোগান সীমিত এবং এই খাতে বিনিয়োগে লোকসানের আশঙ্কা খুবই কম। ফলে স্বর্ণ ক্রয় বা এর চাহিদা— কোনোটিই থেমে নেই। তাই যারা অপেক্ষায় আছেন স্বর্ণের দাম কমার, তাদেরকে ভবিষ্যতে আরও বেশি দামে স্বর্ণ কিনতে হতে পারে।

দ্বিতীয়ত, একসময় স্বর্ণকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ক্ষেত্র বলে মনে করা হতো। অর্থাৎ স্বর্ণ হচ্ছে এমন একটি সঞ্চয়, যা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ভাঙা যাবে না। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। পুঁজিবাজারের অস্থিরতার কারণে প্রতিদিন স্বর্ণের চাহিদা ও কেনাবেচা— উভয়ই বাড়ছে। বাজার বিশ্লেষকদের একাংশের বিশ্বাস, চলতি ২০২৪ সাল শেষ হওয়ার আগেই স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স ৩ হাজার ডলার বা ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে এখনও যারা ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বর্ণ কেনা থেকে বিরত থাকছেন, পরে তাদের লোকসানে পড়ার ব্যাপারটি প্রায় অবধারিত।

তৃতীয়ত, স্বর্ণের দাম যে একেবারেই ওঠানামা করে না— এমন নয়। মাঝে মাঝে স্বর্ণের দাম হ্রাস পায়, কিন্তু তা খুবই স্বল্প সময়ের জন্য। তাছাড়া স্বর্ণের দাম কমলেও তা খুব একটা কমে না। তাছাড়া সংঘাতকালীন পরিস্থিতিতে স্বর্ণের দাম সাধারণত চড়া থাকে। বিশ্বের দুই প্রান্তে এই মুহূর্তে বড় দু’টি যুদ্ধ হচ্ছে— রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ। সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে লেবাননেরও যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদি লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ বাঁধে, সেক্ষেত্রে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ফলে, স্বর্ণের দাম কমার আশায় এখনও যারা অপেক্ষায় আছেন, তাদের জন্য আপাতত কোন সুসংবাদ নেই।

বিজনেস আওয়ার/ ১৩ অক্টোবর / রহমান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

স্বর্ণের দাম কোনদিকে যাচ্ছে

পোস্ট হয়েছে : ০১:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: করোনা মহামারির ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। চলতি ২০২৪ সালেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ছিল ২ হাজার ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৫ টাকা; কিন্তু গত কয়েক মাসের ব্যবধানে ফের বেড়েছে মূল্যবান এই ধাতুটির দাম। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৫০ ডলার বা ৩ লাখ ১৬ হাজার ২৭১ টাকায়।

সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

আন্তর্জাতিক বাজার যেহেতু স্থিতিশীল কোনো ব্যাপার নয়, তাই অনেকেরই স্বর্ণ ক্রয় বা এ খাতে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকছেন। তারা অপেক্ষায় রয়েছেন স্বর্ণের দাম কমার। গতানুগতিক বিনিয়োগাকারীদের মতো তারা ভাবছেন, স্বর্ণের দাম কমলে তা ক্রয় করে তারা সঞ্চয় করবেন এবং যখন দাম বাড়বে— তখন সেসব বিক্রি করবেন।

বাজারের সার্বিক ভারসাম্যের ক্ষেত্রে হয়তো তাদের এই অপেক্ষা কিঞ্চিত ইতিবাচক, তবে যদি তারা অপেক্ষার সময় কিংবা মাত্রা আরও বৃদ্ধি করেন, সেক্ষেত্রে দিনের শেষে তাদেরকে লোকসানে পড়তে হবে বলে সতর্ক করেছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

কারণ প্রথমত, ডলারের মান ওঠানামা করার কারণে আন্তর্জাতিক পূঁজিবাজার সবসময়ই অস্থির থাকে। অস্থির এই বাজারের পুঁজিপতিদের গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হলো স্বর্ণ। বর্তমানে যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ অধিকাংশ দেশের পুঁজিবারে চাঙাভাব রয়েছে, কিন্তু যে কোনো সময়ে যে তা উল্টে যেতে পারে— সে সম্পর্কে পুঁজিপতিরাও ওয়াকিবহাল। তাছাড়া তারা এও জানেন যে, বিশ্বে যেহেতু নতুনভাবে স্বর্ণ সৃষ্টির সম্ভাবনা আপাতত নেই, তাই স্বর্ণের যোগান সীমিত এবং এই খাতে বিনিয়োগে লোকসানের আশঙ্কা খুবই কম। ফলে স্বর্ণ ক্রয় বা এর চাহিদা— কোনোটিই থেমে নেই। তাই যারা অপেক্ষায় আছেন স্বর্ণের দাম কমার, তাদেরকে ভবিষ্যতে আরও বেশি দামে স্বর্ণ কিনতে হতে পারে।

দ্বিতীয়ত, একসময় স্বর্ণকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ক্ষেত্র বলে মনে করা হতো। অর্থাৎ স্বর্ণ হচ্ছে এমন একটি সঞ্চয়, যা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ভাঙা যাবে না। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। পুঁজিবাজারের অস্থিরতার কারণে প্রতিদিন স্বর্ণের চাহিদা ও কেনাবেচা— উভয়ই বাড়ছে। বাজার বিশ্লেষকদের একাংশের বিশ্বাস, চলতি ২০২৪ সাল শেষ হওয়ার আগেই স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স ৩ হাজার ডলার বা ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে এখনও যারা ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বর্ণ কেনা থেকে বিরত থাকছেন, পরে তাদের লোকসানে পড়ার ব্যাপারটি প্রায় অবধারিত।

তৃতীয়ত, স্বর্ণের দাম যে একেবারেই ওঠানামা করে না— এমন নয়। মাঝে মাঝে স্বর্ণের দাম হ্রাস পায়, কিন্তু তা খুবই স্বল্প সময়ের জন্য। তাছাড়া স্বর্ণের দাম কমলেও তা খুব একটা কমে না। তাছাড়া সংঘাতকালীন পরিস্থিতিতে স্বর্ণের দাম সাধারণত চড়া থাকে। বিশ্বের দুই প্রান্তে এই মুহূর্তে বড় দু’টি যুদ্ধ হচ্ছে— রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ। সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে লেবাননেরও যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদি লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ বাঁধে, সেক্ষেত্রে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ফলে, স্বর্ণের দাম কমার আশায় এখনও যারা অপেক্ষায় আছেন, তাদের জন্য আপাতত কোন সুসংবাদ নেই।

বিজনেস আওয়ার/ ১৩ অক্টোবর / রহমান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: