বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: হঠাৎ করেই দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্শাল ল বা সামরিক আইন জারি করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। এতে তীব্র সমালোচনার মুখে পরেন তিনি। সামরিক আইন জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেখানকার পার্লামেন্ট এর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় সামরিক আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হন। একরকম রাজনৈতিক অস্থিরতাও শুরু হয়েছে। এবার জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ইউন।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে ইউন বলেন, ‘দেশে সামরিক আইন ঘোষণার জন্য আমি খুবই দুঃখিত এবং আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’ ধারণা করা হচ্ছিল এই ভাষণে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিবেন। কিন্তু তা না করে তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার দায়িত্ব ক্ষমতাসীন দলকে অর্পণ করবেন। অভিশংসন বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। তবে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনে আজ শনিবার (০৭ ডিসেম্বর) দেশটির পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে। খবর বিবিসি।
ভাষণে প্রেসিডেন্ট উইন আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেকটা মরিয়া হয়ে আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু এটা জনগণের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছিল। তাদের অসুবিধায় ফেলেছিল। ’
তিনি বলেন, ‘এই ঘোষণার ফলে যে কোনও আইনি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির দায় আমি এড়াতে পারি না। মানুষের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে যে আরেকবার সামরিক আইন জারি করা হবে কিনা; তবে আমি আপনাদের স্পষ্টভাবে এটা বলতে পারি যে, আরেকবার সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেওয়া হবে না।’
গত মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে হঠাৎই সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ইউন। এ কারণে দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা শুরু হয়।
প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন আইনপ্রণেতারা। যদিও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিক্ষোভের মুখে সামরিক আইন জারির ঘোষণা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এই ঘটনার পর থেকেই অভিশংসনের মুখোমুখি হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে শুক্রবার দফায় দফায় জরুরি বৈঠক করে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো।
এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) নেতা হান ডং-হুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউনের পক্ষে স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাওয়া এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তার আগাম পদত্যাগ অনিবার্য।’
৩০০ আসনের পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের প্রস্তাবটি পাশ করাতে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন। এর জন্য ইউনের দলের অন্তত আটজন সদস্যের ভোট প্রয়োজন হবে। বিরোধী নেতা লি জে-মিউং হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এতে জনগণের ক্রোধ এবং বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতি আরও বেড়ে যাবে।
পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত ইউনের মেয়াদ পূর্ণ হতে আরও দুই বছর বাকি। সামরিক আইন ঘোষণার আগে থেকেই প্রেসিডেন্ট ইউন দুর্বল জনপ্রিয়তা, দুর্নীতির অভিযোগ এবং বিরোধী নেতৃত্বাধীন আইনসভায় অসহায় অবস্থায় ছিলেন। এই পদক্ষেপ তার রাজনৈতিক অবস্থান আরও খারাপ করেছে।
বিজনেস আওয়ার/ ০৭ ডিসেম্বর / হাসান