ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার সবার পেছনে

  • পোস্ট হয়েছে : ৮ মিনিট আগে
  • 1

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে “উদীয়মান টাইগার” বলা হয়। কিন্তু বর্তমানে এই টাইগারের অবস্থা এখন অত্যন্ত নাজুক ও সংকটাপন্ন। এক সময় যা ছিল উদীয়মান সম্ভাবনা ও উন্নতির প্রতীক, তা এখন বিভিন্ন সংকট ও চ্যালেঞ্জের কারণে নিঃশেষিত অবস্থায় অবতীর্ণ।

সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, দুর্নীতি, বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা এবং সঠিক নীতির অভাবের কারণে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারেনি। এতে করে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে না এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও ক্রমাগত আস্থা হারিয়ে ফেলছেন।

দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়া শ্রীলংকা কিংবা অর্থনৈতিক সংকটে পর্যুদস্ত পাকিস্তানের শেয়ারবাজার গত বছর বেশ ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। এশিয়ার উদীয়মান শেয়ারবাজারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন এসেছে এ দুই দেশের শেয়ারবাজারে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের শেয়ারবাজার গত বছর বিভিন্ন সূচকের দিক থেকে সবার নিচে অবস্থান করছে।

শেয়ারবাজারের বয়স বিবেচনায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চেয়ে পুরনো হলেও, দেশের শেয়ারবাজারের লেনদেন এবং বাজার মূলধনের মাত্রা খুবই দুর্বল। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নামে পরিচালিত হচ্ছে। দীর্ঘ ছয় দশকের পথচলায় প্রত্যাশা ছিল দেশের শেয়ারবাজার পরিণত হবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

অন্যদিকে, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন এ ধরণের উদীয়মান অর্থনীতির দেশের শেয়ারবাজারগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জিডিপির তুলনায় বাজার মূলধনের দিক থেকেও নিচের সারিতে রয়েছে। ২০২৪ সালে বাজার মূলধন অনুযায়ী ভারতের বাজারের সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল হতাশাজনক।

দুর্বল কাঠামো এবং বিনিয়োগকারীদের অবিশ্বাসের কারণে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও, লেনদেনের পরিমাণও কম। গত বছর দেশের গড় লেনদেন ছিল ৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ, যেখানে ভারতের শেয়ারবাজারে গড় লেনদেন ছিল ২ হাজার ৩৩১ কোটি ডলার।

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিকোণ থেকেও বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি অনুকূল নয়। গত বছরে বিদেশী বিনিয়োগের অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ১ শতাংশ। এটি ভারত ও অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।

শেয়ারবাজারের মধ্যে বিভিন্ন অসঙ্গতি, দুর্নীতি এবং আইনি দুর্বলতার কারণে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস হারিয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। সরকারি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় শেয়ারবাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসিইসি বাজারের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। অতীতের হতাশাজনক ঘটনাবলী এবং এর পুনরাবৃত্তি নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এখনো বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/ ১৬ জানুয়ারি / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার সবার পেছনে

পোস্ট হয়েছে : ৮ মিনিট আগে

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে “উদীয়মান টাইগার” বলা হয়। কিন্তু বর্তমানে এই টাইগারের অবস্থা এখন অত্যন্ত নাজুক ও সংকটাপন্ন। এক সময় যা ছিল উদীয়মান সম্ভাবনা ও উন্নতির প্রতীক, তা এখন বিভিন্ন সংকট ও চ্যালেঞ্জের কারণে নিঃশেষিত অবস্থায় অবতীর্ণ।

সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, দুর্নীতি, বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা এবং সঠিক নীতির অভাবের কারণে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারেনি। এতে করে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে না এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও ক্রমাগত আস্থা হারিয়ে ফেলছেন।

দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়া শ্রীলংকা কিংবা অর্থনৈতিক সংকটে পর্যুদস্ত পাকিস্তানের শেয়ারবাজার গত বছর বেশ ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। এশিয়ার উদীয়মান শেয়ারবাজারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন এসেছে এ দুই দেশের শেয়ারবাজারে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের শেয়ারবাজার গত বছর বিভিন্ন সূচকের দিক থেকে সবার নিচে অবস্থান করছে।

শেয়ারবাজারের বয়স বিবেচনায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চেয়ে পুরনো হলেও, দেশের শেয়ারবাজারের লেনদেন এবং বাজার মূলধনের মাত্রা খুবই দুর্বল। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নামে পরিচালিত হচ্ছে। দীর্ঘ ছয় দশকের পথচলায় প্রত্যাশা ছিল দেশের শেয়ারবাজার পরিণত হবে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

অন্যদিকে, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন এ ধরণের উদীয়মান অর্থনীতির দেশের শেয়ারবাজারগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জিডিপির তুলনায় বাজার মূলধনের দিক থেকেও নিচের সারিতে রয়েছে। ২০২৪ সালে বাজার মূলধন অনুযায়ী ভারতের বাজারের সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল হতাশাজনক।

দুর্বল কাঠামো এবং বিনিয়োগকারীদের অবিশ্বাসের কারণে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও, লেনদেনের পরিমাণও কম। গত বছর দেশের গড় লেনদেন ছিল ৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ, যেখানে ভারতের শেয়ারবাজারে গড় লেনদেন ছিল ২ হাজার ৩৩১ কোটি ডলার।

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিকোণ থেকেও বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি অনুকূল নয়। গত বছরে বিদেশী বিনিয়োগের অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ১ শতাংশ। এটি ভারত ও অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।

শেয়ারবাজারের মধ্যে বিভিন্ন অসঙ্গতি, দুর্নীতি এবং আইনি দুর্বলতার কারণে বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস হারিয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। সরকারি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় শেয়ারবাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসিইসি বাজারের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। অতীতের হতাশাজনক ঘটনাবলী এবং এর পুনরাবৃত্তি নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এখনো বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/ ১৬ জানুয়ারি / এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: