বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম সিংড়াবাড়ীতে গড়ে উঠছে ‘সিরাজগঞ্জ আইটি অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’। এতে উচ্চগতির ইন্টারনেটের সহায়তায় এই অঞ্চলের হাজার হাজার তরুণদের দেওয়া হবে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ। ফলে দিনবদলের স্বপ্নে বিভোর এ অঞ্চলের তরুণ-তরুণীরা। এই প্রশিক্ষণে যেমন বেকারত্ব দূর হবে, একই সঙ্গে ফ্রিল্যান্সিং করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে নিজেরা স্বাবলম্বী ও দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করবে।
সরেজমিনে জানা যায়, ২০২০ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নে একনেক প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। এরপর ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল এই সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ থেকে ৪৪ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকার সিমেক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটির এরই মধ্যে ৪৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাইট ইঞ্জিনিয়ার মিলন হোসেন।
তিনি জানান, ন্যূনতম এসএসসি সমমান পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের আইটিতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করা, স্টার্ট আপে সহায়তা প্রদান ও আইটি, আইটিইএস সেক্টরে যুব সমাজের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করা প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য।
সিংড়াবাড়ী গ্রামে দুই একর জায়গা জুড়ে চারতলা বিশিষ্ট সিরাজগঞ্জ আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন ভবন নির্মাণ হবে। প্রথম তলায় থাকবে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, রিসিপশন, উপাসনা কক্ষ, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, সিকিউরিটি এবং সার্ভিল্যান্স সেন্টার, প্লাগ অ্যান্ড প্লে ফ্যাসিলিটিজ এবং ফুড কর্নার। দ্বিতীয় তলায় থাকবে স্টার্ট আপ স্পেস ও লার্নিং সেন্টার। তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় থাকবে ট্রেনিং, ইনকিউবেশন সেন্টার এবং মিটিং কক্ষ। এই প্রকল্পে যেমন তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে তেমনি উৎপাদনমুখী ও কর্মসংস্থানমুখী কাজ হবে। ফলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে।
আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় শিক্ষক মিল্টন সরকার বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামে আইটি সেন্টার স্থাপিত হচ্ছে এটি আমাদের জন্য সুখবর। আমাদের সন্তানদের মানবসম্পদে পরিণত করতে হলে তাদের আইটিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের আইটিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে উপযুক্ত সময়ে সরকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই সুযোগ এখন আমাদের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে।
অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কলেজ শিক্ষার্থী স্বপন সেখ বলেন, এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা ওয়েব ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, গ্রাফিক ডিজাইন, ডেটা এন্ট্রি, ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট শিখতে পারবো। ফলে আমাদের বেকারত্ব দূর হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুকুল হোসেন বলেন, প্রকল্পটি মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের জুনে। এরই মধ্যে ৪৮ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি নিদিষ্ট মেয়াদেই প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে। আর এটি নির্মিত হলে এখানকার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে। এটি একটি জাতীয় প্রকল্প। সারাদেশে ১১টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে সিরাজগঞ্জে একটি। এখানে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অল্প খরচে আইটি প্রশিক্ষণ পাবে। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারবে।
বিজনেস আওয়ার/ ২১ জানুয়ারি / কাউছার