স্পোর্টস ডেস্ক: ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে মোট ১৬ গোল হজম করেছিল নিউজিল্যান্ডের ক্লাব অকল্যান্ড সিটি। বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ১০-০ গোলে ও বেনফিকার কাছে ৬-০ ব্যবধানে হেরেছিল দলটি। গ্রুপ-সি তে অকল্যান্ডের শেষ ম্যাচ ছিল আর্জেন্টিনার ক্লাব বোকা জুনিয়র্সের বিপক্ষে।
প্রথম দুই ম্যাচের ফল দেখে ভক্তরা অনুমান করেছিলেন, বোকার বিপক্ষেও কিছুই করতে পারবে না অকল্যান্ড, শুধু গোল হজমের সংখ্যাটিই বাড়াবে।
কিন্তু না। মঙ্গলবার রাতে ভক্তদের অনুমানকে মিথ্যা বানিয়ে আর্জেন্টাইন ক্লাবের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে ফেলেছে অকল্যান্ড। যা এই মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্টে তাদের অংশগ্রহণকে অর্থবহ করে তুলেছে। অন্যদিকে ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে বোকা জুনিয়র্সকে।
মজার বিষয় হলো- অকল্যান্ডের হয়ে গোলটি করেন এক স্কুল শিক্ষক। ক্রিশ্চিয়ান গ্রে নামের ২৮ বছর বয়সী এই ফুটবলার শিক্ষার্থীদের শারীরিক শিক্ষা পড়ান। ম্যাচের ৫২ মিনিটে অকল্যান্ডকে স্বপ্নের মুহূর্তটি এনে দেন তিনি, দলে ফেরে ১-১ সমতায়।
ম্যাচ শেষে গ্রে বলেন, ‘আমি এসেছি একটি ছোট শহর থেকে, যেটি এখান থেকে অনেক দূরে এবং এই পরিবেশের থেকে একেবারেই আলাদা। তাই এটি কিছুটা স্বপ্নের মতোই লাগছে।’উল্লেখ্য, বোকা পুরো ম্যাচে ৪১টি শট নিয়েছিল, আর অকল্যান্ড সিটি মাত্র ৩টি।
আরও মজার বিষয় হলো- শিক্ষক ছাড়াও অকল্যান্ড সিটির স্কোয়াড আছেন ডেলিভারি ড্রাইভার ও কারিগর। নিজেদের ফুটবল স্বপ্ন বাস্তবায়নে আর্থিক ও পেশাগত অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন তারা। অনেকেই নিজের খরচে খেলতে এসেছেন ও চাকরির সঙ্গে ফুটবলকে ব্যালেন্স করার চেষ্টা করছেন। যা প্রতিপক্ষ দলে থাকা মিলিয়ন ডলারের পেশাদার খেলোয়াড়দের সঙ্গে বিশাল পার্থক্য তৈরি করে। অকল্যান্ড সিটি গ্রুপ পর্ব শেষ করেছে ১ পয়েন্ট নিয়ে। কিন্তু দলটির কোচ পল পসা মনে করেন, এই এক পয়েন্টই ছিল অনেক কিছু।
তিনি বলেন, ‘আমরা কী ধরনের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে খেলেছি, সেটা বোঝানোই কঠিন। আমাদের ক্লাব ছোট, কিন্তু হৃদয় অনেক বড়। আজকের এই পয়েন্ট আমাদের জন্য অনেক বড় পুরস্কার। বিশেষ করে যারা নেপথ্যে কাজ করছে তাদের জন্য।’
আগের বড় হারের পরেও কোচ পসা আশা হারাননি। বলেন, ‘আমি সব সময় বিশ্বাস করতাম, আমাদের একটা গোল করতেই হবে। আমরা এত পরিশ্রম করেছি। প্রথমার্ধে কিছুটা ভাগ্য সহায় ছিল, কিন্তু জানতাম গোল আসবেই।’
গ্রে’র জন্য এই টুর্নামেন্ট ছিল চার বছরের কঠোর পরিশ্রমের ফসল। তিনি বলেন, ‘এই সফরটা কঠিন ছিল। কিছু কঠিন ফলাফল হয়েছে, কিন্তু আমি দলের জন্য, ছেলেদের জন্য খুবই খুশি। আমার মনে হয় আমরা এটা প্রাপ্য।’
ক্লাব বিশ্বকাপ ছেড়ে এবার স্কুলে ফেরার পালা গ্রে’র। আবার শিক্ষার্থীদের পাঠদানের কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে তুলবেন তিনি। এটি যেন সাধারণ জীবনের দিকে তার সবচেয়ে অসাধারণ প্রত্যাবর্তন।
বিজনেস আওয়ার/ ২৫ জুন / রানা