বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম রাজনীতিক জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত করেছেন। গত মঙ্গলবার (২৪ জুন) প্রাথমিক নির্বাচনে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর বিরুদ্ধে বিস্ময়কর জয় ছিনিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন ৩৩ বছর বয়সী এই তরুণ নেতা।
আগামী নভেম্বরে চূড়ান্ত নির্বাচন হলে এবং মামদানি জয়ী হলে, তিনি হবেন নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র।
কে এই মামদানি?
জোহরান কোয়ামে মামদানি একজন ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্ট। তিনি উগান্ডার বিখ্যাত একাডেমিক মাহমুদ মামদানি ও ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের ছেলে। উগান্ডার কাম্পালায় জন্ম, কিন্তু সাত বছর বয়সে নিউইয়র্কে চলে আসেন। পড়াশোনা করেছেন আফ্রিকানা স্টাডিজে। রাজনীতিতে আসার আগে ছিলেন একটি হাউজিং সংগঠনের পরামর্শক, যেখানে তিনি গরিব পরিবারদের উচ্ছেদ ঠেকাতে সহায়তা করতেন।
২০২০ সালে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে কুইন্সের অ্যাস্টোরিয়া জেলা থেকে নির্বাচিত হন। চলতি বছর তিনি বিয়ে করেন সিরীয় শিল্পী রামা দুওয়াজিকে, যার কাজ দ্য নিউ ইয়র্কার, ওয়াশিংটন পোস্ট ও ভাইস-এর মতো মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
গাজা যুদ্ধ ও ফিলিস্তিন নিয়ে অবস্থান
গাজা যুদ্ধ ইস্যু মামদানির নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম কেন্দ্রে ছিল। তিনি গত অক্টোবরে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে।’ তিনি বিডিএস (বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার, নিষেধাজ্ঞা) আন্দোলনেরও একজন দৃঢ় সমর্থক।
ডিসেম্বরে মেহদি হাসানের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে আসলে আমি তাকে গ্রেফতার করবো।’
এছাড়া ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ স্লোগান থেকে নিজেকে দূরে রাখেননি, যদিও তা নিয়ে কট্টরপন্থি মহলে সমালোচনা ওঠে। মামদানি বলেন, একজন মুসলিম হিসেবে আমি জানি কীভাবে আরবি শব্দ বিকৃত করা হয়, অথচ এটি নিপীড়িতদের প্রতি সংহতির প্রতীক।
তাকে ইসলামবিদ্বেষী হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি জানিয়েছেন, তার সমালোচনাগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সরকারের বিরুদ্ধে, ইহুদিদের বিরুদ্ধে নয়।
কীভাবে জিতলেন মামদানি?
প্রথাগত জরিপগুলো বলছিল—কুয়োমো এগিয়ে। জুনের মাঝামাঝি মারিস্ট জরিপে দেখা যায়, কুয়োমোর সমর্থন ৩৮ শতাংশ, মামদানির ২৭ শথাংশ। কিন্তু র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিংয়ে শেষ পর্যন্ত মামদানি ল্যান্ডারের সমর্থকদের ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন।
তার প্রচারণা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, স্বল্প বাজেটের, স্বেচ্ছাসেবক-নির্ভর এবং তরুণ ভোটারকেন্দ্রিক। কুয়োমো বিপুল অর্থ ব্যয়ে প্রচার চালালেও মামদানির পক্ষে কাজ করেছে গণসংযোগ ও স্পষ্ট বার্তা।
নির্বাচনী অঙ্গীকার কী কী?
বিনামূল্যে বাস সেবা: ২০২৭ সালের মধ্যে নিউইয়র্কে সব বাসযাত্রা বিনামূল্যে করার প্রতিশ্রুতি।
বাসস্থান: ভাড়া বৃদ্ধি স্থগিত, ‘সোশ্যাল হাউজিং এজেন্সি’ গঠনের পরিকল্পনা।
খাদ্য নিরাপত্তা: প্রতিটি বরোতে একটি করে সরকারি মালিকানাধীন গ্রোসারি স্টোর।
শিক্ষা ও সেবা: কলেজ পর্যায়ে ফ্রি মিল, সার্বজনীন শিশুসেবা ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা।
কর সংস্কার: বার্ষিক আয় ১০ লাখ ডলারের বেশি আয়কারীদের জন্য ২ শতাংশ সারচার্জ, কর্পোরেট ট্যাক্স ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ করা।
তিনি পুলিশ খাতের বাজেট কমিয়ে ‘ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিটি সেফটি’ গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছেন, যা মানসিক স্বাস্থ্য, সংকট প্রতিক্রিয়া ও সামাজিক সহায়তায় কাজ করবে।
সামনে কী?
আগামী ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়া, যিনি ২০২১ সালে বড় ব্যবধানে হেরেছিলেন। নিউইয়র্ক শহরে ডেমোক্র্যাটদের ভোটার সংখ্যা রিপাবলিকানদের চেয়ে ছয়গুণ বেশি। ফলে মামদানির জয় প্রায় নিশ্চিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নিউইয়র্কে শেষ রিপাবলিকান মেয়র ছিলেন মাইকেল ব্লুমবার্গ, যিনি ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সূত্র: আল-জাজিরা
বিজনেস আওয়ার/ ২৬ জুন / হাসান