বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: সরকারি সব ভবনে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে ‘জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি’ হাতে নেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারি অবকাঠামোতে প্রায় ৩ হাজার সোলার সংযোগ স্থাপন করা হবে। সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি।
সব সরকারি ভবনে নয়, সারা দেশের ৪৪৮ সরকারি-বেসরকারি ভবনে পরীক্ষামূলকভাবে এই কর্মসূচি নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি। পাশাপাশি কর্মসূচিতে রক্ষণাবেক্ষণ নির্দেশিকা প্রদান করা, পলিসি গাইড লাইন করা, সোলার প্যানেলে কর মওকুফ করা, সোলার প্যানেল ক্রয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গ্রিন এনার্জি ফান্ডের ব্যবস্থা করা, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।
রোববার (২৭ জুলাই) সকালে ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচির নকশা, বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন কাঠামো বিষয়ে প্রস্তাবনা শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব প্রস্তাব করা হয়।
সিপিডির ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২৩ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় রুফটপ সোলার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সরকারের জ্বালানি নীতির আওতায় এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। জ্বালানি নীতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ ও ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির উত্তরণ করা হবে।
রুফটপ সোলার এনার্জি কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের এই উদ্যোগকে আমরা সতর্কভাবে স্বাগত জানাচ্ছি। সতর্কতার কারণ হিসেবে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এর আগে রাজধানীর বাসা বাড়িতে রুফটপ কর্মসূচির অধীনে; বাসা বাড়ির ছাদে সোলার লাগানোর একটি বাধ্যবাধকতা এখনো রয়েছে। বাসা বাড়িতে সোলার লাগানোর এক ধরনের লোক দেখানোর কাজ হয়েছে। এর ফলে সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে মানুষের মনে স্থায়ী নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে এই কর্মসূচির সুবিধাভোগী হয়েছেন অনেকে। সেই জায়গায় যেন এই কর্মসূচিটি না যায় সে জন্য শুরু থেকেই আমাদের সতর্ক থাকা দরকার।
আমাদের হাতে পোড়া ক্ষতটি লেগে আছে। সেই ক্ষত থেকে উত্তরণ চাই। রুফটপ কর্মসূচিকে একটি শক্তিশালী কর্মসূচি হিসেবে দেখতে চাই, যোগ করেন তিনি।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিগত সরকারের নেওয়া ভুল নীতির কারণে জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। সংকটের ধারাবাহিকতায় এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ যথেষ্ট কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, সম্ভবত অন্তর্বর্তী সরকার তার সময়কালের ভেতরে এই কার্যক্রমটির একটি সমাপনী দেখতে চান। এজন্য তাড়াহুড়ো করে একটি সমাপনী টানতে চাইছেন। এটি ২০২৫ এর ডিসেম্বরে সমাপনীর বিষয় নয়। এটি দীর্ঘব্যাপী। এত বড় কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে করলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আবার দেখা দেবে। সরকারের ক্রয় কর্মসূচিতে ত্রুটি থাকতে পারে।
ত্রুটিমুক্তভাবে কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সরকারি প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ার যাতে কোনোভাবে নয়ছয় করে আবার কারও যাতে পকেট ভারী করার উদ্যোগ এটি না হয়।
মূল প্রবন্ধে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি বলেন, আমরা যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে এগোতে পারি তাহলে কর্মসূচির সুবিধা সবাই পাবে।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্য মো. নাসির উদ্দিন, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-স্রেডার পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের প্রধান প্রকৌশলী সরদার মোহাম্মদ জাফরুল হাসান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, এটি অনেক বড় সাহসী ও উচ্চবিলাসী উদ্যোগ। এটি আগের মতো যেন নষ্ট না হয়।
নবায়যোগ্য জ্বালানি এবং গবেষণা উন্নয়ন পরিদপ্তরের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, রেডিয়েশনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। যে সব সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে তার সবগুলোই আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। আগামী দিনে এ বিষয়ে আরও কয়েকটি পরিপত্র জারি হবে। তখন বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে।
তিনি বলেন, সরকারি ছাদে সোলার প্যানেল বসলে তার রক্ষণাবেক্ষণ ওই প্রতিষ্ঠানই করবে, এমন একটি বিষয় আলোচনায় রয়েছে। ছাদে সোলার করলে আমাদের জমি নষ্ট হবে না। আবার আমরা অনেক কম টাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবো।
স্রেডার পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, বাসা বাড়িতে সোলার বসানোর যে কার্যক্রম নেওয়া হয়েছিল সেটা কোনো কাজে দেয়নি। কেননা সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। এই কর্মসূচিতে বাধ্যতামূলক রাখার প্রয়োজন আছে। চলতি বছরের মধ্যে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অর্জন অনেক কঠিন হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা একত্রে সব জায়গায় করবো না। পাইলটিংটা খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমরা চেষ্টা করবো অপেক্স মডেলেই থাকতে।
সরদার মোহাম্মদ জাফরুল হাসান বলেন, এই শক্তিটা যখন আমাদের গ্রিডে আসবে তখন সেটা রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের চ্যালেঞ্জের। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করায় আমরা নানা উদ্যোগ নেবো। আশা করছি সোলারের মাধ্যমে যে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে সেটাও গ্রিডে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই অর্থায়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক খোন্দকার মোর্শেদ মিল্লাত বলেন, রুফটফ সোলারের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সাহায্য করছে।
বিজনেস আওয়ার/ ২৭ জুলাই / কাওছার