ঢাকা , সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন

  • পোস্ট হয়েছে : ৫ মিনিট আগে
  • 1

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক:বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের দুই বড় অর্থনৈতিক অংশীদারের মধ্যে মাসব্যাপী চলা অচলাবস্থার অবসান হলো। স্কটল্যান্ডে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লেয়েনের মধ্যকার আলোচনায় সব ইইউ পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে। খবর বিবিসির।

এর আগে ট্রাম্প ৩০ শতাংশ আমদানি করারোপের হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর শূন্য শতাংশ শুল্ক রেখে ইইউকে তার বাজার যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

ভন দের লেয়েন এই চুক্তির প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি দুই সহযোগীর মধ্যে স্থিতিশীলতা আনবে।

ট্রাম্প আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ও বিশ্ব অর্থনীতি পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অংশীদারদের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করেছেন।

ইইউর মতো যুক্তরাজ্য, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনামের সঙ্গেও শুল্ক চুক্তি করেছেন ট্রাম্প। যদিও ৯০ দিনে ৯০ চুক্তির লক্ষ্য তিনি অর্জন করতে পারেননি। রোববার ট্রাম্প ও ভন দের লেয়েনের মধ্যকার আলোচনার পর চুক্তির বিষয়টি ঘোষণা করা হয়।

ট্রাম্প এখন পাঁচদিনের সফরে স্কটল্যান্ড আছেন। এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আমরা একটি সমঝোতায় পৌঁছেছি। এটা সবার জন্য ভালো একটি চুক্তি। এটা আমাদের আরও ঘনিষ্ঠ করবে।

ভন দের লেয়েন বলেন, কঠিন আলোচনার পর বড় চুক্তি হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকান সামরিক উপকরণ ক্রয়সহ যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বাড়াবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি খাতেও তারা সাড়ে ৭০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে।

আগামী তিন বছরে আমেরিকান এলএনজি, তেল ও পরমাণু জ্বালানিতে বিনিয়োগের ফলে রাশিয়ার জ্বালানি শক্তির ওপর ইউরোপের নির্ভরশীলতা কমবে বলে উল্লেখ করেছেন ভন দের লেয়েন।

কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক পণ্য, কিছু কৃষি পণ্য এবং এয়ারক্রাফট এবং এর পার্টসসহ কিছু পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক দেওয়া হয়নি। তবে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

ভন দের লেয়েন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি একজন কঠিন আলোচক, কিন্তু তিনি একজন ডিলমেকার।

দুপক্ষই এই চুক্তিকে তাদের জন্য বিজয় ভাবতে পারেন। কারণ ইইউ এর জন্য শুল্ক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারতো। আবার যুক্তরাজ্যের মতো ১০ শতাংশ শুল্ক হয়নি। তবে জাপানের মতো ১৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারিত হয়েছে ইইউর জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারের মতো শুল্ক আদায় হবে। পাশাপাশি শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এখন যুক্তরাষ্ট্রে আসার কথা। এটা পরিষ্কার যে ট্রাম্প ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য চুক্তি করেছেন। আর ভন দের লেয়েন বলেছেন, বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুন:ভারসাম্য এসেছে।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর মধ্যে বাণিজ্য ছিলো প্রায় ৯৭৬ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ছিলো ৬০৬ বিলিয়ন ডলার।

এই ঘাটতিই হলো ট্রাম্পের মূল পয়েন্ট। তিনি বলেছেন, এই বাণিজ্য সম্পর্কের মানে হলো যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ইউরোপের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে শুল্ক প্রয়োগ করলে এই শুল্ক স্পেনের ওষধ শিল্প থেকে শুরু করে ইটালিয়ান লেদার, জার্মানি ইলেকট্রনিক্স ও ফ্রান্সের চিজের ওপর প্রয়োগ হতো।

ইইউ বলেছিল তারাও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বিশেষ করে গাড়ির যন্ত্রাংশ, বোয়িং বিমান ও গরুর মাংসের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউরোপের অন্য নেতারা অবশ্য নতুন চুক্তিকে সতর্কতার সাথে স্বাগত জানিয়েছেন।

আইরিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগের চেয়ে উচ্চ হারে শুল্ক বাণিজ্যকে ব্যয়বহুল ও চ্যালেঞ্জিং করে তুলবে।

ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে আয়ারল্যান্ড রফতানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বেশি নির্ভরশীল।

জার্মানির চ্যান্সেলর সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন বাণিজ্য সংঘাত জার্মানিকে কঠিন আঘাত করবে।

তিনি বলেন, স্থিতিশীল ও অনুমেয় বাণিজ্য সম্পর্ক ব্যবসায়ী ক্রেতাসহ সবার জন্য সমান সুবিধাজনক।

ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। অপরদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সোমবারই ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করার কথা। ট্রাম্প মঙ্গলবার অ্যাবারডিনে থাকবেন। সেখানে তার পরিবারের আরেকটি গলফ কোর্স আছে এবং এটি আগামী মাসে উদ্বোধন হবে।

বিজনেস আওয়ার/ ২৮ জুলাই / হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন

পোস্ট হয়েছে : ৫ মিনিট আগে

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক:বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের দুই বড় অর্থনৈতিক অংশীদারের মধ্যে মাসব্যাপী চলা অচলাবস্থার অবসান হলো। স্কটল্যান্ডে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লেয়েনের মধ্যকার আলোচনায় সব ইইউ পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে। খবর বিবিসির।

এর আগে ট্রাম্প ৩০ শতাংশ আমদানি করারোপের হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর শূন্য শতাংশ শুল্ক রেখে ইইউকে তার বাজার যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

ভন দের লেয়েন এই চুক্তির প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি দুই সহযোগীর মধ্যে স্থিতিশীলতা আনবে।

ট্রাম্প আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ও বিশ্ব অর্থনীতি পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অংশীদারদের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করেছেন।

ইইউর মতো যুক্তরাজ্য, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনামের সঙ্গেও শুল্ক চুক্তি করেছেন ট্রাম্প। যদিও ৯০ দিনে ৯০ চুক্তির লক্ষ্য তিনি অর্জন করতে পারেননি। রোববার ট্রাম্প ও ভন দের লেয়েনের মধ্যকার আলোচনার পর চুক্তির বিষয়টি ঘোষণা করা হয়।

ট্রাম্প এখন পাঁচদিনের সফরে স্কটল্যান্ড আছেন। এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আমরা একটি সমঝোতায় পৌঁছেছি। এটা সবার জন্য ভালো একটি চুক্তি। এটা আমাদের আরও ঘনিষ্ঠ করবে।

ভন দের লেয়েন বলেন, কঠিন আলোচনার পর বড় চুক্তি হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকান সামরিক উপকরণ ক্রয়সহ যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বাড়াবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি খাতেও তারা সাড়ে ৭০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে।

আগামী তিন বছরে আমেরিকান এলএনজি, তেল ও পরমাণু জ্বালানিতে বিনিয়োগের ফলে রাশিয়ার জ্বালানি শক্তির ওপর ইউরোপের নির্ভরশীলতা কমবে বলে উল্লেখ করেছেন ভন দের লেয়েন।

কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিক পণ্য, কিছু কৃষি পণ্য এবং এয়ারক্রাফট এবং এর পার্টসসহ কিছু পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক দেওয়া হয়নি। তবে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

ভন দের লেয়েন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি একজন কঠিন আলোচক, কিন্তু তিনি একজন ডিলমেকার।

দুপক্ষই এই চুক্তিকে তাদের জন্য বিজয় ভাবতে পারেন। কারণ ইইউ এর জন্য শুল্ক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারতো। আবার যুক্তরাজ্যের মতো ১০ শতাংশ শুল্ক হয়নি। তবে জাপানের মতো ১৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারিত হয়েছে ইইউর জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারের মতো শুল্ক আদায় হবে। পাশাপাশি শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এখন যুক্তরাষ্ট্রে আসার কথা। এটা পরিষ্কার যে ট্রাম্প ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য চুক্তি করেছেন। আর ভন দের লেয়েন বলেছেন, বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুন:ভারসাম্য এসেছে।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর মধ্যে বাণিজ্য ছিলো প্রায় ৯৭৬ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ছিলো ৬০৬ বিলিয়ন ডলার।

এই ঘাটতিই হলো ট্রাম্পের মূল পয়েন্ট। তিনি বলেছেন, এই বাণিজ্য সম্পর্কের মানে হলো যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ইউরোপের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে শুল্ক প্রয়োগ করলে এই শুল্ক স্পেনের ওষধ শিল্প থেকে শুরু করে ইটালিয়ান লেদার, জার্মানি ইলেকট্রনিক্স ও ফ্রান্সের চিজের ওপর প্রয়োগ হতো।

ইইউ বলেছিল তারাও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বিশেষ করে গাড়ির যন্ত্রাংশ, বোয়িং বিমান ও গরুর মাংসের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউরোপের অন্য নেতারা অবশ্য নতুন চুক্তিকে সতর্কতার সাথে স্বাগত জানিয়েছেন।

আইরিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগের চেয়ে উচ্চ হারে শুল্ক বাণিজ্যকে ব্যয়বহুল ও চ্যালেঞ্জিং করে তুলবে।

ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে আয়ারল্যান্ড রফতানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বেশি নির্ভরশীল।

জার্মানির চ্যান্সেলর সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন বাণিজ্য সংঘাত জার্মানিকে কঠিন আঘাত করবে।

তিনি বলেন, স্থিতিশীল ও অনুমেয় বাণিজ্য সম্পর্ক ব্যবসায়ী ক্রেতাসহ সবার জন্য সমান সুবিধাজনক।

ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। অপরদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সোমবারই ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করার কথা। ট্রাম্প মঙ্গলবার অ্যাবারডিনে থাকবেন। সেখানে তার পরিবারের আরেকটি গলফ কোর্স আছে এবং এটি আগামী মাসে উদ্বোধন হবে।

বিজনেস আওয়ার/ ২৮ জুলাই / হাসান

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: