ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডিএসই’র নতুন পদক্ষেপ: বন্ধ ৩০ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ

  • পোস্ট হয়েছে : এই মাত্র
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের কারসাজি ও গুজব ঠেকাতে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকা ৩০টি কোম্পানির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ডিএসই। এই প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজার থেকে ক্যাশ সংগ্রহ করলেও তাদের উৎপাদন কার্যক্রম এখন বন্ধ। এই তালিকায় দুটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিও রয়েছে। ডিএসই’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই তালিকাটি শেয়ারবাজারের ইতিহাসে প্রথম।

ডিএসই’র এই উদ্যোগটির প্রধান লক্ষ্য হলো বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা। এসব বন্ধ কোম্পানিকে নিয়ে প্রায়শই মিথ্যা খবর ছড়িয়ে শেয়ারের দাম বাড়ানো বা কমানো হয়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। এই তালিকার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোর প্রকৃত অবস্থা জানতে পারবেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন।

তালিকার নতুন সংযোজন হলো হ্যামিদ ফ্যাব্রিক্স, যারা ২২ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, গত দুই হিসাব বছর ধরে অপর্যাপ্ত গ্যাস চাপের কারণে তাদের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সিএনজি ও এলএনজি ব্যবহার করেও কোনো লাভ হয়নি। তাই লেবার আইন ২০০৬ এবং বাংলাদেশ লেবার রুলস ২০১৫ অনুযায়ী, ২২ জুন থেকে কারখানাটি ‘লে-অফ’ ঘোষণা করা হয়েছে। গ্যাস সংকট সমাধান হলে পুনরায় উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এর আগে ১২ আগস্ট রহিমা ফুড কর্পোরেশনও তাদের নারকেল তেল এবং কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্টের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। কোম্পানিটি জানায়, বাজারে কাঙ্ক্ষিত অবস্থান তৈরি করতে না পারায় তারা সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। এটিকে তারা একটি শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখছে এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের জন্য বিকল্প কৌশল খুঁজছে।

ডিএসই’র প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, বেশিরভাগ কোম্পানি ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বন্ধ হয়েছে। তবে একটি কোম্পানি ২০০২ সাল থেকে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে। বিএসইসি-এর নির্দেশে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকায় বারাকা পাওয়ার এবং জাহীণ স্পিনিং মিলস-কে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ডিএসই’র একজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক জানান, এই তালিকা প্রকাশের মূল উদ্দেশ্যই হলো বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা, কারণ তারা কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা না জেনে গুজবের শিকার হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হন। তিনি আরও বলেন, এখন যেহেতু প্রকৃত অবস্থা প্রকাশিত হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা নিজেদের দায়িত্বে এবং ঝুঁকি সম্পর্কে জেনে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

ডিএসই’র প্রকাশিত বন্ধ কোম্পানির তালিকায় রয়েছে— অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, অ্যারামিট সিমেন্ট, আজিজ পাইপস, বারাকা পাওয়ার, দুলামিয়া কটন, এমারাল্ড অয়েল, ফ্যামিলি টেক্স (বিডি), জিবিবি পাওয়ার, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজ, মেট্রো স্পিনিং মিলস, মিথুন নিটিং, নিউ লাইন ক্লথিংস, নর্দার্ন জুট, নুরানি ডায়িং, প্রাইম টেক্সটাইল, আরএসআরএম, রেজেন্ট টেক্সটাইল, সুহ্নিদ ইন্ডাস্ট্রিজ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, টাং হাই নিটিং, ইয়াকিন পলিমার, জাহিন স্পিনিং মিলস এবং দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান—শ্যাম্পুর সুগার মিলস ও উসমানিয়া গ্লাস শীট ফ্যাক্টরিজ।

বিজনেস আওয়ার/ ২৩ সেপ্টেম্বর /  এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সর্বাধিক পঠিত

ডিএসই’র নতুন পদক্ষেপ: বন্ধ ৩০ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ

পোস্ট হয়েছে : এই মাত্র

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের কারসাজি ও গুজব ঠেকাতে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকা ৩০টি কোম্পানির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ডিএসই। এই প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজার থেকে ক্যাশ সংগ্রহ করলেও তাদের উৎপাদন কার্যক্রম এখন বন্ধ। এই তালিকায় দুটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিও রয়েছে। ডিএসই’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই তালিকাটি শেয়ারবাজারের ইতিহাসে প্রথম।

ডিএসই’র এই উদ্যোগটির প্রধান লক্ষ্য হলো বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা। এসব বন্ধ কোম্পানিকে নিয়ে প্রায়শই মিথ্যা খবর ছড়িয়ে শেয়ারের দাম বাড়ানো বা কমানো হয়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। এই তালিকার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোর প্রকৃত অবস্থা জানতে পারবেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন।

তালিকার নতুন সংযোজন হলো হ্যামিদ ফ্যাব্রিক্স, যারা ২২ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, গত দুই হিসাব বছর ধরে অপর্যাপ্ত গ্যাস চাপের কারণে তাদের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সিএনজি ও এলএনজি ব্যবহার করেও কোনো লাভ হয়নি। তাই লেবার আইন ২০০৬ এবং বাংলাদেশ লেবার রুলস ২০১৫ অনুযায়ী, ২২ জুন থেকে কারখানাটি ‘লে-অফ’ ঘোষণা করা হয়েছে। গ্যাস সংকট সমাধান হলে পুনরায় উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এর আগে ১২ আগস্ট রহিমা ফুড কর্পোরেশনও তাদের নারকেল তেল এবং কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্টের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। কোম্পানিটি জানায়, বাজারে কাঙ্ক্ষিত অবস্থান তৈরি করতে না পারায় তারা সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। এটিকে তারা একটি শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখছে এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের জন্য বিকল্প কৌশল খুঁজছে।

ডিএসই’র প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, বেশিরভাগ কোম্পানি ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বন্ধ হয়েছে। তবে একটি কোম্পানি ২০০২ সাল থেকে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে। বিএসইসি-এর নির্দেশে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকায় বারাকা পাওয়ার এবং জাহীণ স্পিনিং মিলস-কে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ডিএসই’র একজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক জানান, এই তালিকা প্রকাশের মূল উদ্দেশ্যই হলো বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা, কারণ তারা কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা না জেনে গুজবের শিকার হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হন। তিনি আরও বলেন, এখন যেহেতু প্রকৃত অবস্থা প্রকাশিত হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা নিজেদের দায়িত্বে এবং ঝুঁকি সম্পর্কে জেনে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

ডিএসই’র প্রকাশিত বন্ধ কোম্পানির তালিকায় রয়েছে— অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, অ্যারামিট সিমেন্ট, আজিজ পাইপস, বারাকা পাওয়ার, দুলামিয়া কটন, এমারাল্ড অয়েল, ফ্যামিলি টেক্স (বিডি), জিবিবি পাওয়ার, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পিইটি ইন্ডাস্ট্রিজ, মেট্রো স্পিনিং মিলস, মিথুন নিটিং, নিউ লাইন ক্লথিংস, নর্দার্ন জুট, নুরানি ডায়িং, প্রাইম টেক্সটাইল, আরএসআরএম, রেজেন্ট টেক্সটাইল, সুহ্নিদ ইন্ডাস্ট্রিজ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, টাং হাই নিটিং, ইয়াকিন পলিমার, জাহিন স্পিনিং মিলস এবং দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান—শ্যাম্পুর সুগার মিলস ও উসমানিয়া গ্লাস শীট ফ্যাক্টরিজ।

বিজনেস আওয়ার/ ২৩ সেপ্টেম্বর /  এ এইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: