ঢাকা , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক খবরেই মিউচ্যুয়াল ফান্ডে লাল বাতি!

  • পোস্ট হয়েছে : ০৬:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০২০
  • 1

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্ত্যাব্যক্তিদের নানা আশাবাদ এবং সম্পদ মুল্য ও মুনাফায় উল্লম্ফনের কারণে মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশা তৈরি হয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর খাতটিতে নতুন গতি ফিরে আসে। ঊর্ধ্বমুখী হয় ফান্ডগুলোর লেনদেন ও ইউনিট দর। কিন্তু তদন্ত কমিটি গঠনের খবরে খাতটির লেনদেন ও দরে বড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। খাতটির ৩৭টি ফান্ডেই লাল বাতি জ্বলে উঠেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার চাঙ্গা হওয়ায় মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সম্পদ মূল্যে বেশ উল্লম্ফন ঘটেছে। ফান্ডগুলোর আয়ও আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারাও মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে বিনিয়োগাকারীদের নানা আশার কথা শুনিয়েছেন। এসব কারণে বিনিয়োগকারীরা মিউচুয়াল ফান্ডে আকৃষ্ট হয়ে বিনিয়োগে ফিরেছেন। কিন্তু খাতটিতে চাঙ্গাভাব ফিরতে না ফিরতেই তদন্ত কমিটি গঠনের খবর একদিকে বড় বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে, অন্যদিকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে। এতে দেখা যায়, সপ্তাহের প্রথমদিকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ব্যাপক চাহিদা থাকলে শেষ তিন কার্যদিবসে চাহিদায় ব্যাপক ভাটা পড়ে। সপ্তাহের শেষ তিন কার্যদিবসে ৩৭টি ফান্ডের দরই পতনে থাকে। এ সময়ে বেশিরভাগ ফান্ডের দর কমেছে ১৮ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে সপ্তাহের প্রথমদিকে যারা ফান্ডগুলোর ইউনিট কিনেছেন, তারা এখন ১৮ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ লোকসানে পড়েছেন।

এর আগে ২০১০ সালের পুঁজিবাজারে ধস এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা ও লোভের কারণে মিউচুয়াল ফান্ড খাতে চরম আস্থাহীনতা নেমে আসে। দীর্ঘদিন অবহেলা ও অনাগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে আসে। ফলে পুঁজিবাজারে নতুন করে মিউচ্যুয়াল ফান্ড আসার পথও রুদ্ধ হয়ে যায়। অধ্যাপক শিবলী রুবাইত ইসলামের নেতৃত্বে নতুন কমিশন গঠনের পর বাজারে চাঙ্গাভাব ফিরে এলে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সম্পদমূল্যও উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের লোকসান কাটিয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ফান্ডগুলো বড় আকারের মুনাফাও দেখায়। এই সময়ে ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে সিংহভাগ ৩২টি ফান্ড মুনাফায় ফিরে। বাকিগুলোও লোকসান কাটিয়ে মুনাফার পথে হাঁটতে দেখা যায়।

এদিকে, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বর্তমান কমিশন নতুন করে উদ্যোগ নেয়। মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর স্বচ্চতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফান্ডগুলোর বিনিয়োগ ও আর্থিক তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৬ সেপ্টেম্বর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিশন। মিউচুয়াল ফান্ডকে ভাইব্রেন্ট বা চাঙ্গা করতে অক্টোবর মাসে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান, সদস্যরা এবং কমিশনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সভা-অনুষ্ঠানে নানা সংস্কারের কথা তুলে ধরে এখাতে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীদের অনুপ্রাণিত করেন। ফলে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ অবহেলায় থাকা এখাতে চাঙ্গাভাব ফিরে আসে এবং ফান্ডগুলোর দর ও লেনদেনে বড় উল্লম্ফনের দেখা মিলে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ অক্টোবর কমিশনের সঙ্গে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে ব্যাংকের এফডিআরের মতো আস্থাশীল করতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়। গত ২৭ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম জানান, যেসব বিনিয়োগকারীর পুঁজিবাজার সম্পর্কে ধারণা কম, তাদের জন্য বিকল্প বিনিয়োগের জায়গা হচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ড। তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে, সেগুলোর বছরে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ডিভিডেন্ড দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। গত ১১ অক্টোবর বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে এসইসির চেয়ারম্যান বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডকে এফডিআরের বিকল্প করা হবে। যাতে এখাতে বিনিয়োগ নিরাপদ ও লাভজনক হয়।

পরেরদিন কমিশনের নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বর্তমান কমিশন এখাতে রিফর্মের কাজ করছে। তিনি বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড এক সময় বেশ ভালো ছিল। এখন তা নেই। এজন্য খাতটি ডেভেলপ করা জরুরি।

বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের সমাপনী দিনে দুই কমিশনার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ভবিষ্যত সম্ভাবনার কথা বলেন এবং এখাতে প্রযোজনীয় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩২টি ফান্ড মুনাফায় ফিরে। এরমধ্যে ১৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটপ্রতি মুনাফা এক টাকার বেশি হয়। এতে দেখা যায়, প্রথম প্রান্তিকেই ১৭টি ফান্ড ১০ শতাংশের বেশি ডিভিডেন্ড দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করে। অবশিষ্ট ১৫টি ফান্ডেরও প্রথম প্রান্তিকে অন্তত ৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেয়ার সক্ষমতা তৈরি হয়। বাকি লোকসানে থাকা ৫টি ফান্ডও মুনাফার পথে এগুতে দেখা যায়। অর্থাৎ করোনা মহামারিতেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মুনাফায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়। যা খাতটিতে বিনিয়োগকারীদের কাছে ভবিষ্যত আশা জাগানোর বার্তা দেয়।

এসব কারণে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের বাড়তি ঝোঁক তৈরি হয়। প্রতিদিন ফান্ডগুলোর দর ও লেনদেন ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। এক সময়ে অনাগ্রহ ও তলানিতে থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ড সাম্প্রতককালে লেনদেন ও দর বৃদ্ধির শীর্ষ স্থানে উঠে আসে। ধীরে ধীরে ফান্ডগুলোও অভিহিত মূল্য অতিক্রম করতে থাকে। যদিও সিংহভাগ ফান্ড এখনো অভিহিত মূল্যের নিচে পড়ে রয়েছে এবং সম্পদ মূ্ল্যের অনেক নিচে লেনদেন হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর খাতটিতে যখন গতি ফিরতে শুরু করেছে, ঠিক সে সময় তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের হতবাক করে দিয়েছে। এতে একদিকে বড় বিনিয়োগকারীরা নিষিক্র হয়ে পড়েছে, অন্যদিক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আতিঙ্কিত হয়ে পড়েছে। যোগান ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য না থাকায় ফান্ডগুলো ব্যাপক পতনে রয়েছে। সর্বশেষ তিন কার্যদিবসে ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দরই একযোগে কমেছে। এ সময়ে বেশিরভাগ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর কমেছ ১৮ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বলেছেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ৪ জন বিনিয়োগকারীর সিরিয়াল ট্রেডিংয়ের প্রমান মিলেছে। তাদেরকে সাবধান করার জন্যই মিউচ্যুয়াল ফান্ডে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই প্রসংগে তিনি বলেন, এর আগে ইন্সুরেন্স খাতেও কয়েকজন বিনিয়োগকারীর অস্বাভাবাবিক লেনদেন দেখা গিয়েছিল। তাদেরকেও ডেকে সাবধান করা হয়েছে। তিনি অনুষ্ঠানটিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও ইন্সুরেন্স খাতের নানা দিক ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

বিজনেস আওয়ার/২১ নভেম্বর, ২০২০/এসএম

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

এক খবরেই মিউচ্যুয়াল ফান্ডে লাল বাতি!

পোস্ট হয়েছে : ০৬:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্ত্যাব্যক্তিদের নানা আশাবাদ এবং সম্পদ মুল্য ও মুনাফায় উল্লম্ফনের কারণে মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশা তৈরি হয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর খাতটিতে নতুন গতি ফিরে আসে। ঊর্ধ্বমুখী হয় ফান্ডগুলোর লেনদেন ও ইউনিট দর। কিন্তু তদন্ত কমিটি গঠনের খবরে খাতটির লেনদেন ও দরে বড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। খাতটির ৩৭টি ফান্ডেই লাল বাতি জ্বলে উঠেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার চাঙ্গা হওয়ায় মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সম্পদ মূল্যে বেশ উল্লম্ফন ঘটেছে। ফান্ডগুলোর আয়ও আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারাও মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে বিনিয়োগাকারীদের নানা আশার কথা শুনিয়েছেন। এসব কারণে বিনিয়োগকারীরা মিউচুয়াল ফান্ডে আকৃষ্ট হয়ে বিনিয়োগে ফিরেছেন। কিন্তু খাতটিতে চাঙ্গাভাব ফিরতে না ফিরতেই তদন্ত কমিটি গঠনের খবর একদিকে বড় বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে, অন্যদিকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে। এতে দেখা যায়, সপ্তাহের প্রথমদিকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ব্যাপক চাহিদা থাকলে শেষ তিন কার্যদিবসে চাহিদায় ব্যাপক ভাটা পড়ে। সপ্তাহের শেষ তিন কার্যদিবসে ৩৭টি ফান্ডের দরই পতনে থাকে। এ সময়ে বেশিরভাগ ফান্ডের দর কমেছে ১৮ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে সপ্তাহের প্রথমদিকে যারা ফান্ডগুলোর ইউনিট কিনেছেন, তারা এখন ১৮ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ লোকসানে পড়েছেন।

এর আগে ২০১০ সালের পুঁজিবাজারে ধস এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা ও লোভের কারণে মিউচুয়াল ফান্ড খাতে চরম আস্থাহীনতা নেমে আসে। দীর্ঘদিন অবহেলা ও অনাগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে আসে। ফলে পুঁজিবাজারে নতুন করে মিউচ্যুয়াল ফান্ড আসার পথও রুদ্ধ হয়ে যায়। অধ্যাপক শিবলী রুবাইত ইসলামের নেতৃত্বে নতুন কমিশন গঠনের পর বাজারে চাঙ্গাভাব ফিরে এলে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সম্পদমূল্যও উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের লোকসান কাটিয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ফান্ডগুলো বড় আকারের মুনাফাও দেখায়। এই সময়ে ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে সিংহভাগ ৩২টি ফান্ড মুনাফায় ফিরে। বাকিগুলোও লোকসান কাটিয়ে মুনাফার পথে হাঁটতে দেখা যায়।

এদিকে, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বর্তমান কমিশন নতুন করে উদ্যোগ নেয়। মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর স্বচ্চতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফান্ডগুলোর বিনিয়োগ ও আর্থিক তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৬ সেপ্টেম্বর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিশন। মিউচুয়াল ফান্ডকে ভাইব্রেন্ট বা চাঙ্গা করতে অক্টোবর মাসে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান, সদস্যরা এবং কমিশনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সভা-অনুষ্ঠানে নানা সংস্কারের কথা তুলে ধরে এখাতে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীদের অনুপ্রাণিত করেন। ফলে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ অবহেলায় থাকা এখাতে চাঙ্গাভাব ফিরে আসে এবং ফান্ডগুলোর দর ও লেনদেনে বড় উল্লম্ফনের দেখা মিলে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ অক্টোবর কমিশনের সঙ্গে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে ব্যাংকের এফডিআরের মতো আস্থাশীল করতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়। গত ২৭ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম জানান, যেসব বিনিয়োগকারীর পুঁজিবাজার সম্পর্কে ধারণা কম, তাদের জন্য বিকল্প বিনিয়োগের জায়গা হচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ড। তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে, সেগুলোর বছরে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ডিভিডেন্ড দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। গত ১১ অক্টোবর বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে এসইসির চেয়ারম্যান বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডকে এফডিআরের বিকল্প করা হবে। যাতে এখাতে বিনিয়োগ নিরাপদ ও লাভজনক হয়।

পরেরদিন কমিশনের নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বর্তমান কমিশন এখাতে রিফর্মের কাজ করছে। তিনি বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড এক সময় বেশ ভালো ছিল। এখন তা নেই। এজন্য খাতটি ডেভেলপ করা জরুরি।

বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের সমাপনী দিনে দুই কমিশনার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ভবিষ্যত সম্ভাবনার কথা বলেন এবং এখাতে প্রযোজনীয় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩২টি ফান্ড মুনাফায় ফিরে। এরমধ্যে ১৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটপ্রতি মুনাফা এক টাকার বেশি হয়। এতে দেখা যায়, প্রথম প্রান্তিকেই ১৭টি ফান্ড ১০ শতাংশের বেশি ডিভিডেন্ড দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করে। অবশিষ্ট ১৫টি ফান্ডেরও প্রথম প্রান্তিকে অন্তত ৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেয়ার সক্ষমতা তৈরি হয়। বাকি লোকসানে থাকা ৫টি ফান্ডও মুনাফার পথে এগুতে দেখা যায়। অর্থাৎ করোনা মহামারিতেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মুনাফায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়। যা খাতটিতে বিনিয়োগকারীদের কাছে ভবিষ্যত আশা জাগানোর বার্তা দেয়।

এসব কারণে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের বাড়তি ঝোঁক তৈরি হয়। প্রতিদিন ফান্ডগুলোর দর ও লেনদেন ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। এক সময়ে অনাগ্রহ ও তলানিতে থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ড সাম্প্রতককালে লেনদেন ও দর বৃদ্ধির শীর্ষ স্থানে উঠে আসে। ধীরে ধীরে ফান্ডগুলোও অভিহিত মূল্য অতিক্রম করতে থাকে। যদিও সিংহভাগ ফান্ড এখনো অভিহিত মূল্যের নিচে পড়ে রয়েছে এবং সম্পদ মূ্ল্যের অনেক নিচে লেনদেন হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর খাতটিতে যখন গতি ফিরতে শুরু করেছে, ঠিক সে সময় তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের হতবাক করে দিয়েছে। এতে একদিকে বড় বিনিয়োগকারীরা নিষিক্র হয়ে পড়েছে, অন্যদিক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আতিঙ্কিত হয়ে পড়েছে। যোগান ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য না থাকায় ফান্ডগুলো ব্যাপক পতনে রয়েছে। সর্বশেষ তিন কার্যদিবসে ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দরই একযোগে কমেছে। এ সময়ে বেশিরভাগ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর কমেছ ১৮ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বলেছেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ৪ জন বিনিয়োগকারীর সিরিয়াল ট্রেডিংয়ের প্রমান মিলেছে। তাদেরকে সাবধান করার জন্যই মিউচ্যুয়াল ফান্ডে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই প্রসংগে তিনি বলেন, এর আগে ইন্সুরেন্স খাতেও কয়েকজন বিনিয়োগকারীর অস্বাভাবাবিক লেনদেন দেখা গিয়েছিল। তাদেরকেও ডেকে সাবধান করা হয়েছে। তিনি অনুষ্ঠানটিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও ইন্সুরেন্স খাতের নানা দিক ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

বিজনেস আওয়ার/২১ নভেম্বর, ২০২০/এসএম

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: