বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শীতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। তাই দেশে করোনার ঊর্ধ্বগতির সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে জনসাধারণের মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে গ্রহণ করা হয়েছে ‘নো-মাস্ক নো-সার্ভিস’ পলিসি।
দেশের সকল পর্যায়ের মানুষকে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি পালনে বাধ্য করতে মাঠপর্যায়েও নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাস্ক না পরলে করা হচ্ছে জরিমানাও। এতে বাজারে মাস্কের চাহিদা ও বিক্রি দুটোই বেড়ে গেছে। এ সুযোগে সব ধরনের মাস্কের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, মাঝে কিছুদিন মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ করোনা প্রতিরোধ সামগ্রীর বিক্রি কমে গেলেও সম্প্রতি তা আবার বেড়ে গেছে। এসব পণ্যের সরবরাহেও ঘাটতি নেই তবু কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে বেড়ে গেছে মাস্কের দাম। কেন দাম বাড়ছে- এমন প্রশ্নের কোনো জবাবও দিতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।
কিছু দোকানে আগের দামে পাওয়া গেলেও বেশির ভাগ দোকানে বেশি দামে মাস্ক বিক্রি হতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও সার্জিক্যাল মাস্ক ও সাধারণ ডিসপোজিবল মাস্কের দাম বক্সপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেশি রাখা হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দোকান গুলোতে মাস্কের দামের এই হেরফের দেখা গেছে।
এক ফার্মেসির ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে তিন স্তরের সার্জিক্যাল মাস্কের প্যাকেটের দাম ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগেও যা পাওয়া গেছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। অপরদিকে দুই পরতের মাস্কের প্যাকেটের দাম বেড়ে হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। কিছুদিন আগেও এগুলো পাওয়া গেছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস সার্জিক্যাল মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকায়। অথচ কয়দিন আগেও ১০ টাকায় পাওয়া গেছে ৩টি মাস্ক। আগে ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাপড়ের মাস্কের দামও এখন ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
ফিল্টার মাস্ক এখন আর ততটা পাওয়া যায় না। সেটার দামও পিসপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। আগে ২০ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন তা পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।
এ ছাড়া কেএন-৯৫ মাস্কের দাম ২০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এন-৯৫ মাস্কের দাম ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় মিলছে এ মাস্ক।
দাম বাড়া প্রসঙ্গে ওই বলেন, পাইকারি পর্যায়ে ব্র্যান্ড, নন ব্র্যান্ড সব ধরনের মাস্কের দাম বেড়েছে। ফলে খুচরাতেও তার প্রভাব পড়েছে। পাইকারি পর্যায়ে দেশি ব্র্যান্ড ‘গেট ওয়েল’-এর মাস্কের প্যাকেট (৫০ পিস) এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়, দুই সপ্তাহ আগে ছিল ২৬০ টাকা। অন্যদিকে পাইকারিতে নন-ব্র্যান্ডের যে সার্জিক্যাল মাস্কের প্যাকেট আগে ৭০-৮০ টাকায় কিনেছি। এখন তা কিনতে হচ্ছে ১৩০-৪০ টাকায়।
শাহবাগের এক বিক্রেতা সুমন বলেন, মাস্ক না পরলে এখন জরিমানা করছে মোবাইল কোর্ট। মার্কেট, হাসপাতাল, অফিসসহ সবখানে মাস্ক পরতে হবে। তাই সব শ্রেণির মানুষ এখন মাস্ক সংগ্রহ করছে। এতে চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। এ সুযোগে সরবরাহকারীরা মাস্কের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
মিডফোর্ডের এক সার্জিক্যাল প্রতিষ্ঠানের কর্নধর বলেন, সবখানে মাস্ক বাধ্যতামূলক হওয়ার পর এর দাম হঠাৎ অনেক বেড়ে গেছে। তাই এখন মাস্ক বিক্রি বন্ধই করে দিয়েছি প্রায়। দুই সপ্তাহ আগে যে সার্জিক্যাল মাস্ক আমরা পাইকারিতে ৬০-৬৫ টাকা প্যাকেট বিক্রি করেছি, এখন তা ১৩০-১৩৫ টাকা হয়েছে।
একজন মাস্ক ক্রেতা বলেন, সার্জিক্যাল মাস্ক এখন ১০ টাকা পিস। এগুলো মাত্র একবারই ব্যবহার করা যায়। আমার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে বাইরে বের হতে হলে মাস্কের পেছনে দিনে ব্যয় হবে ৫০ টাকা। আর আমার একার অফিস করতে মাস্কের পেছনে মাসে অন্তত ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ করতে হবে। এমন সময়ে কয়টি পরিবারের পক্ষে এ খরচ বহন করা সম্ভব?
ফার্মেসি, মুদির দোকান থেকে শুরু করে ফুটপাত- সবখানেই নামে-বেনামের মানহীন মাস্কে সয়লাব। কাপড়ের মাস্কগুলোও যে যার মতো বানিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন। বাজারে বিক্রি হওয়া মাস্কের ওপর আস্থা না থাকলেও কাজ চালিয়ে নিতে সেগুলোই কিনছেন সবাই। এতে পণ্য ক্রয়ে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা।
বিজনেস আওয়ার/২২ নভেম্বর, ২০২০/এ