ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রিজার্ভ চুরি: পাঁচ বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর ২০২০
  • 71

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। রিজার্ভ চুরির ঘটনা জানার পরপরই ১৫ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল থানায় বাংলাদেশ ব্যাংক যে মামলা দায়ের করে, তার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং আইনে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির অভিযোগ এনে এই মামলা করেন। এ ঘটনার পাঁচ বছর পার হতে চলেলেও এখন পর্যন্ত তদন্তই শেষ হয়নি। দীর্ঘ পাঁচ বছরেও তারা এ মামলাটির তদন্ত গুছিয়ে আনতে পারেনি।

কারণ হিসেবে তদন্ত সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য যেসব দেশের অপরাধীরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের কাছে তথ্য চেয়েও আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছেন না তারা। এ পর্যন্ত মাত্র ফিলিপাইন ছাড়া আর কোনও দেশই তথ্য সরবরাহ করেনি। যে কারণে তদন্তের সমাপ্তি টানতে পারছে না সিআইডি।

তদন্তে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরু থেকেই মামলাটির তদন্ত করে আসছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দেশের ভেতরের লোকজন ছাড়াও বাইরের কয়েকটি দেশের ৩০ জনেরও বেশি দুর্বৃত্তকে শনাক্ত করেছে সিআইডি।

এসব ব্যক্তির তথ্য পেতে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। তবে ফিলিপাইন ছাড়া আরও কোনও দেশ এখনও এসব অপরাধীর তথ্য সরবরাহ করেনি। ফিলিপাইন ছাড়াও হংকং, ম্যাকাও, চীন, শ্রীলঙ্কা, মিসর, সিঙ্গাপুর ও জাপানের অপরাধীরা জড়িত এই রিজার্ভ চুরির সঙ্গে।

সেসব অপরাধীর তথ্য পেতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। এসব বিদেশি অপরাধীর তথ্য কবে নাগাদ হাতে পাবে সিআইডি, সেটাও সঠিকভাবে বলতে পারেননি তারা। ফলে তারা তদন্তের সমাপ্তিও টানতে পারছেন না। এ মামলার তদন্তের বিষয়ে আদালতকে নিয়মিত অবহিত করতে হয় তদন্ত সংস্থাকে।

মামলা দায়েরের পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৪ বার আদালতকে তদন্ত শেষ না হওয়ার বিষয়টি অবহিত করেছে সিআইডি। আগামী ৬ ডিসেম্বর এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য সিএমএম আদালতের বিচারক মোর্শেদ আল মামুন দিন ধার্য রেখেছেন।

রিজার্ভ চুরির এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন সিআইডির অর্গানাইজ ও ফিন্যানশিয়াল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে নারাজ।

সিআইডি ছাড়াও রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পুলিশ সদর দফতর, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। সবগুলো বিভাগের একটি সমন্বিত টিম এ তদন্ত কাজ চালাচ্ছে।

রিজার্ভ চুরি মামলার তদারক কর্মকর্তা সিআইডির অর্গানাইজড ও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ পুলিশ সুপার (এসএস) মো. মোস্তফা কামাল বলেন, এ মামলা খুব জটিল। কবে নাগাদ শেষ হবে বলা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে এ মামলার অগ্রগতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। যে বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। আবারও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে তথ্য চেয়ে তাগাদা দিয়ে চিঠি পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। সিআইডির পক্ষ থেকে সেটি এরইমধ্যে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও জানান, রিজার্ভ চুরির এই ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়াও আরও আটটি দেশের লোকজন জড়িত। ফিলিপাইন ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কেউ তথ্য দেয়নি। অন্যরা তথ্য না দিলে কীভাবে তদন্ত শেষ করা সম্ভব? তাদের তথ্যগুলো পেলেই আমরা এ মামলার তদন্তের ইতি টানতে পারবো।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এরমধ্যে দুই কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কায় এবং আট কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে।

বিজনেস আওয়ার/২৪ নভেম্বর, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

রিজার্ভ চুরি: পাঁচ বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি

পোস্ট হয়েছে : ১১:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। রিজার্ভ চুরির ঘটনা জানার পরপরই ১৫ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল থানায় বাংলাদেশ ব্যাংক যে মামলা দায়ের করে, তার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং আইনে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির অভিযোগ এনে এই মামলা করেন। এ ঘটনার পাঁচ বছর পার হতে চলেলেও এখন পর্যন্ত তদন্তই শেষ হয়নি। দীর্ঘ পাঁচ বছরেও তারা এ মামলাটির তদন্ত গুছিয়ে আনতে পারেনি।

কারণ হিসেবে তদন্ত সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য যেসব দেশের অপরাধীরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের কাছে তথ্য চেয়েও আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছেন না তারা। এ পর্যন্ত মাত্র ফিলিপাইন ছাড়া আর কোনও দেশই তথ্য সরবরাহ করেনি। যে কারণে তদন্তের সমাপ্তি টানতে পারছে না সিআইডি।

তদন্তে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরু থেকেই মামলাটির তদন্ত করে আসছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দেশের ভেতরের লোকজন ছাড়াও বাইরের কয়েকটি দেশের ৩০ জনেরও বেশি দুর্বৃত্তকে শনাক্ত করেছে সিআইডি।

এসব ব্যক্তির তথ্য পেতে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। তবে ফিলিপাইন ছাড়া আরও কোনও দেশ এখনও এসব অপরাধীর তথ্য সরবরাহ করেনি। ফিলিপাইন ছাড়াও হংকং, ম্যাকাও, চীন, শ্রীলঙ্কা, মিসর, সিঙ্গাপুর ও জাপানের অপরাধীরা জড়িত এই রিজার্ভ চুরির সঙ্গে।

সেসব অপরাধীর তথ্য পেতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। এসব বিদেশি অপরাধীর তথ্য কবে নাগাদ হাতে পাবে সিআইডি, সেটাও সঠিকভাবে বলতে পারেননি তারা। ফলে তারা তদন্তের সমাপ্তিও টানতে পারছেন না। এ মামলার তদন্তের বিষয়ে আদালতকে নিয়মিত অবহিত করতে হয় তদন্ত সংস্থাকে।

মামলা দায়েরের পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৪ বার আদালতকে তদন্ত শেষ না হওয়ার বিষয়টি অবহিত করেছে সিআইডি। আগামী ৬ ডিসেম্বর এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য সিএমএম আদালতের বিচারক মোর্শেদ আল মামুন দিন ধার্য রেখেছেন।

রিজার্ভ চুরির এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন সিআইডির অর্গানাইজ ও ফিন্যানশিয়াল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে নারাজ।

সিআইডি ছাড়াও রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পুলিশ সদর দফতর, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। সবগুলো বিভাগের একটি সমন্বিত টিম এ তদন্ত কাজ চালাচ্ছে।

রিজার্ভ চুরি মামলার তদারক কর্মকর্তা সিআইডির অর্গানাইজড ও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ পুলিশ সুপার (এসএস) মো. মোস্তফা কামাল বলেন, এ মামলা খুব জটিল। কবে নাগাদ শেষ হবে বলা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে এ মামলার অগ্রগতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। যে বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। আবারও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে তথ্য চেয়ে তাগাদা দিয়ে চিঠি পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। সিআইডির পক্ষ থেকে সেটি এরইমধ্যে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও জানান, রিজার্ভ চুরির এই ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়াও আরও আটটি দেশের লোকজন জড়িত। ফিলিপাইন ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কেউ তথ্য দেয়নি। অন্যরা তথ্য না দিলে কীভাবে তদন্ত শেষ করা সম্ভব? তাদের তথ্যগুলো পেলেই আমরা এ মামলার তদন্তের ইতি টানতে পারবো।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এরমধ্যে দুই কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কায় এবং আট কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে।

বিজনেস আওয়ার/২৪ নভেম্বর, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: