বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : কুয়াশার চাদরে মোড়া পদ্মানদী, আর এর মধ্যেই নানা বাধা-বিপত্তি পাশ কাটিয়ে সংযোগ ঘটলো পদ্মাসেতুর দুই পাড়ের। বসলো স্বপ্নের সেতুর ৪১তম স্প্যানটি। এর মাধ্যমে দেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ও পূর্বাঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এখন বাস্তব। তীব্র খরস্রোতা এই নদীতে সেতু নির্মাণ সমসায়িক বিশ্বে বিরল ঘটনা।
সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় ৪১তম স্প্যান বসানো কাজ। বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১২টা ২ মিনিটে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় ৪১ নম্বর স্প্যানটি। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে গতকাল বুধবার স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তের কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ক্রেনে তুলে ১২ এবং ৩ নম্বর খুঁটির কাছে এনে রাখা হয়। দুপরের আগেই পদ্মার এপার-ওপারেন ইস্পাত কংক্রিটের কাঠামোতে সংযোগ বাঁধছে।
পদ্মা পাড়ের সাধারণ মানুষ জানান, ভৌগোলিকভাবে আমরা এই অঞ্চলের মানুষরা একটু অবহেলিতই ছিলাম। তবে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু থেকেই আমরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। নতুন করে সম্ভাবনার দুয়ার আমাদের জন্য খুলবে এই আশায়। এই সেতু ঘুচাবে ভৌগোলিক বিভেদ। প্রয়োজনে, বিপদে, আপদে এই নদী পাড়ি দেওয়া ছিলো আমাদের জন্য অনেক কষ্টের ভোগান্তির।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হয়েছিল যে সেতুর নির্মাণ কাজ। আর সেই সেতুটিই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এসে পেতে যাচ্ছে পূর্ণতা। দৃশ্যমান হবে নকশানুযায়ী পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ অংশ। মানে ৬ দশমিক ১৫ মিটার। এ যেন বিজয়ের মাসে আরেক বিজয়! আর সর্বশেষ এই স্প্যান বসার মধ্যে দিয়েই সূচনা হলো ইতিহাসের মাইলফলক।
এর আগে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এই সেতু দেশের নিজস্ব অর্থে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালে। কিন্তু নদীর তলদেশে মাটির গঠনগত বৈচিত্রের কারণে কাজ আরও পিছিয়ে যায়। সাড়ে ৪ বছর ধরে শুধু সেতুর খুঁটির কাজ চলে। আর ৩ বছর লাগে সেই খুটিতে স্প্যান বসাতে। অবশেষে সেতুর চালুর দিকে যাচ্ছে সরকার।
পদ্মাসেতুর ৪২টি খুঁটি এবং ৪১টি স্প্যান। প্রতিটি স্প্যান ১৫০ মিটার লম্বা। শধু নদীতে সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই পাড়ের সঙ্গে সংযোগ মিলিয়ে সেতুটি সাড়ে ৯ কিলোমিটার। রোড ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার। রেল ভায়াডাক্ট ০.৫৩২ কিলোমিটার। নদী শাসন করা হচ্ছে ১৪ কিলোমিটার। সংযোগ সড়ক উভয়দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার।
চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সেতুটি নির্মাণ কাজ করছে। নদী শাসন কাজ করছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের আবুল মোনেম লিমিটেড। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যার পুরোটাই দেশের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেওয়ান আবদুল কাদের বলেন, সার্বিকভাবে সেতুতে যান চলাচল শুরু করা যাবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে।
বিজনেস আওয়ার/১০ ডিসেম্বর, ২০২০/এ