বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকা সিটি ব্যাংক এনএর চিফ কান্ট্রি কমপ্লায়েন্স অফিসার (সিসিসিও) ও চিফ অ্যান্টি মানি লন্ডারিং অফিসার (সিএএমএলও) এম আশিক রহমান। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হকের ন্যায় তাকেও নিয়োগ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন ডিএসইর প্রভাবশালী এক শেয়ারহোল্ডার পরিচালক।
ওই পরিচালক এর আগে কাজী সানাউল হককে নিয়োগ করাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। তবে তার যোগ্যতা নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন তুলেছিলেন ৪জন শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের মধ্যে শাকিল রিজভী, মোহাম্মদ শাহজাহান ও মিনহাজ মান্নান ইমন। কিন্তু ওই পরিচালক সানাউল হকের নেতৃত্বে সফলতা দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্নকে ভঙ্গ করে ৮ মাসের মাথায় ব্যর্থতার দায়ে পদত্যাগ করেছেন কাজী সানাউল হক। নিয়ম অনুযায়ি যা কার্যকর হবে আগামি ৮ জানুয়ারি।
সানাউল হকের নিয়োগ নিয়ে শুরুতেই ডিএসইর পর্ষদ বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে থাকে ৩ জন শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, অন্যদিকে বাকি শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের নেতৃত্বে স্বতন্ত্র পরিচালকেরা। তার কারনেই অধিকাংশ পরিচালকের সম্মতিতে সানাউলকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওইসময় ৩ জন শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের মতামতকে পাত্তা দেওয়া হয় না। এখন সেই শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের পছন্দের কাজী সানাউল হক ব্যর্থতার দায়ে পদত্যাগ করেছেন।
এখন আবারও এমডি নিয়োগ নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছেন ডিএসইর সেই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক। তিনি অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকা এম আশিক রহমানকে নিয়োগ দিতে চাচ্ছেন। এ নিয়ে কাজও করছেন। যার সঙ্গে ওই পরিচালকের ছেলের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। এখন দেখার বিষয় আবারও আরেকটি সানাউল হকের নিয়োগ হয় কিনা।
এম আশিক রহমানের সঙ্গে ডিএসইর এমডি হওয়ার সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ এনামুল হক সরকার। বর্তমানে ডিএসইর এমডি হওয়ার তালিকায় তারা দুজন রয়েছেন।
আরও পড়ুন……
বিতর্কিত রকিবুরের সিসিবিএলে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ
ডিএসই একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ড. মোহাম্মদ এনামুল হক শেয়ারবাজারের অভিজ্ঞতায় এম আশিক রহমানের থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছেন। তার এই বাজার সম্পর্কে বিশদ বাস্তবিক জ্ঞান রয়েছে। তারপরেও একটি ব্যাংকের কমপ্লায়েন্স অফিসারকে নিয়োগ দিতে মরিয়া একজন পরিচালক। অথচ ওই প্রার্থী ব্যাংকের প্রথম লেভেল-১, এমনকি দ্বিতীয় লেভেলেরও কর্মকর্তা না। যার টিম পরিচালনা ও সরাসরি শেয়ারবাজার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে।
তবে অপর প্রার্থী ড. মোহাম্মদ এনামুল হক ২০১৩ সাল থেকে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে কাজ করছেন। বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে নির্বাহি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যিনি বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টে পিএইচডি করেছেন। এছাড়া ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্টে বিবিএ ও ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টে এমবিএ করেছেন।
এনামুল হক লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত স্ট্যাটেজি অ্যান্ড প্লানিং, ম্যানেজমেন্ট অপারেশন, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট, কমিটির দায়িত্বপালন, মেম্বারশীপ ম্যানেজমেন্ট, পাবলিক রিলেশন, গভর্ণেন্স ও রিপোর্টিং নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এর আগে লন্ডনে ন্যাশনাল ব্যাংক অব কুয়েতের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে ২০০৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ২০০২ সালের ১১ অক্টোবর থেকে ২০০৭ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সৌদিআরবে ইসলামিক ডেভোলপমেন্ট ব্যাংকে (আইডিবি) হেড অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড এডমিনিস্ট্রেশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
উল্লেখ্য, কাজী সানাউল হকের পদত্যাগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৪ নভেম্বর এমডি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই। বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর এক্সচেঞ্জটির এমডি পদের জন্য ২১ জন প্রার্থী আবেদন করেন। এদের মধ্য থেকে সাতজন প্রার্থীকে বাছাই করে ১০ ডিসেম্বর জুমের মাধ্যমে সাক্ষাতকার নেয় নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি (এনআরসি)। সাক্ষাতকারের পর এনআরসির পছন্দের তালিকায় রাখা হয় আলোচ্য দুই প্রার্থীকে।
বিজনেস আওয়ার/২২ ডিসেম্বর, ২০২০/আরএ