বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম) : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু নিয়ে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মিথ্যাচার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন আল্লামা শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন। শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলন মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও তার সহযোগীরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বাবুনগরীর মতো বয়োবৃদ্ধ আলেম সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার করছেন।
তিনি বলেন, গত ১৬ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় কী ঘটেছিল তা আপনারা সবাই জানেন। কওমী ভিশনের মাধ্যমে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মাদরাসায় অবস্থান করে সকল ঘটনা লাইভ প্রচার করেছেন। আপনারা দেখেছেন শহীদ আল্লামা শফী হুজুরের রুমে কীভাবে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মীর ঈদ্রিস, মাওলানা শহীদুল্লাহ, মাওলানা ইনামুল হাসান, মাওলানা জুনায়েদ উপস্থিত থেকে শফী হুজুরকে জোরপূর্বক হাটহাজারী মাদরাসা থেকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। বাবুনগরীর হস্তক্ষেপে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির, বিএনপি, নিষিদ্ধ ঘোষিত হুজি, হিযবুত তাহরীরসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানাজায় পরিকল্পিতভাবে অবস্থান নেয়।
তিনি বলেন, আল্লামা শফীর ছেলে ইউসুফ মাদানীকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জানাজায় অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। আমার ভাগিনা ইউসুফ মাদানী জানাজা পড়িয়েছে। জানাজার পূর্বে ছেলের যে বক্তব্য রাখার কথা সেটা রেখেছে। কিন্তু বাবুনগরীর দোসররা তার সে বক্তব্য সীমিত ও নির্ধারিত করে দিয়েছে।
মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন দাবি করেন আজকের সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ মাদানী উপস্থিতি থাকার কথা ছিল। কিন্তু মামুনুল হক বাহিনীর কারণে তিনি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পৌঁছাতে পারেননি। তাকে হাটহাজারী থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
যদিও সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে হেফাজতের গত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, মাওলানা ইউসুফ মাদানী সম্মেলনস্থলে যাচ্ছেন। কিন্তু ৫ মিনিট পরই জানানো হয় মাওলানা ইউসুফ মাদানী সংবাদ সম্মেলনে আসছেন না। অথচ আগে থেকেই প্রিন্ট করা সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে মাদানীকে আসতে বাধা দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এনিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেও তার সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি মাঈন উদ্দীন।
উল্লেখ্য, কয়েক দশক ধরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার মুহতামিম বা মহাপরিচালকের পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন শাহ আহমদ শফী। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে তিনি বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা বোর্ড বা বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন।
হেফাজতে ইসলাম নামে যে সংগঠন গড়ে ওঠে, শুরু থেকে সেটির আমিরের দায়িত্বও তিনি ছিলেন। মূলত কওমী মাদরাসার নেতৃত্বের ওপর ভর করেই আল্লামা শফী হেফাজতের দায়িত্বে ছিলেন। আহমদ শফীর উত্তরসূরী হওয়ার দ্বন্দ্ব চলছিল মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম বা সহকারী পরিচালক জুনায়েদ বাবুনগরী ও শফীর ছেলে আনাস মাদানীর মধ্যে।
এর জেরে গত ১৭ জুন সহকারী পরিচালকের পদ হারান বাবুনগরী। মাদরাসার কার্যক্রম শুরু হলে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আকস্মিকভাবে মাদরাসার ভেতর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় প্রধান ফটক আটকে মাদরাসার মধ্যে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মাদরাসার শুরা কমিটি বৈঠকে আনাস মাদানীকে মাদরাসার সহকারী পরিচালকসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মুহতামিম আহমদ শফী নিজে ‘পদত্যাগ’ করেন। ওই দিনই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শফীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মারা যান আহমদ শফী।
আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর গত ১৫ নভেম্বর হেফাজতের সম্মেলন হয়। শফীপন্থীদের অংশগ্রহণ ছাড়া অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে হেফাজতের আমির নির্বাচিত হন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। মহাসচিব নির্বাচিত হন আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। এই কমিটিরই যুগ্ম-মহাসচিব হন মাওলানা মামুনুল হক ও নাসির উদ্দিন মুনির। সম্প্রতি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন নূর হোসাইন কাসেমী।
গত ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির মাওলানা শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে নালিশি মামলা করেন তার শ্যালক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।
বিজনেস আওয়ার/২৬ ডিসেম্বর, ২০২০/এ