বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ক্ষমতার চেয়ার আর কারাগার খুব পাশাপাশি থাকে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে নারীদের জন্য আলাদা ভবন এবং ২০টি ফায়ার স্টেশনসহ অন্যান্য সেবার উদ্বোধন করে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের ক্ষমতার চেয়ার আর কারাগার খুব পাশাপাশি থাকে। তবে ২০০৭ সালে সবার আগে কিন্তু আমাকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। কাজেই সেটা আমরা জানি, রাজনীতি করতে গেলে এটা করতেই হবে। এজন্য আমরা কারাগারগুলো উন্নত করে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয় কারাগারে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেটা আমরা উদ্বোধন করেছি।
বঙ্গবন্ধুর বারবার জেল খাটার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু অপরাধ করলেই যে জেলে যায় তা না। এর মধ্যে ১৯৪৮ সালে যখন আমাদের মাতৃভাষা বাংলার অধিকার কেড়ে নিয়েছিল তখন জাতির পিতা যে প্রতিবাদ করেছিলেন সে প্রতিবাদের কারণে কারাগারে যেতে শুরু করেন। তারপর তার জীবনের অনেকটা সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে অত্যন্ত মানবেতরভাবে।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কারাগারে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কারাগারের সঙ্গে সব সময় আমাদের একটা সম্পর্ক আছে। ছোটবেলা থেকেই কারাগারে যাই, সেখানকার ভালো-মন্দ অনেক কিছু জানারও সুযোগ হয়। জাতির পিতা কারাগারের রোজনামচা ও অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে কারাগার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হলো কারাগারে শুধু অপরাধীদের বন্দি করে রাখা নয়, সঙ্গে সঙ্গে তাদের মন মানসিকতা পরিবর্তন করা। তাদের কিছু শিক্ষা দেওয়া এবং যাতে তারা বের হয়ে ভবিষ্যতে একই অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কারাগারে এই ব্যবস্থা নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারাগারে কতগুলো পরিবর্তন এনেছি। আমাদের কারারক্ষীদের কোনো ট্রেনিং ছিল না, তাদের নিরাপত্তারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এমনকী তাদের থাকারও ভালো ব্যবস্থা ছিল না। নতুন কারাগারে সেই ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়েছে। আমরা কারাগারগুলোর উন্নতি করে যাচ্ছি।
জেলা কারাগারগুলোতে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালু করতে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, কেরানীগঞ্জের কারাগারেও ইতোমধ্যে কোর্টরুম তৈরি করা হয়েছে। এভাবে জেলা কারাগারগুলোতেও কোর্টরুম চালু করে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট যাতে হয় সেভাবে অনলাইনের মাধ্যমে মামলাও পরিচালিত হবে। সেভাবে আমরা একটা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রত্যেকটা আইন সব কিছুই ডিজিটালাইজ করে ফেলা হচ্ছে। যে কোনো মামলার কজ লিস্ট যেটা থাকবে সেটাও অনলাইনে জানা যাবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্ত কাজগুলো যেন আরও সুন্দরভাবে সুষ্ঠুভাবে হয়। সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনগুলো হচ্ছে—নওগাঁর রানীনগর, মৌলভীবাজারের রাজনগর, রাজশাহীর মোহনপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, পাবনার সাথিয়া ও আটঘরিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, শরীয়তপুরের জাজিরা, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ, বগুড়ার শাহজাহানপুর ও আদমদীঘি, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও কলারোয়া, নেত্রকোনার বারহাট্টা, বরিশালের হিজলা, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, পিরোজপুরের ইন্দুরকানী, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা ৬টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সুনামগঞ্জ, শরীয়তপুর, বাগেরহাট, মাদারীপুর, নেত্রকোনা ও নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউন্জ থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
বিজনেস আওয়ার/২৭ ডিসেম্বর, ২০২০/এ