প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে সংগ্রহ করা টাকা ব্যবহারে ৫ দফায় সময় বাড়ানো রিজেন্ট টেক্সটাইলের পরিচালকেরা প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েছে। তারা তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটির জন্য ব্যাংক থেকে সুদের উপরে ঋণ নিয়ে ব্যক্তিগত কোম্পানিতে বিনাসুদে অর্থ সরবরাহ করে আসছে। এতে করে সুদের দায়ভার সাধারন বিনিয়োগকারীদের দিয়ে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানি লাভবান হচ্ছেন।
কোম্পানির এমন প্রতারণার ব্যাখ্যা চেয়ে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একইসঙ্গে বিনাসুদে প্রদত্ত ওইসব ঋণ ১৫ দিনের মধ্যে ফেরত ও সুদ আনার জন্য বলা হয়েছে।
বিএসইসির চিঠি অনুযায়ি, রিজেন্ট টেক্সটাইল তার ৩ সহযোগি/সিস্টার কনসার্ন কোম্পানি রিজেন্ট ফেব্রিকস, রিজেন্ট ওয়েভিং ও এইচজি এভিয়েশনকে নিয়মিত বিনাসুদে ঋণ প্রদান করে আসছে। এ কোম্পানিটি থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন সহযোগি কোম্পানিগুলোতে প্রদত্ত এমন ঋণের পরিমাণ দাড়িঁয়েছে ১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। যার পরিমাণ ২০১৯ সালের ৩০ জুন ২০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, ২০১৮ সালের ৩০ জুন ৩১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, ২০১৭ সালের ৩০ জুন ১৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ও ২০১৬ সালের ৩০ জুন ছিল ১৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
সহযোগি কোম্পানিতে বিনাসুদে এই ঋণ সরবরাহের ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ ও সাধারন মিটিংয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এরমাধ্যমে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা নং-এসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০৬-১৫৯/এডমিন/০২-১০ লংঘন করা হয়েছে।
সহযোগি কোম্পানিগুলোতে বিনাসুদে প্রদত্ত এই অর্থকে আর্থিক হিসাবে ‘ডিউ টু এফিলিয়েটেড কোম্পানিজ’ শিরোনামে দেখানো হয়েছে। অথচ রিজেন্ট টেক্সটাইল ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে নিয়মিত সুদ দিয়ে যাচ্ছে। অনেকটা তালিকাভুক্ত রিজেন্টের জন্য সুদে ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে বিনাসুদে অর্থ দেওয়া হয়েছে। এতে করে শুধুমাত্র সুদবহন করে যাচ্ছে রিজেন্ট টেক্সটাইল। যার ৪৫.৪৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে সাধারন বিনিয়োগকারীদের হাতে (প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ)। অর্থাৎ উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে দেওয়া ঋণের জন্যও এই ৪৫.৪৫ শতাংশ সাধারন বিনিয়োগকারীকে সুদের ভার বহন করতে হচ্ছে।
অথচ ২০২০ সালের ৩০ জুন ন্যাশনাল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ও আইডিএলসি ফাইন্যান্সে রিজেন্ট টেক্সটাইলের ঋণ দাড়িঁয়েছে ২০৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে ১৫৬ কোটি ৯ লাখ টাকার দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, ১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকার দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কারেন্ট পোরশন এবং ৩২ কোটি ৭৭ লাখ টাকার স্বল্পমেয়াদি ঋণ রয়েছে।
এইসব ঋণের জন্য রিজেন্ট টেক্সটাইলের ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৪ লাখ টাকার ব্যাংক চার্জ ও কমিশন এবং ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার সুদজনিত ব্যয় হয়েছে। আগের বছর এই ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ টাকা চার্জ এবং ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা সুদ।
এ বিষয়ে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) অঞ্জন কুমার ভট্টাচার্য বলেন, আমরা সহযোগি কোম্পানিতে ঋণ দেই নাই। যেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেটা ব্যবসায়িক লেনদেনের কারনে সৃষ্ট হয়েছে। ধরেন সূতা নিয়েছি এবং এলসি দিয়েছি, কিন্তু টাকা পেমেন্ট হয় নাই। তাহলেতো ডিউ হবেই। এখন রেগুলেটর হিসেবে বিএসইসি প্রশ্ন করতেই পারে। আমরা আমাদের জবাব দেব।
আরও পড়ুন…….
নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে গোল্ডেন হার্ভেস্টের ঋণ প্রতারণা
আইপিও ফান্ড ব্যবহারে দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি সত্ত্বেও রিজেন্টের বোনাস ঘোষণা
বিজনেস আওয়ার/২৯ ডিসেম্বর, ২০২০/আরএ
2 thoughts on “সহযোগি কোম্পানির ঋণের দায়ভার বহন করছে রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারহোল্ডাররা”