বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পক্ষে ও বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। একটি পক্ষ দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে শেয়ারবাজারে আইপিওর বিকল্প নেই মনে করলেও অপরপক্ষ দূর্বল কোম্পানির আগমন নিয়ে বিরোধীতা করে আসছে। এরমধ্যে সমালোচনাকে প্রাধান্য দিয়ে বিগত কমিশন আইপিও সংখ্যা তলানিতে নিয়ে আসেন। তবে শিবলী রুবাইয়াতের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সেই অবস্থার পরিবর্তন করেছেন।
২০২০ সালের ১৭ মে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপরে তার নেতৃত্বাধীন কমিশন আইপিও খরা কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। দেশের শিল্পায়নের জন্য তারা আইপিওর গুরুত্ব দিচ্ছেন।
তাদের হাত ধরেই ২০২০ সালে আইপিও অনুমোদন পেয়েছে ১৫ কোম্পানি। গত ২৩ জুন ইলেকট্রনিকস জায়ান্ট ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে আইপিও দেওয়া শুরু করে শিবলীর নেতৃত্বাধীন কমিশন। এরপরে তারা ৬ মাসে আরও ১৪টি কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিয়েছে। তবে এর আগের ৬ মাসে মাত্র ১টি কোম্পানির আইপিও দেওয়া হয়েছিল। যে সময়টার ৫ মাস দায়িত্ব পালন করেছে খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে ওই ৫ মাসের মধ্যে প্রায় ২ মাস শেয়ারবাজার বন্ধ ছিল।
একসময় আইপিও নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করা হলেও তা অনেকটা কমে এসেছে। এখন আর প্রকাশ্যে আইপিও নিয়ে কোন সমালোচনা বা বিরোধীতা করতে দেখা যায় না।
বর্তমান কমিশনের আইপিও অনুমোদন দেওয়া ১৫ কোম্পানির মধ্যে ১৪টিই বিগত কমিশনের সময়ে আবেদন করা। একমাত্র এনআরবিসি ব্যাংক বর্তমান কমিশনের সময়ে আবেদন করে। তবে বিগত কমিশন যদি বর্তমান কমিশনের দেওয়া ওই ১৪টি কোম্পানিরও আইপিও দিত, তাহলে তা নিয়েও প্রকাশ্যে অনেকে সমালোচনা করতেন। এটা হয়তো বিগত কমিশনের দূর্ভাগ্যই।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বিগত কমিশনের ৯ বছরের মতো টানা দায়িত্ব পালন করা। ওই কমিশন ৮ বছর শেয়ারবাজারকে সঠিকভাবে চালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও শেষটা তেমন হয়নি। বিধিবর্হিভূতভাবে একটি বড় কোম্পানির শেয়ার বিদেশীদের কাছে বিক্রিতে বাধা, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বোনাস ইউনিট (আরআইইউ) বাতিলের মতো কিছু পদক্ষেপের কারনে অনেকের চক্ষুশূল হয়ে পড়েন। যারা আইপিওসহ বিগত কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানাভাবে কাজ করেন।
তবে নতুন কমিশনের সময়ে শেয়ারবাজারের পরিবেশ এখন স্বাভাবিক। শেয়ারবাজার ইতিবাচক ধারায়। এই ধারাকে বিদ্যমান রাখতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে এই কমিশন। একইসঙ্গে প্রাইমারি মার্কেটকে উন্নয়নের জন্যও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
আইপিওর গুরুত্বারোপ করে গত ২৪ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত বলেন, আইপিওর মাধ্যমে ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে লংটার্ম ফাইন্যান্সিং করে দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী-ইন্ডাস্ট্রিজ সাসটেইনেবল করতে পারবে। তাই আরো আইপিও দেয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা অনেক আইপিও দিলেও বাজারে কোনো বড় রিঅ্যাকশন দেখতে পাচ্ছি না। আশা করছি এর মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও ইন্ডাস্ট্রিজ সবাই বেনিফিটেড হচ্ছে। মার্কেট বেনিফিটেড হচ্ছে এবং যারা বিনিয়োগ করছেন তারাও ভালো করছেন। সব মিলিয়ে আমরা একটা ভালো অবস্থান দেখতে পাচ্ছি।
নিম্নে ২০২০ সালে বিএসইসির কমিশন সভায় অনুমোদন দেওয়া আইপিওর বিস্তারিত তুলে ধরা হল-
বুক বিল্ডিং পদ্ধতি | |
ওয়ালটন হাই-টেক | ১০০ কোটি টাকা |
লুব-রেফ | ১৫০ কোটি টাকা |
মীর আখতার | ১২৫ কোটি টাকা |
এনার্জিপ্যাক পাওয়ার | ১৫০ কোটি টাকা |
ইনডেক্স এগ্রো | ৫০ কোটি টাকা |
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতি | |
এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স | ২৬.০৮ কোটি টাকা |
দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স | ১৬ কোটি টাকা |
সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স | ১৯ কোটি টাকা |
ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স | ১৬ কোটি টাকা |
এসোসিয়েটেড অক্সিজেন | ১৫ কোটি টাকা |
ডমিনেজ স্টিল | ৩০ কোটি টাকা |
রবি আজিয়াটা | ৩৮৭.৭৪ কোটি টাকা |
এএফসি হেলথ | ১৭ কোটি টাকা |
লাভেলো আইসক্রীম | ৩০ কোটি টাকা |
এনআরবিসি ব্যাংক | ১২০ কোটি টাকা |
ইজেনারেশন | ১৫ কোটি টাকা |
আরও পড়ুন…..
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত: আইপিওতে ন্যূনতম বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক ও শেয়ার পাবে সবাই
বিজনেস আওয়ার/০২ জানুয়ারি, ২০২১/আরএ