বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) মা লীলাবতী হালদার ও সহযোগী অমিতাভ অধিকারীসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, সঙ্গে আছেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেজাবীন রাব্বানি দিপা ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। এছাড়া ছিলেন আইনজীবী মো. মোশাররফ হোসেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের বলেন, টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে বিদেশে যাওয়া পিকে হালদারের প্রতারণায় সহায়তাকারী ২৫ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই ২৫ জনকে প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জিজ্ঞাসা করতে পারবেন বলেও আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া পিকে হালদারের প্রতারণায় সহায়তাকারী ২৫ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা। তাদের আবেদন শুনানি নিয়ে আদালত এই আদেশ দেন।
২৫ জন হলেন- হারুনুর রশিদ (ফাস ফাইন্যান্স), উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সামি হুদা, অমিতাভ অধিকারী, মিস অবন্তিকা বড়াল, মিস শামীমা (ইন্টারন্যাশনাল লিজিং), মিস রুনাই (ইন্টারন্যাশনাল লিজিং), আই খান (ইন্টারন্যাশনাল লিজিং), সুকুমার মৃধা (ইনকাম ট্যাক্স আইনজীবী), মিস অনিন্দিতা মৃধা, তপন দে, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, অভিজিৎ চৌধুরী, রাজিব সোম, ইরফান উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (সাবেক এমডি ব্যাংক এশিয়া), অঙ্গন মোহন রায়, নঙ্গ চৌ মং, নিজামুল আহসান, মানিক লাল সমাদ্দার ও সোহেল সামস। এছাড়া রয়েছেন পিকে হালদারকে বিভিন্নভাবে তথ্য দিয়ে সহযোগিতাকারী মাহবুব মুসা, এ কিও সিদ্দিকী, মোয়াজ্জেম হোসেন, লিলাবতী হালদার ও এসকে শূর।
এর আগে গত ৩ জানুয়ারি পিকে হালদারের প্রতারণার শিকার সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়েসহ ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা রুল শুনানিতে পক্ষভুক্ত হন। ওইদিন মোস্তফা কামালের মেয়েসহ ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা আত্মসাৎ হওয়া টাকা ফিরিয়ে দিতে আদালতের কাছে আকুতি জানান।
সেদিন তারা উচ্চ আদালতের শুনানিতে বলেছিলেন, ‘আর্থিক ও মানসিক কষ্টে আমরা মারা যাচ্ছি, আমাদের বাঁচান।’
এদিন শুনানিতে অর্থপাচার রোধে বা পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালত বলেন, ‘বিদেশে শত শত কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কী করছে। এত কিছু হচ্ছে তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) কিছু করছে না কেন? তারা শুধু ওখানে (অফিসে) এসে বসে থাকবেন, কিছু করবেন না তা তো হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থপাচারের দায় এড়াতে পারে না।’
পিকে হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা রয়েছেন। মাঝে একবার টাকা ফেরতের শর্তে দেশে ফিরতে চাইলেও দেশে ফিরলে গ্রেফতার হতে হবে হাইকোর্টের এমন আদেশের পর অসুস্থতার কথা বলে আর ফেরেননি তিনি। জানা গেছে, কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি করে রাজকীয় জীবনযাপন করছেন তিনি।
গত ৩ ডিসেম্বর পিকে হালদারের কানাডার হোল্ডিংয়ের ঠিকানা বাংলাদেশ সরকারকে জানায় কানাডা সরকার। এরপর সেদিন জানানো হয়, যেকোনো দিন পিকে হালদারের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করতে পারে ইন্টারপোল।
বিজনেস আওয়ার/০৫ জানুয়ারি, ২০২০/এ