ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘চারুপট’ নিয়ে বহুদুর যেতে চান জারা!

  • পোস্ট হয়েছে : ০২:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২১
  • 68

হাল ফ্যাশানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভিন্নধারার গহনা। নানা উপকরন ব্যবহার করে সম্পূর্ণ হাতে তৈরি করা হয় এসব গহনা আর তা বিক্রি হচ্ছে নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কেবল ছবি দেখে পছন্দ করলেই সময় মত পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে ক্রেতার দোর গোঁড়ায়। পণ্যের গুণগতমান ও নকশায় বৈচিত্র তো রয়েছেই, ফলে অনেকেই এসব ভার্চুয়াল মাধ্যমে কেনাকাটা করছেন সাচ্ছন্দে।

গহনা তৈরির এমনই একটি প্রতিষ্ঠান ‘চারুপট’। করোনা মহামারীতে সবাই যখন গৃহবন্দী অলস সময় পার করছে ঠিক সে সময় সকল ক্লান্তি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন কিছু করার ইচ্ছে থেকেই শুরু হয় চারুপটের পথচলা। ‘জারা’ পেশায় স্থপতি (ডিপ্লোমা) সাথে সাথেই স্থাপত্য নিয়ে পড়াশুনা (ব্যাচেলর) করছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষে। কোঁকড়া চুলের অল্পবয়সী প্রাণোচ্ছল একজন তরুণী।

ভাললাগার জগৎ নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি জানালেন- ভালোবাসেন কবিতা পড়তে, এর বাহিরেও তার বিচরণ রয়েছে দৌড় ও ছবি আঁকিয়েদের জগতে। আর গহনা কিংবা ফ্যাশনে হাতেখড়ি মায়ের হাত ধরে। বেশ ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে নিজের অজান্তেই যেন স্থাপত্য নিয়ে পড়তে চলে আশা।

কিন্তু সবকিছুর মাঝেও ফ্যাশন নিয়ে কাজ করার ইচ্ছেটা বরাবরই সুপ্ত ছিল। সে সুপ্ত ইচ্ছে ডানা মেলল ২০২০ এর মাঝামাঝিতে এসে মাত্র ৫০০ টাকা নিয়ে। কথা ছিল উচ্চশিক্ষার জন্য বাহিরে চলে যাওয়ার কিন্তু করোনা পরিস্থিতি বাধসাধল এর উপর অলস প্রতিটা দিন যেন এক একটি দীর্ঘযুগের মত।

অল্প কিছু উপাদান, ইচ্ছে, অনুপ্রেরণা সবই ঠিক ছিল কিন্তু প্রতিষ্ঠান এর তো একটা নাম দেয়া চায়। নাম সে যায় হোকনা তবে তা এমন হতে হবে যা আমার কাজ আর আমাকে প্রকাশ করবে, সে ভাবনা থেকেই চারুপট শব্দে আটকা পরা। চারুপট শব্দের ইংরেজি অর্থ ক্যানভাস। একজন শিল্পীর কাছে এরচেয়ে প্রিয় কিছু কি বা হতে পারে!

এই অর্ধবছরের পথচলায় সঙ্গী শতাধিক ক্রেতা ও অজস্র শুভাকাঙ্ক্ষী। চারশতাধিক নকশার গহনা ও টিপ তৈরি করেছে চারুপট। বিশেষত্ব- প্রতিটি গহনায় নিজ হাতে তৈরি, যেকোনো নকশার খুব বেশী অনুরুপ কপি করা হয়না, কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইসড নকশা ও গহনা তৈরি করা হয়।

চারুপট কাজ করছে হাতে তৈরি টিপ, গহনা, চাবির রিং সহ হাতে আঁকা নানা পণ্য নিয়ে। এই অল্প কদিনের পথচলার মাঝেই চারুপটের পণ্য পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র, নেপাল, ভারত, ফিলিপাইন, চীন সহ বেশ মোট আটটি দেশের মানুষের হাতে। এর বাহিরেও আমাদের বাংলাদেশী নানাগুণীজনের হাতে চারুপটের গহনা পৌছাতে পেরে ভীষণরকম আনন্দিত চারুপটের কর্ণধার ‘জারা’।

তিনি আরও বলেন চারুপট কখনোই আমার নিছক শখের বসে গড়া প্রতিষ্ঠান নয়। আমি রোজ নতুন করে নতুন কিছু শিখছি আর স্বপ্ন দেখছি ভবিষ্যতে চারুপট হয়ে উঠবে বিশ্বমানের পেশাদারী ডিজাইন প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যেই ওয়েবসাইট নির্মাণ এর কাজ শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করে এমন নান্দনিক কাজের বিস্তৃতি ও ব্যাপ্তি বৃদ্ধি করার ভাবনা তার।

উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে জারা বলেন, ক্লাস সেভেন এইট থেকেই ছবি আঁকতাম আমি। আমি ছবি একেই অনেক টাক ইনকাম করতাম। আমি মানুষের ছবি আঁকতাম। ধর্মিও কারণে মায়ের কথায় মানুষের ছবি আঁকা ছেড়ে দিয়। কিন্তু আমি উপার্জন করার একটা যায়গা খুঁজছিলাম। কারণ বাসা থেকে হাত খরচের টাকা আমি নিতে চাইতাম না।

তিনি বলেন, আমার মা যেহেতু অনেক বছর ফ্যাশন ডিজাইনিঙের সাথে জড়িত আছে। ছোট বেলায় যখন মাকে আমি সাহায্য করতাম, তখন দেখতাম মা বিবিয়ানা, সাদাকালো বুটিক, বিবি রাসেলের সাথে কাজ করছে তখন এই এগুলো দেখে ফ্যাশন সেন্সটা আমার ভিতরে জমে ছিলো। তাছাড়া ছোট বেলার ইচ্ছা ছিলো ফ্যশন ডিজাইনার হবো। কিন্তু নানা কারনে ইচ্ছেগুলো হারিয়ে যায়। তারপর বড়ে হয়ে চিন্তা করলাম ফ্যাশন ডিজাইনিঙে পড়াশুনা করবো না কিন্তু আমার নিজের একটা নাম থাকবে। একজন ফ্যাশন আইকন, মানুষ আমাকে জানবে।

জারা আরও বলেন, পড়াশুনা করলেই যে ফ্যাশন আইকন হওয়া যায় ব্যাপারটা কিন্তু তা না। যেমন বিপ্লব ভাইকে দেখেছি। বিপাশা হায়াত আপুকে দেখেছি। বিপ্লব ভাইয়ার কিন্তু পড়াশুনা চারুকলা থেকে। ভাইয়া কিন্তু একজন নাম করা ফ্যাশন আইকন। ওনারা যদি পারেন তাহলে আমি কেন পারবোনা? সেই চিন্তা থেকেই আমি গহনা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা।

তিনি আরও বলেন, আমি নিজের জন্য গহনা বানাতে বানাতে গহনার প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। তারপর থেকেই চারুপটের শুরু টিপ নিয়ে কাজ করা দিয়ে। আর টিপ থেকে আস্তে আস্তে নতুন অনেক কিছু যোগ করলাম। যেটাতে আমি ছবি আঁকতে পারবো গহনায়। নতুন কিছু ক্রিয়েট করতে পারবো। তাছাড়া আমি নতুন কিছু ক্রিয়েট করতে ভালোবাসি।

বিজনেস আওয়ার/২৩ জানুয়ারি, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

‘চারুপট’ নিয়ে বহুদুর যেতে চান জারা!

পোস্ট হয়েছে : ০২:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২১

হাল ফ্যাশানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভিন্নধারার গহনা। নানা উপকরন ব্যবহার করে সম্পূর্ণ হাতে তৈরি করা হয় এসব গহনা আর তা বিক্রি হচ্ছে নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কেবল ছবি দেখে পছন্দ করলেই সময় মত পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে ক্রেতার দোর গোঁড়ায়। পণ্যের গুণগতমান ও নকশায় বৈচিত্র তো রয়েছেই, ফলে অনেকেই এসব ভার্চুয়াল মাধ্যমে কেনাকাটা করছেন সাচ্ছন্দে।

গহনা তৈরির এমনই একটি প্রতিষ্ঠান ‘চারুপট’। করোনা মহামারীতে সবাই যখন গৃহবন্দী অলস সময় পার করছে ঠিক সে সময় সকল ক্লান্তি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন কিছু করার ইচ্ছে থেকেই শুরু হয় চারুপটের পথচলা। ‘জারা’ পেশায় স্থপতি (ডিপ্লোমা) সাথে সাথেই স্থাপত্য নিয়ে পড়াশুনা (ব্যাচেলর) করছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষে। কোঁকড়া চুলের অল্পবয়সী প্রাণোচ্ছল একজন তরুণী।

ভাললাগার জগৎ নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি জানালেন- ভালোবাসেন কবিতা পড়তে, এর বাহিরেও তার বিচরণ রয়েছে দৌড় ও ছবি আঁকিয়েদের জগতে। আর গহনা কিংবা ফ্যাশনে হাতেখড়ি মায়ের হাত ধরে। বেশ ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে নিজের অজান্তেই যেন স্থাপত্য নিয়ে পড়তে চলে আশা।

কিন্তু সবকিছুর মাঝেও ফ্যাশন নিয়ে কাজ করার ইচ্ছেটা বরাবরই সুপ্ত ছিল। সে সুপ্ত ইচ্ছে ডানা মেলল ২০২০ এর মাঝামাঝিতে এসে মাত্র ৫০০ টাকা নিয়ে। কথা ছিল উচ্চশিক্ষার জন্য বাহিরে চলে যাওয়ার কিন্তু করোনা পরিস্থিতি বাধসাধল এর উপর অলস প্রতিটা দিন যেন এক একটি দীর্ঘযুগের মত।

অল্প কিছু উপাদান, ইচ্ছে, অনুপ্রেরণা সবই ঠিক ছিল কিন্তু প্রতিষ্ঠান এর তো একটা নাম দেয়া চায়। নাম সে যায় হোকনা তবে তা এমন হতে হবে যা আমার কাজ আর আমাকে প্রকাশ করবে, সে ভাবনা থেকেই চারুপট শব্দে আটকা পরা। চারুপট শব্দের ইংরেজি অর্থ ক্যানভাস। একজন শিল্পীর কাছে এরচেয়ে প্রিয় কিছু কি বা হতে পারে!

এই অর্ধবছরের পথচলায় সঙ্গী শতাধিক ক্রেতা ও অজস্র শুভাকাঙ্ক্ষী। চারশতাধিক নকশার গহনা ও টিপ তৈরি করেছে চারুপট। বিশেষত্ব- প্রতিটি গহনায় নিজ হাতে তৈরি, যেকোনো নকশার খুব বেশী অনুরুপ কপি করা হয়না, কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইসড নকশা ও গহনা তৈরি করা হয়।

চারুপট কাজ করছে হাতে তৈরি টিপ, গহনা, চাবির রিং সহ হাতে আঁকা নানা পণ্য নিয়ে। এই অল্প কদিনের পথচলার মাঝেই চারুপটের পণ্য পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র, নেপাল, ভারত, ফিলিপাইন, চীন সহ বেশ মোট আটটি দেশের মানুষের হাতে। এর বাহিরেও আমাদের বাংলাদেশী নানাগুণীজনের হাতে চারুপটের গহনা পৌছাতে পেরে ভীষণরকম আনন্দিত চারুপটের কর্ণধার ‘জারা’।

তিনি আরও বলেন চারুপট কখনোই আমার নিছক শখের বসে গড়া প্রতিষ্ঠান নয়। আমি রোজ নতুন করে নতুন কিছু শিখছি আর স্বপ্ন দেখছি ভবিষ্যতে চারুপট হয়ে উঠবে বিশ্বমানের পেশাদারী ডিজাইন প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যেই ওয়েবসাইট নির্মাণ এর কাজ শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করে এমন নান্দনিক কাজের বিস্তৃতি ও ব্যাপ্তি বৃদ্ধি করার ভাবনা তার।

উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে জারা বলেন, ক্লাস সেভেন এইট থেকেই ছবি আঁকতাম আমি। আমি ছবি একেই অনেক টাক ইনকাম করতাম। আমি মানুষের ছবি আঁকতাম। ধর্মিও কারণে মায়ের কথায় মানুষের ছবি আঁকা ছেড়ে দিয়। কিন্তু আমি উপার্জন করার একটা যায়গা খুঁজছিলাম। কারণ বাসা থেকে হাত খরচের টাকা আমি নিতে চাইতাম না।

তিনি বলেন, আমার মা যেহেতু অনেক বছর ফ্যাশন ডিজাইনিঙের সাথে জড়িত আছে। ছোট বেলায় যখন মাকে আমি সাহায্য করতাম, তখন দেখতাম মা বিবিয়ানা, সাদাকালো বুটিক, বিবি রাসেলের সাথে কাজ করছে তখন এই এগুলো দেখে ফ্যাশন সেন্সটা আমার ভিতরে জমে ছিলো। তাছাড়া ছোট বেলার ইচ্ছা ছিলো ফ্যশন ডিজাইনার হবো। কিন্তু নানা কারনে ইচ্ছেগুলো হারিয়ে যায়। তারপর বড়ে হয়ে চিন্তা করলাম ফ্যাশন ডিজাইনিঙে পড়াশুনা করবো না কিন্তু আমার নিজের একটা নাম থাকবে। একজন ফ্যাশন আইকন, মানুষ আমাকে জানবে।

জারা আরও বলেন, পড়াশুনা করলেই যে ফ্যাশন আইকন হওয়া যায় ব্যাপারটা কিন্তু তা না। যেমন বিপ্লব ভাইকে দেখেছি। বিপাশা হায়াত আপুকে দেখেছি। বিপ্লব ভাইয়ার কিন্তু পড়াশুনা চারুকলা থেকে। ভাইয়া কিন্তু একজন নাম করা ফ্যাশন আইকন। ওনারা যদি পারেন তাহলে আমি কেন পারবোনা? সেই চিন্তা থেকেই আমি গহনা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা।

তিনি আরও বলেন, আমি নিজের জন্য গহনা বানাতে বানাতে গহনার প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। তারপর থেকেই চারুপটের শুরু টিপ নিয়ে কাজ করা দিয়ে। আর টিপ থেকে আস্তে আস্তে নতুন অনেক কিছু যোগ করলাম। যেটাতে আমি ছবি আঁকতে পারবো গহনায়। নতুন কিছু ক্রিয়েট করতে পারবো। তাছাড়া আমি নতুন কিছু ক্রিয়েট করতে ভালোবাসি।

বিজনেস আওয়ার/২৩ জানুয়ারি, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: