বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডসের (বিডিওয়েল্ডিং) পর্ষদ পূণ:গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এছাড়া বিগত ২ অর্থবছরের আর্থিক অবস্থাসহ সার্বিক বিষয় নিরীক্ষার জন্য বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) বিএসইসির উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি বিডিওয়েল্ডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিএসইসির ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিডিওয়েল্ডিং ২০১৬ সালের ৪ মে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমেছে। এরপরে ৪ বছর ৭ মাস ৩ দিনেও কোম্পানিটির কোন উন্নতি হয়নি। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির পর্ষদ ব্যর্থ হয়েছে। এ জাতীয় কোম্পানির পর্ষদ পূণ:গঠনে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর নির্দেশনা জারি করে কমিশন।
‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি নিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর জারিকৃত বিএসইসির ওই নির্দেশনার ২-এ বলা হয়েছে, এই ক্যাটাগরিতে পতিত হওয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানির পর্ষদ পূণ:গঠন করা হবে। এই পূণ:গঠনে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালকেরা পরিচালক হওয়ার যোগ্য হবেন এবং কমিশন এক বা একাধিক স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিবে।
এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটিতে ২ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে কমিশন।
চিঠিতে কমিশন জানিয়েছে, ২০১৯ সালে কোন মুনাফা ছাড়াই ১ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে বিডিওয়েল্ডিং। যাতে সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে নগদে ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা লেনদেন করে অনিয়ম করেছে।
এদিকে ব্যালেন্স শীটে ‘Land And Building Construction Held for sale’ দেখানো সত্ত্বেও ক্যাপিটাল গেইন হিসেবে ৩৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা দেখিয়ে বিভ্রান্তকর তথ্য প্রকাশ করেছে বিডিওয়েল্ডিং। এক্ষেত্রে যদি জমি ও ভবন বিক্রি না করে থাকে, তাহলে ক্যাপিটাল গেইনের মিথ্যা তথ্য বা বিক্রি করে থাকলে, ব্যালেন্স শীটে জমি ও ভবনবাবদ সম্পদ দেখিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন……
লোকসানি বিডিওয়েল্ডিংয়ের লভ্যাংশের আড়ালে ফাঁদ
বিডিওয়েল্ডিংয়ের মজুদ পণ্যের সত্যতা পায়নি নিরীক্ষক
আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পর্ষদ পূণ:গঠন করল বিএসইসি
রিং সাইনের উৎপাদন চালুতে পর্ষদ পূণ:গঠন করল বিএসইসি
বিএসইসির চিঠিতে বিডিওয়েল্ডিংয়ের স্থায়ী সম্পদ, মজুদ পণ্য, দেনাদার, ডেফার্ড ট্যাক্স নিয়ে নিরীক্ষকের আপত্তিকর মন্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওইসব সম্পদের বিষয়ে কোন প্রমাণাদি সরবরাহ না করার বিষয়টিও জানানো হয়েছে। এতে করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে সম্পদের অসত্য তথ্য সরবরাহ করে থাকতে পারে বলে মনে করছে কমিশন। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-৩২ লঙ্ঘন করে প্রিলিমিনারি ব্যয়, আইপিও ব্যয়, আয়ের অবরাদ্দকৃত ব্যয়, সুদ ইত্যাদিকে বিলম্বিত ব্যয় (ডেফার্ড এক্সপেন্স) হিসেবে দেখিয়েছে। আর কোম্পানিটিতে অদাবিকৃত ৩৩ লাখ টাকার লভ্যাংশ থাকলেও প্রদানের সক্ষমতা নেই বলে জানিয়েছে কমিশন।
এই কোম্পানিটিতে ৬৮.৯৯ শতাংশ শেয়ার ধারন করছে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়াকে বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকারক ও কমিশনের কাছে অপ্রত্যাশিত বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব বিবেচনায় বিডিওয়েল্ডিংয়ের সর্বশেষ ২ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবসহ (২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০) নিরীক্ষার জন্য কমিশন বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ব্যয়ভার বহন করবে কোম্পানি। একইসঙ্গে কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে নিরীক্ষকের চাহিদা অনুযায়ি সহযোগিতা করতে হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
অন্যদিকে কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোম্পানির কোন সম্পদ বিক্রি, বন্ধকী, হস্তান্তর বা নিষ্পত্তি করা যাবে না বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বিডি ওয়েল্ডিংয়ের বর্তমানে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যে কোম্পানিটির আজ (২৮ জানুয়ারি) লেনদেন শেষে শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ১৭ টাকায়।
বিজনেস আওয়ার/২৮ জানুয়ারি, ২০২১/আরএ