রেজোয়ান আহমেদ, দুবাই থেকে : বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য দুবাইবাসীকে আহবান করেছেন বিশ্ব ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান। এতে করে দুবাইয়ের বিনিয়োগকারীসহ বাংলাদেশ উপকৃত হবে বলে জানান বাংলাদেশ শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের এই শুভেচ্ছাদূত।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) আরব আমিরাতের দু্বাইয়ে ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজের আয়োজিত ৪ দিনব্যাপি রোড শো’র তৃতীয় দিন ‘Scope of Private Equity & Venture Capital Investment in Bangladesh’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এই আহবান করেছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুবাই ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অথোরিটির প্রধান নির্বাহি ব্রায়ান স্টায়ারওয়াল্ট। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভিসিপিইএবির সভাপতি শামীম আহসান ও সঞ্চালনা করেন ইউসিবি ক্যাপিটালের সিইও এসএম রাশিদুল হাসান।
সাকিব বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অনেক উন্নতি হয়েছে এবং আগামিতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে দেশের শেয়ারবাজার ভালো করছে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এসব কারনে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের উত্তম জায়গায় পরিণত হয়েছে। তাই দুবাইবাসীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আহবান করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, একটি উল্লেখযোগ্য যুবক শ্রেণী, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শক্ত আর্থিক অবস্থাসহ নানা ইতিবাচক দিক রয়েছে। এসবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
কেউ কেউ বিনিয়োগের নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে এখন খুব সহজে বিনিয়োগ করা যায়। একইভাবে বিনিয়োগ ফেরতও পাওয়া যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। এছাড়া বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বিনিয়োগবান্ধব। তারা বিনিয়োগের নিরাপত্তা দিতে বদ্ধ পরিকর।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অনেক স্টার্টআপ কোম্পানি গড়ে উঠেছে। যেগুলো এখন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য সবাইকে আহবান করেন তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুবাই ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অথোরিটির প্রধান নির্বাহি ব্রায়ান স্টায়ারওয়াল্ট বলেন, করোনা মহামারি বিশ্বকে বিপর্যস্ত করেছে। তবে এর সুফলও রয়েছে। বিশ্বব্যাপি প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, আরব আমিরাত ও বাংলাদেশ বন্ধু রাষ্ট্র। দুই দেশেরই চলতি বছর সুবর্ণজয়ন্তী সামনে। বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক সম্ভাবনাময়। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রযুক্তিতে বিশেষ নজর দিতে হবে। একইসঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শামীম আহসান বলেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইক্যুইটি নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ নিয়ে আসছে এবং উদ্ভাবনী উদ্যোক্তাদের বড় ধরনের রিটার্নের সুযোগ দিচ্ছে। বাংলাদেশের ই-কমার্স মার্কেট প্রতিদিনই বড় হচ্ছে। বর্তমান মার্কেট ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের। অনলাইনভিত্তিক প্লাটফর্মে নতুন নতুন ক্রেতা তৈরি হচ্ছে। আসছে নতুন বিনিয়োগ। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো জোর দিচ্ছে অনলাইন কেনাকাটার ওপর। চলমান মহামারি করোনায় অনলাইনে কেনাকাটার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তাই আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে ই-কমার্স মার্কেট ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। আর তাই ভেঞ্চার ক্যাপিটালে বিদেশিদের বিনিয়োগের বড় সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএসইসির কমিশনার কামালুজ্জামান, নির্বাহি পরিচালক মাহবুবুল আলম, অর্থমন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব নাহিদ হোসাইন, সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার, এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মাহতাবুর রহমান, এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালক আদনান ইমাম, বিএমবিএ সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান, এলআর গ্লোবাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চীফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার রিয়াজ ইসলাম, আইল্যান্ড সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ইউসিবি স্টক অ্যান্ড ব্রোকারেজের সিইও রহমত পাশা, শাহজালাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান পরামর্শক মোহাম্মদ ইউনুস প্রমূখ।
চারদিনব্যাপি এই রোড শো গত মঙ্গলবার শুরু হয়। কাল শেষ দিনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বৈঠক। এখানে বিনিয়োগকারীদের ছোট ছোট গ্রুপ অংশ নেবে। পাশাপাশি দুবাইতে ইউসিবি স্টক অ্যান্ড ব্রোকারেজের ডিজিটাল বুথ উদ্বোধন করা হবে।
বিজনেস আওয়ার/১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১/আরএ