বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : তিন বছর মেয়াদী ঘোড়শাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট রিপাওয়ারিং প্রকল্প দুই বছর সময় বাড়িয়েও শেষ করা যায়নি। এই প্রকল্পে সংশোধনী প্রস্তাবে সময় চাওয়া হচ্ছে আরও একবছর। এবার সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা গেলে তিন বছরের প্রকল্পটি শেষ হবে ছয় বছরে।
এর আগে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়েনি। তবে এবারে মেয়াদের পাশাপাশি ব্যয়ও বাড়ছে— টাকার অঙ্কে তা ৪৩৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মূল প্রকল্পের সময়সীমা অনুযায়ী কাজ শেষ না হলে গত বছরের ডিম্বেরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মেয়াদ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তাতেও কাজ না হলে এখন প্রকল্পের প্রথম সংশাধনীতে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে।
সেই সঙ্গে বাড়ছে ব্যয়। এরই মধ্যে সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় এটি উপস্থাপন করা হতে পারে।
নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে ১৯৮৬ সালে স্থাপন করা হয় স্টিমটারবাইনের তৃতীয় বিদ্যুৎ ইউনিট। সে সময় এর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ২১০ মেগাওয়াট। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষমতা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১৭০ মেগাওয়াটে।
পরে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টে রূপান্তর করতে ‘ঘোড়শাল তৃতীয় ইউনিট রিপাওয়ারিং’ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। মূল প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল।
এটি বাস্তবায়নে বায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে চীনের এইচএসবিসি ব্যাংক অর্থায়নের সহায়তা করে। পরে নির্দিষ্ট মেয়াদে কাজ শেষ না হওয়ায় পরিকল্পনা কমিশন ২ বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করে দেয়।
এর মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়ায় ৮৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, বাস্তব অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করতে এখন ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কেবল সময় নয়, সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবও করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় হ্রাস-বৃদ্ধি এবং নতুন আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করতে হবে।
মূল প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৮৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, চীনের ঋণ থেকে দুই হাজার ১৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তহবিল থেকে ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য ছিল।
শুরু থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির অনুকূলে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ১৮০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ পর্যায় এসে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ৪৩৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট প্রকল্প ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে দুই হাজার ৯৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
সংশোধনী প্রস্তাবে পর্যায়ে সরকারি তহবিলের অর্থের পরিমাণ ঠিক থাকলেও সংস্থার নিজস্ব তহবিলের ১৩২ কোটি ২৫ লাখ টাকা কমিয়ে ধরা হচ্ছে ২৮০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে চীনের ঋণের ক্ষেত্রে ৫৬৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ২ হাজার ৫৮৯ কোটি ৭ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বে থাকা পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদ্য সাবেক সদস্য (সিনিয়র সচিব) সাহিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে বিদ্যমান বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা আরও ২৬০ মেগাওয়াট বাড়বে। এই দিকটি বিবেচনা করেই সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।
বিজনেস আওয়ার/১৫ জুন, ২০২০/এ