বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে গ্রুপের সদস্য ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), ইউএন উইমেন এবং ইউনাইটেড ন্যাশনাল গ্লোবাল কমপ্যাক্ট এর সাথে অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে ষষ্ঠবারের মতো “রিং দ্যা বেল ফর জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি” অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানের ভবিষ্যৎ গঠনে নারীর ভূমিকার উপর জোর দেয়ার পাশাপাশি বার্ষিক ইভেন্টটি লিঙ্গ সাম্যতা, টেকসইতা এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক বিকাশের মধ্যে আন্তঃ যোগাযোগকে তুলে ধরেছে।
এই বছরের অনুষ্ঠানটি একটি সঙ্কটজনক মূহুর্তে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কারণ কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব নারীদেরকে অস্বাভাবিকভাবে প্রভাবিত করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে মহিলারা বাড়ির বাড়তি বোঝা বহন করেছেন এবং পুরুষদের হারের প্রায় ১.৮ গুণ বেশি হারে তাদের চাকুরী হারিয়েছেন। গবেষণায় আরও দেখা যায় যে, বিশ্বজুড়ে স্বল্প মাত্রায় ব্যবহৃত অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পদের মধ্যে মহিলা প্রতিভা অন্যতম এবং মহামারীতে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ছোট ছোট পথ তৈরীর মাধ্যমে বৈশ্বিক লিঙ্গ ব্যবধান বন্ধ করতে দ্রুত ও জোরালো ফলাফল অর্জন করতে পারে, যাতে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মোট দেশজ উৎপাদিনে ১২ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
“আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জসহ বিশ্বের প্রায় ১০০ টিরও বেশি স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে জেন্ডার ইক্যুয়ালিটির জন্য ‘রিং দ্যা বেল’ আয়োজনে আইএফসি এবং অন্যান্য অংশীদারদের সাথে একত্রিত হয়েছে।” বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান জনাব শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এসব কথা বলেন। “আমরা লিঙ্গ বৈষম্য বন্ধ করতে এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বিশেষতঃ বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত কোম্পানীগুলোতে মহিলাদের ভূমিকা প্রচারে সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছি। এটি বেসরকারি কোম্পানিসমূহের মানোন্নয়নে এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।” তিনি আরো যোগ করেন।
২০২০ সালের আইএফসি ডিএসই’র এক সমীক্ষায় ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের বোর্ড পরিচালকের প্রায় ১৮ শতাংশই ছিলেন মহিলা, তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের বোর্ডে মহিলাদের অংশগ্রহণের বিবেচনায়, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বিশ্বব্যাপী গড় ১৭ শতাংশের চেয়ে উচ্চতর গড়ের সাথে শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে মহিলা বোর্ড পরিচালকদের মাত্র ৫ শতাংশ বর্তমানে স্বতন্ত্র পরিচালকের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান, মোঃ ইউনুসুর রহমান বলেন, “ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন, ইউএন উইমেন এন্ড গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাথে অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড টানা ষষ্ঠ বছরের জন্য আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস ২০২১ উদ্যাপনের চূড়ান্ত লক্ষ্য নিয়ে রিং দ্যা বেল ফর জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি শীর্ষক এই মূল্যবান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। লিঙ্গ সমতা একটি মৌলিক মানবাধিকার এবং মহিলারা বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং দক্ষতা অর্জন করে যা সকলের পক্ষে আরও ভাল কাজ করে এমন সিদ্ধান্তগুলোতে অবদান রাখে, যা আজ আগের তুলনায় আরও বেশি স্বীকৃত। মহিলাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন টেকসই উন্নয়নের মূলচালক এবং কর্পোরেট টেকসই ইস্যু হিসেবে বিবেচিত হয়। তা স্বত্তেও জাতিসংঘের একটি নতুন টেকসই স্টক এক্সচেঞ্জের গবেষণায় দেখা গেছে যে বিশ্বজুড়ে কর্পোরেশনগুলোতে মহিলারা এখনও মূল পদে উপস্থাপিত হন। বিশ্বব্যাপী নারীরা কেবল নির্বাহী পদে খুব কম অনুপাতে প্রতিষ্ঠিত। “পোট্রেট অব বাংলাদেশ’স ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডাইরেক্টর” শীর্ষক একটি আইএফসি প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে বোর্ডের প্রায় ১৮ শতাংশ আসন মহিলা পরিচালকদের হাতে রয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ সর্বশেষ বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ সূচকেও প্রতিবেশীদের শীর্ষে ছিল। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ১৫৩ টি দেশের মধ্যে ৫০ তম স্থান অর্জন করেছে।”
তিনি আরও বলেন, এই বছর ‘রিং দ্যা বেল ইভেন্টটি একটি সংকটময় মূহুর্তে এসেছে। আমরা জানি যে এই ধরনের মহামারী এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নারীদের প্রভাবিত করে। আইএফসি’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, পুরুষদের তুলনায় নারীরা প্রায় ১.৮ গুণ হারে চাকুরী হারিয়েছেন। সুতরাং, আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে এই বার আগের তুলনায় “রিং দ্যা বেল ফর জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি” উদ্যাপনের বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
প্যানেল আলোচনার ডিএসই’র পরিচালক মিসেস সালমা নাসরিন এনডিসি বলেছেন, “যখন আমরা নারী নেতাদের অবদানের কথা স্মরণ করি তখন আমাদের অবশ্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মরণ করতে হবে যিনি কোভিড-১৯ মহামারীকালে অসাধারণ নেতৃত্বের জন্য শীর্ষ তিন কমনওয়েলথ নেতাদের একজন।”
বাংলাদেশে মানসম্পন্ন কর্পোরেট সূশাসনের অনুশীলন, গ্রহণ এবং প্রচারের জন্য আইএফসি, স্টক এক্সচেঞ্জ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং কোম্পানিসহ একাধিক স্টেকহোল্ডারদের সাথে কাজ করছে। সম্প্রতি, আইএফসি একটি সমন্নিত এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ণেন্স (ইএসজি) প্রকল্পও চালু করেছে যার লক্ষ্য দেশে ভাল ইএসজি অনুশীলনকে উৎসাহ দেওয়া, টেকসই বাজার তৈরি করা, এবং লিঙ্গ-বৈচিত্রের বিভিন্ন সংস্থাগুলোকে প্রমোট করা।
বিশ্বব্যাপী, আইএফসি বেসরকারী ক্ষেত্র এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের সাথে মহামারী দ্বারা জেন্ডার ব্যবধানকে বাড়ানো থেকে রোধ করার জন্য কাজ করছে, যার মধ্যে রয়েছে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এবং চাকরি সংরক্ষণের জন্য ৮ বিলিয়ন এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্মের জন্য ৪ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে। আইএফসি ন্যায়সঙ্গত সঙ্কটে সাড়া ও পুনরুদ্ধারের বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করে এবং নিজস্ব বিনিয়োগে লিঙ্গ ভারসাম্যকে অগ্রাধিকার দেয়। নারীরা বর্তমানে ক্লায়েন্ট ভিত্তিক কোম্পানির বোর্ডগুলিতে আইএফসি মনোনীত পরিচালক কোম্পানির ৪৯ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করেন, ২০৩০ এর আগে সালে কর্পোরেট লক্ষ্যমাত্রা ৫০ শতাংশে পৌঁছানো।
২০২১ সালের ‘রিং দ্য বেল ফর জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি’ ইভেন্টটি আইএফসি, ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ এক্সচেঞ্জ, টেকসই স্টক এক্সচেঞ্জ (এসএসই) ইনিশিয়েটিভ, জাতিসংঘের গ্লোবাল কমপ্যাক্ট, ইউএন উইমেন এবং ইটিএফ-এর নারীদের মধ্যে বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বের সপ্তম বছর।
বিজনেস আওয়ার/১৫ মার্চ, ২০২১/আরএ