বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা এবং সরকার উৎখাতের হুমকির অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ চার নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ মামলাটি আমলে নেন।
মামলার অন্য দুই আসামি হলেন-রাজশাহী নগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। বিচারক সাইফুল ইসলাম শুনানি শেষে মামলা আমলে নিলেও আজ এ ব্যাপারে কোনো আদেশ দেননি।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোসাব্বিরুল ইসলামের হয়ে মামলাটি আদালতে দাখিল করেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসলাম সরকার।
তিনি বলেন, আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছেন। পরে আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলাম মামলার বাদীর জবানবন্দি নেন। তবে আদালত তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আদেশ দেননি। নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদেশ দেওয়া হবে।
আদালত চত্বরে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, মিনু সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা এবং সরকার উৎখাতের হুমকি দিয়েছেন। তারা আইনি প্রক্রিয়ায় এর বিচার চান। এর পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চান।
এর আগে ৯ মার্চ রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল জলিলের কাছে পেনাল কোডের ১২৩ (এ)/ ১২৪ (এ)/৩২ ধারায় বিএনপির এই চার নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ জমা দেন অ্যাডভোকেট মুসাব্বিরুল ইসলাম। জেলা প্রশাসকের দফতর হয়ে সেই আবেদন যায় নগর পুলিশ কমিশনারের দফতরে। সেখান থেকে যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএনপির চার নেতার নামে মামলার অনুমোদন দেয়।
প্রসঙ্গত, গত ২ মার্চ বিকেলে নগরীর মাদ্রাসা মাঠ সংলগ্ন একটি কনভেনশন সেন্টারে রাজশাহী নগর বিএনপির আয়োজনে বিভাগীয় সমাবেশ হয়। নগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনের সঞ্চালনায় ওই সমাবেশে বক্তব্য দেন মিজানুর রহমান মিনু। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মিনু বলেন, ‘আজ রাত, কাল আর সকাল নাও হতে পারে। ’৭৫ মনে নাই?’ সেই সমাবেশে মিনু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও কটাক্ষ করে বক্তব্য দেন।
মিনুর এই বক্তব্য প্রচারের পর থেকেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে নগর আওয়ামী লীগ। পরদিন (৩ মার্চ) এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সেখানে মিনুকে জাতির সামনে ক্ষমা চাইতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ক্ষমা না চাইলে মিনুর বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দেন লিটন।
এরই মধ্যে গত ৭ মার্চ বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে দুঃখ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন মিজানুর রহমান মিনু। ওই বিবৃতিতে তার বক্তব্যে ষড়যন্ত্র না খোঁজার অনুরোধ জানান মিনু।
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদুস তালুকদার দুলুসহ অন্যরাও একইভাবে বক্তব্য দিয়ে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করেন এবং বেআইনিভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকার উৎখাতের হুমকি দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাসহ নির্বাচিত সরকার উৎখাতের প্রকাশ্য ঘোষণা ও হুমকি দিয়ে তারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন। যা বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি বিপদজনক ও হুমকি স্বরূপ
বিজনেস আওয়ার/১৬ মার্চ, ২০২১/এ