ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইতিহাসের ঘৃণ ও কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন আজ

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১
  • 68

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। ইতিহাসে একটি ঘৃণ ও কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন আজ। রাতের আঁধারে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের ওই গণহত্যার মাধ্যমে মুক্তিকামী বাঙালির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন শুরু হয় এই রাতে। ভয়াবহ ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্মরণ করে বাঙালি জাতি।

‘অপারেশন সার্চ লাইট’ ছিল বাঙালির একটি প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার এক নারকীয় পরিকল্পনা। পোড়া মাটি নীতি নিয়ে নেমেছিলো পাকিস্তানি ঘাতকরা। সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পাকিস্তানি নর ঘাতক জেনারেল টিক্কা খান বলেছিলেন, ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানের মাটি চাই, মানুষ চাই না’। ফলশ্রুতিতে বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে বিভীষিকাময় ভয়াল কালরাত্রি।

রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে বাঙালি নেতৃত্বের সঙ্গে ১৬ মার্চ থেকে আলোচনার নাটকের পর ২৫ তারিখ সন্ধ্যায় হত্যাযজ্ঞ চালানোর নির্দেশ দিয়ে গোপনে পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্দেশে বিমানে ওঠেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। ইয়াহিয়া নিরাপদে পশ্চিম পাকিস্তানে নামতেই পূর্ব পাকিস্তানে তৎপর হয়ে ওঠে তার বাহিনী।

২৫ মার্চের সেই রাতে নিরীহ ঢাকাবাসী যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী। তাদের জলপাই রঙের ট্যাংকগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ-ইপিআর ব্যারাকের দিকে ধেয়ে যেতে থাকে। রচিত হয় এক কুখ্যাত ইতিহাস। রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে জিপ-ট্রাক বোঝাই করে পাকিস্তানি সৈন্যরা ট্যাংকসহ আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে ওঠে আধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার।

ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দফতর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে তখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লাশের পর লাশ। মধ্যরাতের ঢাকা তখন লাশের শহর।

সে রাতে সোয়া ১টার দিকে একদল সৈন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে যায়। রাত ১টা ২৫ মিনিটের দিকে বাড়ির টেলিফোন লাইন কেটে দেয়া হয়। বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে নস্যাৎ করে দিতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় হায়েনার দল। এর আগেই, ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর, অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন।

বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণার ভিত্তিতেই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। ২৫ মার্চের ভয়াল সেই রাতে কত বাঙালিকে প্রাণ দিতে হয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে— এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। তবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকার ভাষ্য, কেবল ২৫ মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় একলাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও কিছু তথ্য পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তারা যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়— ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।

এ বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবসে’র এই দিনটিতে সীমিত কিছু কর্মসূচি পালন করা হবে। সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। এ রাতে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা যাবে না।

এছাড়া দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিবসটি পালন করতে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

জাতীয় জাদুঘরে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সারাদেশে আয়োজন করা হয়েছে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। এছাড়া ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়গুলোতে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে কর্মসূচি পালন করা হবে।

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃৃতিক সংগঠন ‘কালরাত’ স্মরণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/২৫ মার্চ, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ইতিহাসের ঘৃণ ও কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন আজ

পোস্ট হয়েছে : ১০:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : আজ ভয়াল ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। ইতিহাসে একটি ঘৃণ ও কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন আজ। রাতের আঁধারে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের ওই গণহত্যার মাধ্যমে মুক্তিকামী বাঙালির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন শুরু হয় এই রাতে। ভয়াবহ ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্মরণ করে বাঙালি জাতি।

‘অপারেশন সার্চ লাইট’ ছিল বাঙালির একটি প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার এক নারকীয় পরিকল্পনা। পোড়া মাটি নীতি নিয়ে নেমেছিলো পাকিস্তানি ঘাতকরা। সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পাকিস্তানি নর ঘাতক জেনারেল টিক্কা খান বলেছিলেন, ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানের মাটি চাই, মানুষ চাই না’। ফলশ্রুতিতে বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে বিভীষিকাময় ভয়াল কালরাত্রি।

রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে বাঙালি নেতৃত্বের সঙ্গে ১৬ মার্চ থেকে আলোচনার নাটকের পর ২৫ তারিখ সন্ধ্যায় হত্যাযজ্ঞ চালানোর নির্দেশ দিয়ে গোপনে পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্দেশে বিমানে ওঠেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। ইয়াহিয়া নিরাপদে পশ্চিম পাকিস্তানে নামতেই পূর্ব পাকিস্তানে তৎপর হয়ে ওঠে তার বাহিনী।

২৫ মার্চের সেই রাতে নিরীহ ঢাকাবাসী যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী। তাদের জলপাই রঙের ট্যাংকগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ-ইপিআর ব্যারাকের দিকে ধেয়ে যেতে থাকে। রচিত হয় এক কুখ্যাত ইতিহাস। রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে জিপ-ট্রাক বোঝাই করে পাকিস্তানি সৈন্যরা ট্যাংকসহ আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে ওঠে আধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার।

ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দফতর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে তখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লাশের পর লাশ। মধ্যরাতের ঢাকা তখন লাশের শহর।

সে রাতে সোয়া ১টার দিকে একদল সৈন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে যায়। রাত ১টা ২৫ মিনিটের দিকে বাড়ির টেলিফোন লাইন কেটে দেয়া হয়। বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে নস্যাৎ করে দিতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় হায়েনার দল। এর আগেই, ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর, অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন।

বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণার ভিত্তিতেই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। ২৫ মার্চের ভয়াল সেই রাতে কত বাঙালিকে প্রাণ দিতে হয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে— এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। তবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকার ভাষ্য, কেবল ২৫ মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় একলাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও কিছু তথ্য পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তারা যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়— ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।

এ বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবসে’র এই দিনটিতে সীমিত কিছু কর্মসূচি পালন করা হবে। সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। এ রাতে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা যাবে না।

এছাড়া দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিবসটি পালন করতে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

জাতীয় জাদুঘরে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সারাদেশে আয়োজন করা হয়েছে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। এছাড়া ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়গুলোতে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে কর্মসূচি পালন করা হবে।

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃৃতিক সংগঠন ‘কালরাত’ স্মরণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/২৫ মার্চ, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: