ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চার শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ পাবেন নতুন উদ্যোক্তারা

  • পোস্ট হয়েছে : ০১:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ ২০২১
  • 67

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : নতুন উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ চার শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ দিতে ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ নামে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব উৎস থেকে স্টার্ট-আপ ফান্ডের জন্য ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবেন।

সোমবার (২৯ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ গঠনসহ সার্বিক বিষয়ে নীতিমালা জারি করেছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং স্ব-কর্মসংস্থান উৎসাহিত করতে ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ গঠনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের।

প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে এ তহবিলের আকার বাড়ানো হবে। এই তহবিলের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর যা আবর্তনযোগ্য। আর তফসিলি ব্যাংকগুলো তাদের বার্ষিক নিট মুনাফা থেকে এক শতাংশ অর্থ স্থানান্তর করে নিজস্ব ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ গঠন করবে।

দেশের সব তফসিলি ব্যাংক এ তহবিল থেকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা গ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণে আগ্রহী ব্যাংককে এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের অংশগ্রহণ চুক্তি করতে হবে।

তফসিলি ব্যাংকের ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ গঠন সংক্রান্ত নীতিমালা
তফসিলি ব্যাংকগুলো ২০২১ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের প্রতি বছর তাদের পরিচালন মুনাফা (নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী) থেকে এক শতাংশ হারে অর্থ ‌‘স্টার্ট-আপ’ উদ্যোক্তাদের অনুকূলে বিতরণের লক্ষ্যে তহবিল হিসেবে সংরক্ষণ করবে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর ভিত্তিক বাৎসরিক হিসাব চূড়ান্ত পরিচালন মুনাফা থেকে বাধ্যতামূলকভাবে উক্ত এক শতাংশ তহবিল স্থানান্তর শুরু করতে হবে।

‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা
১। উদ্যোক্তার প্রস্তাবিত উদ্যোগ সম্পূর্ণ নতুন ও সৃজনশীল হতে হবে।

২। আবেদনকারী নতুন উদ্যোক্তাকে সরকারি কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত বেসরকারি উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোক্তা উন্নয়ন, ব্যবসা পরিচালনা, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি বিষয়ে অথবা অন্যান্য কারিগরি বিষয় (পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, যন্ত্রপাতি মেরামত ইত্যাদি) প্রশিক্ষণ গ্রহণের সার্টিফিকেট থাকতে হবে।

৩। প্রাতিষ্ঠানিক কারিগরি শিক্ষা না থাকলে উদ্যোক্তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও নতুন উদ্যোগ পরিচালনার সক্ষমতা থাকতে হবে।

৪। উদ্যোক্তার বয়স কমপক্ষে ২১ হতে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর হতে হবে।

৫। প্রস্তাবিত উদ্যোগ/প্রকল্পে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকতে হবে।

৬। সিআইবি রিপোর্ট অনুযায়ী আগ্রহী উদ্যোক্তাগণ কোন ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট ঋণ খেলাপি হিসেবে গণ্য হবেন না।

পুনঃঅর্থায়নের সুদ হার
গ্রাহক পর্যায়ে এই তহবিলের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ চার শতাংশ। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই তহবিল পাবে ০.৫০ শতাংশ সুদে। তবে তহবিলের অর্থ সদ্ব্যবহার হয়নি মর্মে প্রতীয়মান হয় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সে পরিমাণ অর্থের উপর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নিকট থেকে অতিরিক্ত দুই শতাংশ হারে সুদসহ এককালীন আদায় করবে।

গ্রাহক সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ঋণ পাবে। অনুমোদিত ঋণ এককালীন বিতরণ করা যাবে না। প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হয়ে ন্যূনতম তিন কিস্তিতে বিতরণ করতে হবে। একই গ্রাহক একাধিক প্রকল্প বা একাধিক ব্যাংক হতে ঋণ পাবেন না।

জামানত
ঋণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গ্যারান্টি অথবা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ অথবা কারিগরী প্রশিক্ষণের সনদকে জামানত হিসেবে বিবেচনা করা যাবে।

ব্যক্তিগত গ্যারান্টি
ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ঋণগ্রহীতার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় গৃহীত ঋণের আদায় সুরক্ষার লক্ষ্যে উভয় পক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যক্তির অঙ্গীকারনামা থাকতে হবে। তবে, দুজনের অধিক ব্যক্তিগত গ্যারান্টিকে বাধ্যতামূলক করা যাবে না। ডিগ্রিধারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ অথবা কারিগরী প্রশিক্ষণের মূল সনদ জামানত হিসেবে ব্যাংকে জমা রাখতে হবে।

পরিশোধ পদ্ধতি
ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃক গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া করা হলে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রেও গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়নকৃত অর্থ গ্রেস পিরিয়ড শেষে ত্রৈমাসিক/ষাণ্মাসিক কিস্তিতে আদায় করা হবে। পরিশোধ সময় অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখে সুদ/মুনাফাসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে আদায় করা হবে।

বিজনেস আওয়ার/৩০ মার্চ, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

চার শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ পাবেন নতুন উদ্যোক্তারা

পোস্ট হয়েছে : ০১:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : নতুন উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ চার শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ দিতে ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ নামে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব উৎস থেকে স্টার্ট-আপ ফান্ডের জন্য ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবেন।

সোমবার (২৯ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ গঠনসহ সার্বিক বিষয়ে নীতিমালা জারি করেছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি এবং স্ব-কর্মসংস্থান উৎসাহিত করতে ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ গঠনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের।

প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে এ তহবিলের আকার বাড়ানো হবে। এই তহবিলের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর যা আবর্তনযোগ্য। আর তফসিলি ব্যাংকগুলো তাদের বার্ষিক নিট মুনাফা থেকে এক শতাংশ অর্থ স্থানান্তর করে নিজস্ব ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ গঠন করবে।

দেশের সব তফসিলি ব্যাংক এ তহবিল থেকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা গ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণে আগ্রহী ব্যাংককে এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের অংশগ্রহণ চুক্তি করতে হবে।

তফসিলি ব্যাংকের ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ গঠন সংক্রান্ত নীতিমালা
তফসিলি ব্যাংকগুলো ২০২১ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের প্রতি বছর তাদের পরিচালন মুনাফা (নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী) থেকে এক শতাংশ হারে অর্থ ‌‘স্টার্ট-আপ’ উদ্যোক্তাদের অনুকূলে বিতরণের লক্ষ্যে তহবিল হিসেবে সংরক্ষণ করবে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর ভিত্তিক বাৎসরিক হিসাব চূড়ান্ত পরিচালন মুনাফা থেকে বাধ্যতামূলকভাবে উক্ত এক শতাংশ তহবিল স্থানান্তর শুরু করতে হবে।

‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা
১। উদ্যোক্তার প্রস্তাবিত উদ্যোগ সম্পূর্ণ নতুন ও সৃজনশীল হতে হবে।

২। আবেদনকারী নতুন উদ্যোক্তাকে সরকারি কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত বেসরকারি উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোক্তা উন্নয়ন, ব্যবসা পরিচালনা, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি বিষয়ে অথবা অন্যান্য কারিগরি বিষয় (পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, যন্ত্রপাতি মেরামত ইত্যাদি) প্রশিক্ষণ গ্রহণের সার্টিফিকেট থাকতে হবে।

৩। প্রাতিষ্ঠানিক কারিগরি শিক্ষা না থাকলে উদ্যোক্তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও নতুন উদ্যোগ পরিচালনার সক্ষমতা থাকতে হবে।

৪। উদ্যোক্তার বয়স কমপক্ষে ২১ হতে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর হতে হবে।

৫। প্রস্তাবিত উদ্যোগ/প্রকল্পে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকতে হবে।

৬। সিআইবি রিপোর্ট অনুযায়ী আগ্রহী উদ্যোক্তাগণ কোন ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট ঋণ খেলাপি হিসেবে গণ্য হবেন না।

পুনঃঅর্থায়নের সুদ হার
গ্রাহক পর্যায়ে এই তহবিলের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ চার শতাংশ। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই তহবিল পাবে ০.৫০ শতাংশ সুদে। তবে তহবিলের অর্থ সদ্ব্যবহার হয়নি মর্মে প্রতীয়মান হয় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সে পরিমাণ অর্থের উপর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নিকট থেকে অতিরিক্ত দুই শতাংশ হারে সুদসহ এককালীন আদায় করবে।

গ্রাহক সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ঋণ পাবে। অনুমোদিত ঋণ এককালীন বিতরণ করা যাবে না। প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হয়ে ন্যূনতম তিন কিস্তিতে বিতরণ করতে হবে। একই গ্রাহক একাধিক প্রকল্প বা একাধিক ব্যাংক হতে ঋণ পাবেন না।

জামানত
ঋণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গ্যারান্টি অথবা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ অথবা কারিগরী প্রশিক্ষণের সনদকে জামানত হিসেবে বিবেচনা করা যাবে।

ব্যক্তিগত গ্যারান্টি
ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ঋণগ্রহীতার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় গৃহীত ঋণের আদায় সুরক্ষার লক্ষ্যে উভয় পক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যক্তির অঙ্গীকারনামা থাকতে হবে। তবে, দুজনের অধিক ব্যক্তিগত গ্যারান্টিকে বাধ্যতামূলক করা যাবে না। ডিগ্রিধারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ অথবা কারিগরী প্রশিক্ষণের মূল সনদ জামানত হিসেবে ব্যাংকে জমা রাখতে হবে।

পরিশোধ পদ্ধতি
ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃক গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া করা হলে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রেও গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়নকৃত অর্থ গ্রেস পিরিয়ড শেষে ত্রৈমাসিক/ষাণ্মাসিক কিস্তিতে আদায় করা হবে। পরিশোধ সময় অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখে সুদ/মুনাফাসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে আদায় করা হবে।

বিজনেস আওয়ার/৩০ মার্চ, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: