বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের সালথায় সহিংসতার ঘটনায় ৪ হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বুধবার (৭ এপ্রিল) সকালে সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, থানায় হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করে। মামলার এজাহারভুক্ত ১৩ আসামিকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।
উল্লেখ্য, পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত ও জনৈক মাওলানা গ্রেফতারের গুজব ছড়িয়ে হামলা চালানো হয় ফরিদপুরের সালথার বিভিন্ন সরকারি দফতরে ও কর্মকর্তাদের বাসভবনে। ব্যাপক ধংসযজ্ঞ শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও এলাকার অবস্থা এখনো থমথমে।
স্থানীয়রা বলেন, সোমবার রাতে যে তাণ্ডব চলেছে; সে কথা কেউ ভুলতে পারছেন না। সবার মাঝেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। যদি বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারপরও আতঙ্কে রয়েছি আমরা। এলাকায় এখন পড়ে আছে ক্ষত চিহ্ন। উপজেলা সদরের বাতাসে পোড়া গন্ধ রয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা কাচ আর আসবাবপত্রের টুকরা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করতে দুই আনসার সদস্য ও ব্যক্তিগত সহকারীকে নিয়ে সালথা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি ফুকরা বাজারে যান। সেখানে তিনি যাওয়ার পর মানুষের জটলা সৃষ্টি হয়।
এ অবস্থায় তিনি ওই স্থান থেকে ফিরে আসেন এবং সেখানে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পাঠান। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত জনতা এসআই মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালান। এতে তার মাথা ফেটে যায়।
পরে স্থানীয় জনতা পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত ও বাহিরদিয়া মাদরাসার মাওলানা আকরাম হোসেন এবং জনৈক আরেক মাওলানার গ্রেফতারের গুজব ছড়িয়ে দেয়। গুজবে হাজারো মানুষ এসে থানা ঘেরাও করে। সেই সঙ্গে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সালথা উপজেলা সদর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন ২০ জন। আহতদের মধ্যে জুবায়ের হোসেন (২৫) নামে এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। জুবায়ের হোসেন রামকান্তপুর গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েকটি মসজিদের মাইক থেকে এবং বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন থেকে ফেসবুক লাইভে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন নিহত ও মাওলানাকে গ্রেফতারের গুজব ছড়িয়ে হাজার হাজার মাদরাসা ছাত্র, মুসল্লি ও জনতাকে ডেকে জড়ো করা হয় উপজেলা চত্বরে। এরপর দফায় দফায় হামলা চালানো হয় সালথার বিভিন্ন সরকারি দফতরে।
সোমবার রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা চত্বরে লাঠিসোটা নিয়ে প্রবেশ করে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তারা।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তিন ঘণ্টাব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তাদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি উপজেলা কমপ্লেক্সের গাছপালা ও বঙ্গবন্ধু ম্যুরালসহ নানা স্থাপনা।
সালথা থানা পুলিশের পাশাপাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা পুলিশসহ র্যাব, আনসার সদস্যরা ৫৮৮ রাউন্ড শটগানের গুলি, ৩২ রাউন্ড গ্যাস গান, ২২টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৭৫ রাউন্ড রাইফেলের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিব সরকার বলেন, স্থানীয় জনতা পুলিশের গুলিতে নিহত ও মাওলানাকে গ্রেফতারের পর তাকে মারপিট করা হচ্ছে গুজব ছড়িয়ে দেয়। এমন গুজবে থানা ঘেরাও করে। পরে আমার বাসভবন, উপজেলা পরিষদ, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় আমার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। গুজব ছড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে।
বিজনেস আওয়ার/০৭ এপ্রিল, ২০২১/এ