বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে একই শর্তে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও ৭ দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আন্তর্জাতিক বিশেষ ফ্লাইট চলাচল, ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ পূর্বের সকল বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ৫ থেকে ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত সীমিত বিধিনিষেধ দেয়া হলেও তা খুব একটা কার্যকর হয়নি। পরে ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ।
এটি কার্যকর করতে সরকারের ১৩ দফা বিধি নিষেধে বলা হয়, অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা, চিকিৎসা সেবা, মরদেহ দাফন বা সৎকার এবং টিকা কার্ড নিয়ে টিকার জন্য যাওয়া) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
এরইমধ্যে রোববার রাতে এক বৈঠকে চলমান বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। মেয়াদ বাড়াতে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সেখানে লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
বিধিনিষেধ পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। নতুন মেয়াদেও এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।
১. সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ও সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে। (ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে ১৩ এপ্রিল আরেকটি নির্দেশনা জারি করা হয়)।
২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। (আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ এবং দেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে ভার্চুয়ালি সীমিত পরিসরে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট)
৩. সকল প্রকার পরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে, পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
৪. শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে।
৫. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
৬. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
৭. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোরর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ (সরাসরি/অনলাইন) করা যাবে। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে।
৮. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৯. বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে।
১০. সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।
১১. স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন।
১২. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুম্মা ও তারাবি নামাজের জমায়েত বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে।
১৩. এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারে।
বিজনেস আওয়ার/২০ এপ্রিল, ২০২১/এ