বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে কয়েক মাস ধরে শেয়ার কারসাজি নিয়ে আলোচনার শীর্ষে বীমা খাত। যৌক্তিক কারন ছাড়াই একটি চক্র এই খাতের শেয়ার দর বাড়াচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে নিরব নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
কমিশনের এই নিরব ভূমিকার কারনেই ব্যাংকের থেকে লভ্যাংশে পিছিয়ে থেকেও শেয়ার দরে কয়েকগুণ বেশিতে এখন বীমা খাত। এই বৃদ্ধিতে কারসাজির বিষয়টি প্রমাণসহ গণমাধ্যমে আসলেও কমিশন তাতে কর্ণপাত করেনি।
এখনো বীমা কোম্পানিগুলোর প্রতি মানুষের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ অনাস্থা। এই কোম্পানিগুলোকে অনেকেই প্রতারক হিসেবে মূল্যায়ন করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন নাটকেও বীমা কোম্পানিতে চাকরী করা মার্কেটিং অফিসারদের দূর্দশা ও তাদেরকে যে কি পরিমাণ হাসির পাত্র হতে হয়, তা তুলে ধরা হয়। কিন্তু সেইসব কোম্পানির শেয়ারই অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে।
তবে দৈনিক যুগান্তরে বীমা কোম্পানির শেয়ার নিয়ে আবুল খায়ের হিরুসহ একটি গ্রুপের কারসাজির খতিয়ান তুলে ধরা হলেও দর্শক ভূমিকা পালন করে বিএসইসি।
স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও বীমায় গেম্বলারদেরকে সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে। তারা অন্যসব খাতের শেয়ার অস্বাভাবিক বাড়ার ক্ষেত্রে কারন জানতে চাইলেও বীমায় অনেকটা নিরব। এ নিয়ে রয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্ষোভ।
এক ব্রোকারেজ হাউজের শীর্ষ কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বীমা কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করলেই ডিএসই থেকে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়। এক্ষেত্রে বিক্রি করে দেওয়া ওই নির্দিষ্ট বীমা কোম্পানির বিনিয়োগের তথ্য চাওয়া হয়। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বীমার শেয়ার বিক্রিতে আতঙ্ক তৈরী করা হয়। এটা কখনোই স্বাভাবিক লক্ষণ না।
দেখা গেছে, ২০২০ সালের ব্যবসায় ১৫টি ব্যাংক ও ১০টি বীমা কোম্পানির পর্ষদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ব্যাংকের গড় লভ্যাংশ ঘোষণার পরিমাণ ১৬.৪০ শতাংশ। আর বীমা কোম্পানির গড় ১৪.৫০ শতাংশ।
লভ্যাংশে পিছিয়ে থাকলেও শেয়ার দরে অনেক এগিয়ে গেম্বলিংয়ের সীমা লঙ্ঘনকারী বীমা খাত। বুধবার (২১ এপ্রিল) লেনদেন শেষে লভ্যাংশ ঘোষণা করা ব্যাংকগুলোর গড় শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ২১.৮৫ টাকা। আর বীমা কোম্পানিগুলো রয়েছে ৫৯.৯৩ টাকায়।
ব্যাংকের লভ্যাংশ ও শেয়ার দর :
কোম্পানির নাম | লভ্যাংশের হার | শেয়ার দর (টাকা) |
ইস্টার্ন ব্যাংক | ৩৫% (১৭.৫% নগদ ও ১৭.৫% বোনাস) | ৩৯.৫০ |
ডাচ-বাংলা ব্যাংক | ৩০% (১৫% নগদ ও ১৫% বোনাস) | ৫৭.৮০ |
উত্তরা ব্যাংক | ২৫% (১২.৫% নগদ ও ১২.৫% বোনাস) | ২৫.২০ |
সিটি ব্যাংক | ২২.৫০% (১৭.৫০% নগদ ও ৫% বোনাস) | ২৩.৩০ |
প্রিমিয়ার ব্যাংক | ২০% (১২.৫% নগদ ও ৭.৫০% বোনাস) | ১০.৮০ |
যমুনা ব্যাংক | ১৭.৫০% নগদ | ১৬.৯০ |
প্রাইম ব্যাংক | ১৫% নগদ | ১৭.২০ |
মার্কেন্টাইল ব্যাংক | ১৫% (১০% নগদ ও ৫% বোনাস) | ১০.৮০ |
ব্র্যাক ব্যাংক | ১৫% (১০% নগদ ও ৫% বোনাস) | ৪২ |
পূবালি ব্যাংক | ১২.৫০% নগদ | ২৪ |
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক | ১২% (৭% নগদ ও ৫% বোনাস) | ১৯.৮০ |
ওয়ান ব্যাংক | ১১.৫০% (৬% নগদ ও ৫.৫% বোনাস) | ১০.৩০ |
ব্যাংক এশিয়া | ১০% নগদ | ১৬.২০ |
আইএফআইসি ব্যাংক | ৫% বোনাস | ১০.৩০ |
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক | ০০ | ৩.৬০ |
গড় | ১৬.৪০% | ২১.৮৫ |
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা বলেন, বীমা খাতের কোম্পানির শেয়ারের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায় কারসাজি ছাড়া এভাবে মূল্যবৃদ্ধির আর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। বিমা কোম্পানিগুলো সাধারণত খুবই স্বল্প মূলধনি কোম্পানি। তাই কারসাজির জন্য কারসাজিকারকেরা এসব কোম্পানি বেছে নেন।
বীমা কোম্পানির লভ্যাংশ ও শেয়ার দর :
কোম্পানির নাম | লভ্যাংশের পরিমাণ | শেয়ার দর |
গ্রীণডেল্টা ইন্স্যুরেন্স | ৩২% (২৪.৫% নগদ ও ৭.৫% বোনাস) | ৫৭.৮০ |
রিল্যায়েন্স ইন্স্যুরেন্স | ২৫% নগদ | ৫৬.৬০ |
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স | ২০% বোনাস | ১১১.১০ |
প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স | ১৭% বোনাস | ১২৫.৫০ |
ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স | ১১% নগদ | ৪৭.৪০ |
নিটল ইন্স্যুরেন্স | ১০% নগদ | ৫৫.৪০ |
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স | ১০% (৬% নগদ ও ৪% বোনাস) | ৪৪.৯০ |
অগ্রনি ইন্স্যুরেন্স | ১০% (৫% নগদ ও ৫% বোনাস) | ৫০.২০ |
ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স | ১০% (৭% নগদ ও ৩% বোনাস) | ৩২.৬০ |
পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্সু. | ০০ | ১৭.৮০ |
গড় | ১৪.৫০% | ৫৯.৯৩ |
বিজনেস আওয়ার/২২ এপ্রিল, ২০২১/আরএ
One thought on “লভ্যাংশে পিছিয়ে থাকলেও ব্যাংকের থেকে কয়েকগুণ বেশিতে বীমার শেয়ার দর”