বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : কয়েক মাস ধরে শেয়ারবাজার ইতিবাচক ধারায়। এরমধ্যে দু-চারবার কিছু সমস্যা বাধাঁ হয়ে দাড়ানোর চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। সব দূরে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে অধ্যাপক শিবলী-রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন শেয়ারবাজার। তবে সম্প্রতি আরেকটি বাধাঁ হয়ে দাড়িঁয়েছে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের তথ্যকে ঘিরে। দু-একটি গণমাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করা হলেও তার সত্যতা পায়নি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। যে কারনে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই বলে প্রতিষ্ঠান দুটি থেকে জানানো হচ্ছে।
গত ২৫ জুলাই দু-একটি গণমাধ্যমে করোনা মহামারির কারনে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্য থেকে কেউ কেউ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে বলে খবর প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর হবে বলেও জানানো হয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক তৈরী করেছে।
যে আতঙ্কে গত দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে পতন হয়েছে। এরমধ্যে আজ দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৪.৩৫ পয়েন্ট কমেছে। যার পরিমাণ আগের দিন ছিল ২০.১৯ পয়েন্টে। তবে লেনদেনে কোন প্রভাব পড়েনি। বরং বেড়েছে। গত ২৫ জুলাইয়ের ১ হাজার ৩৫৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার লেনদেন বেড়ে আজ হয়েছে ১ হাজার ৪৬২ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, প্রণোদনার ঋণের টাকা শেয়ারবাজারে আসার কোন খবর আমাদের কাছে নেই। তাই শেয়ারবাজার একটি সংবেদনশীল জায়গা হিসেবে সবাইকে সঠিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মন্তব্য করার অনুরোধ করেন তিনি। এ বিষয়ে আমাদের আইনেও পরিস্কার করে বলা আছে।
তিনি বলেন, সবারই নিজস্বভাবে মনিটরিং করা উচিত এবং সেখানে মনোযোগ দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে প্রণোদনার ঋণের টাকা শেয়ারবাজারে যাচ্ছে, এ জাতীয় অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা উচিত। আর এ জাতীয় মন্তব্য নিয়ে বিনিয়োগকারীদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানান তিনি। এরসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের কোন সর্ম্পক্য নেই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বিজনেস আওয়ারকে বলেন, করোনায় ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ শেয়ারবাজারে যাওয়ার খবর দু-একটি গণমাধ্যমে দেখলাম। কিন্তু এর কোন সত্যতা খুজেঁ পেলাম না। আমি আজও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু এমন কোন খবর তারা দিতে পারল না। বরং এ জাতীয় কোন খবর বাংলাদেশ ব্যাংকে নেই বলে নিশ্চিত করেছে।
এমন তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে না থাকলেও গণমাধ্যমে তা প্রকাশ পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী করেছে বলে জানান বিএমবিএর এই সভাপতি। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে কিছুই হয়নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে কোন কঠোরও হওয়া দরকার পড়বে না। কিন্তু একটি মিথ্যা খবরের ভিত্তিতে গত দুইদিনে শেয়ারবাজারের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তাই বিনিয়োগকারীদেরকে মিথ্যা খবরে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আহ্বান করেন তিনি।
প্রণোদনার ঋণের টাকা শেয়ারবাজারে যাওয়ার কোন খবর নেই জানিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও এমন খবর পাইনি। এমনকি ওই ঋণ শেয়ারবাজারে গেলেও সেটার প্রভাব পড়ার মতো না।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের ৮০ শতাংশ ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারী। তারাই মূলত পরিচালনা করে শেয়ারবাজার। আর প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কোম্পানিকে। সেখান থেকে যদি কিছু ঋণ এসেও থাকে, তার প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়বে না। তাই কেউ যদি দাবি করে থাকে প্রণোদনার ঋণের টাকা শেয়ারবাজারের উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে, সেটা ঠিক না।
বিজনেস আওয়ার/২৭ জুলাই, ২০২১/আরএ
3 thoughts on “প্রণোদনার ঋণ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে বিভ্রান্তি”