ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভালো লভ্যাংশের পরেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডে আগ্রহ কম

শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহের শীর্ষে মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এই খাতে ইউনিট দরের তুলনায় লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ড ইল্ড) অন্যসব খাতের থেকে বেশি হলেও তাতে খুব একটা আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের। এর পেছনে কারন হিসেবে অনাস্থা যেমন কাজ করছে, একইভাবে রয়েছে বিনিয়োগকারীদের দ্রুত ক্যাপিটাল গেইনের মনোভাব। তবে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন।

সম্প্রতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ব্যবসায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৪টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই ফান্ডগুলো থেকে গড়ে ইউনিট দরের তুলনায় ৯.১৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ড ইল্ড) ঘোষনা করা হয়েছে। একইসময়ে অন্য খাতের কয়েকটি কোম্পানির ঘোষণা করা কোম্পানির ডিভিডেন্ড ইল্ডের পরিমাণ ১.৬৮ শতাংশ।

ফান্ডগুলোর মধ্যে গ্রীন ডেল্টা ফান্ড থেকে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। যে ফান্ডটির বুধবার (১১ আগস্ট) লেনদেন শেষে ইউনিট দর রয়েছে ৯.৪০ শতাংশ। এ বিবেচনায় লভ্যাংশের প্রকৃত হার ১২.৭৭ শতাংশ। কিন্তু তারপরেও বিনিয়োগকারীদের খুব একটা আগ্রহ নেই।

কিন্তু ২.০৯ শতাংশ ডিভিডেন্ড ইল্ডের বার্জার পেইন্টসে আগ্রহের ঘাটতি নেই। এই কোম্পানির পর্ষদ অভিহিত মূল্য ১০ টাকার উপরে ৩৭৫ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কিন্তু কোম্পানিটি থেকে এই লভ্যাংশ পেতে বিনিয়োগ করতে হবে ১৭৯০ টাকা। অর্থাৎ ১৭৯০ টাকা বিনিয়োগ করে ৩৭.৫০ টাকা লভ্যাংশ পাওয়া যাবে। এতে প্রকৃতপক্ষে লভ্যাংশ পাওয়া যাবে ২.০৯% হারে।

ফান্ডগুলো ডিভিডেন্ড ইল্ডে এতো এগিয়ে থাকলেও তাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম। গত কয়েক মাসে অন্যসব খাতের শেয়ার দর যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় ফান্ডের দর খুব কমই বেড়েছে।

এর কারন হিসেবে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বিজনেস আওয়ারকে বলেন, লভ্যাংশ আয়ের উপরে কর দিতে হলেও ক্যাপিটাল গেইনের ক্ষেত্রে দিতে হয় না। এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরকে লভ্যাংশ আয়ের উপরে দ্বৈত কর দিতে হয়। যে কারনে বিনিয়োগকারীরা মিউচ্যুয়াল ফান্ডে আগ্রহী কম। কারন এই খাতে ক্যাপিটাল গেইন নেই বললেই চলে। তাই শুধুমাত্র লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য কেউ ফান্ডে যেতে চায় না।

ফান্ডে ক্যাপিটাল গেইন না থাকার কারন হিসেবে তিনি বলেন, এই খাতের সব তথ্যই উন্মুক্ত থাকে। যা চাইলেই সবাই জানতে পারে। এছাড়া এই খাতে অন্যসব খাতের ন্যায় যেকোন সময় যেকোন ঘটনা ঘটা এবং পিএসআই আসার সুযোগ নেই। এটাও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফান্ডে অনাগ্রহের কারন। কিন্তু অন্যসব খাতে পিএসআই নিয়ে অনেক কিছুই ঘটে থাকে। কিন্তু ফান্ডের ব্যবসায় এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই বলা যায়।

এ বিষয়ে ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) শহীদুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ারবাজারের ইতিবাচকতার সাথে সাথে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মুনাফায় বড় উত্থান হয়েছে। যাতে করে ফান্ডগুলো ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে। তবে সে তুলনায় ইউনিট দর বাড়েনি। কিন্তু অন্যসব খাতের শেয়ারে বড় উত্থান দেখা গেছে।

এর পেছনে অবশ্য ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা অন্যতম কারন বলে মনে করেন শহীদুল ইসলাম। তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরে এই খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা রয়েছে। তবে বর্তমান কমিশন এই খাতের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

এছাড়া বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশের চেয়ে দ্রুত ক্যাপিটাল গেইন পাওয়ার মনোভাবও ফান্ডের দর কম হওয়ার আরেকটি কারন বলে জানান তিনি। যে কারনে সবচেয়ে বেশি ডিভিডেন্ড ইল্ড সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীরা ফান্ডে ঝুঁকছেন না। তারা কয়েকদিনের ব্যবধানে বড় ক্যাপিটাল গেইন বা লসের ঝুকিঁ নিতে চায়। যেহেতু ফান্ডের ইউনিটে কয়েকদিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয় না এবং কমেও না, সেকারনে অনেকের আগ্রহ কম।

এক অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের সভাপতি ড. হাসান ইমাম বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডের ইমেজ সংকট আছে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। এই সেক্টর নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রায় নীতি নির্ধারক ও ক্যাপিটাল মার্কেট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মন্তব্য দেখি। বেশিরভাগ মন্তব্যই নেতিবাচক। কোনোটার পেছনে যুক্তি আছে, কোনটা ভিত্তিহীন। এই নেতিবাচক মন্তব্য মিউচুয়াল ফান্ড সেক্টর সর্ম্পকে বিরূপ ধারণা তৈরি করেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। যা ক্যাপিটাল মার্কেটের জন্য মঙ্গলজনক নয়।  

তবে বর্তমান কমিশন মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংকট কাটিয়ে তুলতে কাজ করছে। এ বিষয়ে গত ৬ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আগামীতে ভালোভাবে চলার জন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ডে সুশাসন আনতে কাজ শুরু করেছে কমিশন। মিউচ্যুয়াল ফান্ড হবে এফডিআরের বিকল্প। মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে এফডিআরের বিকল্প করা গেলে বিনিয়োগ নিরাপদ ও লাভবান হবে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা যখন দেখবে এফডিআরে রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে ৫-৬ শতাংশ এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ১০ শতাংশ রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে, তখন তারা এফডিআর ছেড়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দিকে ঝুঁকবে। সেই সময় বাজারে লেনদেন অনেক বেড়ে যাবে।

নিম্নে সম্প্রতি লভ্যাংশ ঘোষণা করা ফান্ডগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

ফান্ডের নামলভ্যাংশ (২০-২১)১১ আগস্টের ইউনিট দর (টাকা)  ডিভিডেন্ড ইল্ড
গ্রীণ ডেল্টা ফান্ড১২% নগদ৯.৪০১২.৭৭%
ডিবিএইচ ফার্স্ট ফান্ড১২% নগদ৯.৬০১২.৫০%
এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড১৫% নগদ১২.৫০১২%
এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ফান্ড১৫% নগদ১২.৬০১১.৯০%
এনএলআই ফার্স্ট ফান্ড১৭.৫০% নগদ১৭১০.২৯%
প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি ফান্ড৭.৫০% নগদ৭.৮০৯.৬২%
আইসিবি ৩য় এনআরবি ফান্ড৭% নগদ৭.৪০৯.৪৬%
এসইএমএল আইবিবিএল শরীয়াহ ফান্ড১০% নগদ১২৮.৩৩%
আইসিবি সোনালি ব্যাংক ফার্স্ট ফান্ড৭% নগদ৯.১০৭.৬৯%
আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রনি ফান্ড৭% নগদ৯.৩০৭.৫৩%
আইসিবি এমপ্লয়ীজ ফান্ড ১: স্কিম ১৬% নগদ৭.৫%
আইসিবি এমএমসিএল ২য় ফান্ড৮% নগদ১১.১০৭.২১%
ফনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট ফান্ড৬% নগদ১০.৪০৫.৭৭%
আইএফআইএল ইসলামিক ফান্ড ১৪% নগদ৭.২০৫.৫৬%
গড়..৯.১৫%

সম্প্রতি অন্য খাতের কয়েকটি কোম্পানিও লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। অভিহিত মূল্যের তুলনায় সেগুলোর লভ্যাংশের হার ফান্ডের থেকে অনেক বেশি। কিন্তু সেই লভ্যাংশ পেতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করতে (বাজার দর) হবে, সে তুলনায় আবার লভ্যাংশটা অনেক কম।

দেখা গেছে, জুন ক্লোজিং ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য অভিহিত মূল্য ১০ টাকার উপরে ২৫০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কিন্তু কোম্পানিটি থেকে এই লভ্যাংশ পেতে বিনিয়োগ করতে হবে ১৪১৭ টাকা। অর্থাৎ ১৪১৭ টাকা বিনিয়োগ করে ২৫ টাকা লভ্যাংশ পাওয়া যাবে। এতে প্রকৃতপক্ষে লভ্যাংশ পাওয়া যাবে ১.৭৬% হারে।

সম্প্রতি ঘোষণা করা অন্য খাতের কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড ইল্ডের বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

কোম্পানির নামলভ্যাংশশেয়ার দর (টাকা)ডিভিডেন্ড ইল্ড
বার্জার পেইন্টস৩৭৫% নগদ১৭৯০.৬০২.০৯%
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ২৫০% নগদ১৪১৭১.৭৬%
সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স১০% নগদ৬৬.৩০১.৫১%
ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স৩২% নগদ২৩৫.৩০১.৩৬%
গড়..১.৬৮%

বিজনেস আওয়ার/১২ আগস্ট, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ভালো লভ্যাংশের পরেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডে আগ্রহ কম

পোস্ট হয়েছে : ১২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অগাস্ট ২০২১

শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহের শীর্ষে মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এই খাতে ইউনিট দরের তুলনায় লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ড ইল্ড) অন্যসব খাতের থেকে বেশি হলেও তাতে খুব একটা আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের। এর পেছনে কারন হিসেবে অনাস্থা যেমন কাজ করছে, একইভাবে রয়েছে বিনিয়োগকারীদের দ্রুত ক্যাপিটাল গেইনের মনোভাব। তবে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন।

সম্প্রতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ব্যবসায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৪টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই ফান্ডগুলো থেকে গড়ে ইউনিট দরের তুলনায় ৯.১৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ড ইল্ড) ঘোষনা করা হয়েছে। একইসময়ে অন্য খাতের কয়েকটি কোম্পানির ঘোষণা করা কোম্পানির ডিভিডেন্ড ইল্ডের পরিমাণ ১.৬৮ শতাংশ।

ফান্ডগুলোর মধ্যে গ্রীন ডেল্টা ফান্ড থেকে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। যে ফান্ডটির বুধবার (১১ আগস্ট) লেনদেন শেষে ইউনিট দর রয়েছে ৯.৪০ শতাংশ। এ বিবেচনায় লভ্যাংশের প্রকৃত হার ১২.৭৭ শতাংশ। কিন্তু তারপরেও বিনিয়োগকারীদের খুব একটা আগ্রহ নেই।

কিন্তু ২.০৯ শতাংশ ডিভিডেন্ড ইল্ডের বার্জার পেইন্টসে আগ্রহের ঘাটতি নেই। এই কোম্পানির পর্ষদ অভিহিত মূল্য ১০ টাকার উপরে ৩৭৫ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কিন্তু কোম্পানিটি থেকে এই লভ্যাংশ পেতে বিনিয়োগ করতে হবে ১৭৯০ টাকা। অর্থাৎ ১৭৯০ টাকা বিনিয়োগ করে ৩৭.৫০ টাকা লভ্যাংশ পাওয়া যাবে। এতে প্রকৃতপক্ষে লভ্যাংশ পাওয়া যাবে ২.০৯% হারে।

ফান্ডগুলো ডিভিডেন্ড ইল্ডে এতো এগিয়ে থাকলেও তাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম। গত কয়েক মাসে অন্যসব খাতের শেয়ার দর যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় ফান্ডের দর খুব কমই বেড়েছে।

এর কারন হিসেবে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বিজনেস আওয়ারকে বলেন, লভ্যাংশ আয়ের উপরে কর দিতে হলেও ক্যাপিটাল গেইনের ক্ষেত্রে দিতে হয় না। এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরকে লভ্যাংশ আয়ের উপরে দ্বৈত কর দিতে হয়। যে কারনে বিনিয়োগকারীরা মিউচ্যুয়াল ফান্ডে আগ্রহী কম। কারন এই খাতে ক্যাপিটাল গেইন নেই বললেই চলে। তাই শুধুমাত্র লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য কেউ ফান্ডে যেতে চায় না।

ফান্ডে ক্যাপিটাল গেইন না থাকার কারন হিসেবে তিনি বলেন, এই খাতের সব তথ্যই উন্মুক্ত থাকে। যা চাইলেই সবাই জানতে পারে। এছাড়া এই খাতে অন্যসব খাতের ন্যায় যেকোন সময় যেকোন ঘটনা ঘটা এবং পিএসআই আসার সুযোগ নেই। এটাও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফান্ডে অনাগ্রহের কারন। কিন্তু অন্যসব খাতে পিএসআই নিয়ে অনেক কিছুই ঘটে থাকে। কিন্তু ফান্ডের ব্যবসায় এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই বলা যায়।

এ বিষয়ে ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) শহীদুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ারবাজারের ইতিবাচকতার সাথে সাথে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মুনাফায় বড় উত্থান হয়েছে। যাতে করে ফান্ডগুলো ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে। তবে সে তুলনায় ইউনিট দর বাড়েনি। কিন্তু অন্যসব খাতের শেয়ারে বড় উত্থান দেখা গেছে।

এর পেছনে অবশ্য ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা অন্যতম কারন বলে মনে করেন শহীদুল ইসলাম। তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরে এই খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা রয়েছে। তবে বর্তমান কমিশন এই খাতের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

এছাড়া বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশের চেয়ে দ্রুত ক্যাপিটাল গেইন পাওয়ার মনোভাবও ফান্ডের দর কম হওয়ার আরেকটি কারন বলে জানান তিনি। যে কারনে সবচেয়ে বেশি ডিভিডেন্ড ইল্ড সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীরা ফান্ডে ঝুঁকছেন না। তারা কয়েকদিনের ব্যবধানে বড় ক্যাপিটাল গেইন বা লসের ঝুকিঁ নিতে চায়। যেহেতু ফান্ডের ইউনিটে কয়েকদিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয় না এবং কমেও না, সেকারনে অনেকের আগ্রহ কম।

এক অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের সভাপতি ড. হাসান ইমাম বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডের ইমেজ সংকট আছে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। এই সেক্টর নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রায় নীতি নির্ধারক ও ক্যাপিটাল মার্কেট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মন্তব্য দেখি। বেশিরভাগ মন্তব্যই নেতিবাচক। কোনোটার পেছনে যুক্তি আছে, কোনটা ভিত্তিহীন। এই নেতিবাচক মন্তব্য মিউচুয়াল ফান্ড সেক্টর সর্ম্পকে বিরূপ ধারণা তৈরি করেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। যা ক্যাপিটাল মার্কেটের জন্য মঙ্গলজনক নয়।  

তবে বর্তমান কমিশন মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সংকট কাটিয়ে তুলতে কাজ করছে। এ বিষয়ে গত ৬ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আগামীতে ভালোভাবে চলার জন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ডে সুশাসন আনতে কাজ শুরু করেছে কমিশন। মিউচ্যুয়াল ফান্ড হবে এফডিআরের বিকল্প। মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে এফডিআরের বিকল্প করা গেলে বিনিয়োগ নিরাপদ ও লাভবান হবে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা যখন দেখবে এফডিআরে রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে ৫-৬ শতাংশ এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ১০ শতাংশ রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে, তখন তারা এফডিআর ছেড়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দিকে ঝুঁকবে। সেই সময় বাজারে লেনদেন অনেক বেড়ে যাবে।

নিম্নে সম্প্রতি লভ্যাংশ ঘোষণা করা ফান্ডগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

ফান্ডের নামলভ্যাংশ (২০-২১)১১ আগস্টের ইউনিট দর (টাকা)  ডিভিডেন্ড ইল্ড
গ্রীণ ডেল্টা ফান্ড১২% নগদ৯.৪০১২.৭৭%
ডিবিএইচ ফার্স্ট ফান্ড১২% নগদ৯.৬০১২.৫০%
এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড১৫% নগদ১২.৫০১২%
এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ফান্ড১৫% নগদ১২.৬০১১.৯০%
এনএলআই ফার্স্ট ফান্ড১৭.৫০% নগদ১৭১০.২৯%
প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি ফান্ড৭.৫০% নগদ৭.৮০৯.৬২%
আইসিবি ৩য় এনআরবি ফান্ড৭% নগদ৭.৪০৯.৪৬%
এসইএমএল আইবিবিএল শরীয়াহ ফান্ড১০% নগদ১২৮.৩৩%
আইসিবি সোনালি ব্যাংক ফার্স্ট ফান্ড৭% নগদ৯.১০৭.৬৯%
আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রনি ফান্ড৭% নগদ৯.৩০৭.৫৩%
আইসিবি এমপ্লয়ীজ ফান্ড ১: স্কিম ১৬% নগদ৭.৫%
আইসিবি এমএমসিএল ২য় ফান্ড৮% নগদ১১.১০৭.২১%
ফনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট ফান্ড৬% নগদ১০.৪০৫.৭৭%
আইএফআইএল ইসলামিক ফান্ড ১৪% নগদ৭.২০৫.৫৬%
গড়..৯.১৫%

সম্প্রতি অন্য খাতের কয়েকটি কোম্পানিও লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। অভিহিত মূল্যের তুলনায় সেগুলোর লভ্যাংশের হার ফান্ডের থেকে অনেক বেশি। কিন্তু সেই লভ্যাংশ পেতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করতে (বাজার দর) হবে, সে তুলনায় আবার লভ্যাংশটা অনেক কম।

দেখা গেছে, জুন ক্লোজিং ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের জন্য অভিহিত মূল্য ১০ টাকার উপরে ২৫০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কিন্তু কোম্পানিটি থেকে এই লভ্যাংশ পেতে বিনিয়োগ করতে হবে ১৪১৭ টাকা। অর্থাৎ ১৪১৭ টাকা বিনিয়োগ করে ২৫ টাকা লভ্যাংশ পাওয়া যাবে। এতে প্রকৃতপক্ষে লভ্যাংশ পাওয়া যাবে ১.৭৬% হারে।

সম্প্রতি ঘোষণা করা অন্য খাতের কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড ইল্ডের বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

কোম্পানির নামলভ্যাংশশেয়ার দর (টাকা)ডিভিডেন্ড ইল্ড
বার্জার পেইন্টস৩৭৫% নগদ১৭৯০.৬০২.০৯%
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ২৫০% নগদ১৪১৭১.৭৬%
সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স১০% নগদ৬৬.৩০১.৫১%
ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স৩২% নগদ২৩৫.৩০১.৩৬%
গড়..১.৬৮%

বিজনেস আওয়ার/১২ আগস্ট, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: